কুড়িগ্রামে পানিবন্দী ৫০ হাজার মানুষ : খাদ্য ও পানির সংকট
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় চরাঞ্চলের গ্রামগুলো এখন পানিতে ডুবে গেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। শনিবার বিকেল পর্যন্ত চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ৩১ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি বৃদ্ধির ফলে চরাঞ্চলে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। হাতে কাজ না থাকায় বিপাকে পড়েছে কর্মজীবী মানুষগুলো। অপরদিকে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি কমে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা ত্রাণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঈদের জন্য ৪ লাখ ২২ হাজার ৪৮৭ জনকে ২০ কেজি করে আট হাজার ৪৪৯ দশমিক ৭৪০ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। বন্যার্তদের জন্য এখনো কোনো বরাদ্দ আসেনি।
জানা যায়, চলতি সপ্তাহ থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধির ফলে নদী তীরবর্তী রৌমারী, রাজিবপুর, চিলমারী, উলিপুর ও কুড়িগ্রাম সদরের প্রায় ১৫টি ইউনিয়নের ১২ হাজার পরিবারের ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
তলিয়ে গেছে দুই শতাধিক চর ও দ্বীপচর। পানি বৃদ্ধি ও ভাঙনে গৃহহীন হয়েছে আড়াই শতাধিক পরিবার। ঝুঁকিতে রয়েছে ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
চিলমারী উপজেলার পাত্রখাতা ইউনিয়নের ঝরণা বেগম বলেন, ‘ভাইগো, ঘরের ভিতরা হাঁটু পানি। চেয়ারোত চুলা বসায়া আন্দোন-বাড়োন করবের নাগছি। কাইয়ো দেকপের আইসে নাই।’
সদর উপজেলার যাত্রাপুর হাটসংলগ্ন চর যাত্রাপুর গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, ‘চারদিকে পানি। বউ-পোলাপানরা ঘর থাকি বাহির হইতে পারে না। কাজ-কামও নাই। খুব বিপদে আছি।’ 
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বলেন, আমার ইউনিয়নের ৯০ ভাগ এলাকা ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারাবেষ্টিত। রয়েছে ৩০টির মতো চর। এসব চরের মানুষ প্রতি বছরের মতো বন্যার সাথে লড়াই করে টিকে আছে।
তিনি বলেন, দিনমজুর পরিবারগুলোতে খাদ্য সংকট চলছে। কিন্তু প্রশাসন থেকে এখন পর্যন্ত কোনো খাদ্যসহায়তা পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, মাঝখানে ঈদ ও অফিস বন্ধ থাকার পরও আমরা পর্যাপ্ত শুকনো খাবার সংগ্রহ করেছি। গড়ে তোলা হয়েছে স্বেচ্ছাসেবক দল। প্রস্তুত রাখা হয়েছে নৌকাও। আশা করি কোনো সমস্যা হবে না। চেয়ারম্যানরা তালিকা দিলেই আমরা কর্মযজ্ঞে নেমে পড়বো।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। নুনখাওয়া পয়েন্টে দুধকুমারের পানি অপরিবর্তিত রয়েছে।
নাজমুল হোসেন/এআরএ/এমএস