বছরজুড়ে নষ্ট মাদারীপুর শহরের আড়াইশ সিসিটিভি ক্যামেরা
মাদারীপুর শহরে চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ কমানোর জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হয়েছিল সিসিটিভি ক্যামেরা। কিন্তু প্রায় এক বছর ধরে বিভিন্ন স্থানে বসানো আড়াইশ’র বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। কোথাও বক্স আছে ক্যামেরা নেই, আবার কোথাও ক্যামেরা আছে বক্স নেই, কিংবা কোথাও বক্স-ক্যামেরা কিছুই নেই, তার ঝুলে আছে। শহরবাসীর দাবি, দ্রুত এই ক্যামেরাগুলো মেরামত করা হোক।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের মে মাসে সাবেক পুলিশ সুপার মাসুদ আলমের উদ্যোগে ও মাদারীপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহযোগিতায় এই সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো বসানো হয়। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৬০টি অত্যাধুনিক সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়। এই ক্যামেরাগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হতো মাদারীপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে। পরবর্তীতে এগুলো প্রায় এক বছর ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে থাকলেও এখন পর্যন্ত মেরামত করা হয়নি। ফলে শহরে দিনে-দুপুরে চুরি, ছিনতাই, ইভটিজিংসহ নানা অপরাধ বেড়েই চলেছে।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, মাদারীপুর নতুন শহর, কালিবাড়ি, সুমন হোটেল মোড়, কলেজ রোড, বটতলা, বাদামতলা, পুরাণবাজার, শকুনি লেকপাড়, ডিসিব্রিজ, ইটেরপুল, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, নতুন বাসস্ট্যান্ড, রেন্ডিতলা, মিলন সিনেমা হল এলাকা, কাজীর মোড়, থানার সামনে, কলেজের সামনে, বিভিন্ন বিদ্যালয়ের সামনে, জজকোর্ট এলাকাসহ মাদারীপুর পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় বসানো এই ক্যামেরাগুলো প্রায় এক বছর ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। অধিকাংশ ক্যামেরায় বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ নেই। তাছাড়া অনেক স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা ও ক্যাবল চুরি হয়ে গেছে। আবার কোথাও এগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে। ফলে বেশিরভাগ স্থানেই কোথায় ক্যামেরা, কোথায় বক্স আবার কোথাও শুধু তার পড়ে আছে। এতে করে সিসিটিভি ক্যামেরা কোনো কাজেই আসছে না শহরবাসীর জন্য। তাই নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সচেতন মহল দ্রুত ক্যামেরাগুলো ঠিক করার দাবি জানিয়েছে।
মাদারীপুর শহরের ২নং শকুনি এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, শহরের ডিসিব্রিজ এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো প্রায় এক বছর ধরে নষ্ট হয় পড়ে আছে। শহরবাসীর জন্য এই এলাকাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে সন্ধ্যা হলেই চায়ের দোকানগুলোতে এক শ্রেণির মানুষ আড্ডা দেয়। তাছাড়া প্রায় সময় এখানে মারামারির ঘটনাও ঘটে। তাই এই স্থানের ক্যামেরাগুলো ঠিক থাকলে অনেক অপরাধ কমে যাবে।

মাদারীপুর শহরের শকুনি লেকপাড়ের খেলনা বিক্রেতা পারভীন বেগম বলেন, এই শকুনি লেকপাড়ে বিকেল হলেই প্রতিদিন কয়েকশ মানুষের আনাগোনা হয়। নানা বয়সের মানুষ এখানে ঘুরতে আসেন। এখানে অনেক সময় নারীরা নানাভাবে ইভটিজিংয়ের শিকারও হন। তাই এখানে সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো দ্রুত মেরামত করা হলে সাধারণ মানুষ অনেকটাই নিরাপদে ঘোরাফেরা করতে পারবে।
মাদারীপুর শহরের মহসিন রোড এলাকার বাসিন্দা জরিনা খানম বলেন, প্রতিদিন ভোরে হাঁটতে বের হই। অনেক সময় ছিনতাইযের ঘটনাও ঘটে। তাই একা একা বের হতে ভয় লাগে। কিন্তু ডায়বেটিকের কারণে হাঁটতে হয়। তাই শহরের সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো ঠিক করা হলে আমরা নিরাপদে হাঁটতে পারবো।

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন, এরই মধ্যে এই ক্যামেরাগুলো সচল করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি খুব শিগগিরই ক্যামেরাগুলো ঠিক করা সম্ভব হবে।
এফএ/এমএস