কিশোরগঞ্জে পশুর হাটে উপচেপড়া ভিড়
হাতে একদম সময় নেই। তাই ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন হাটে। গত এক সপ্তাহ কিশোরগঞ্জের হাটগুলোতে পশু উঠলেও ক্রেতাদের সময় কেটেছে পছন্দ আর দরদাম করে।
জানা গেছে, এবার কিশোরগঞ্জের ১৩ উপজেলায় প্রায় সাড়ে তিন’শ কোটি টাকার কোরবানির পশু বিক্রি হবে। পর্যাপ্ত পশু থাকায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাবে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।
জেলার বিভিন্ন পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, এসব হাটে ক্রেতা-বিক্রেতার উপচেপড়া ভিড়। পছন্দের গরুটি কেনার জন্য ক্রেতারা দামদর করছেন। গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম বেশি।
তবে বিক্রেতারা বলছেন, প্রাকৃতিক উপায়ে গরু মোটাতাজা করতে অনেক খরচ পড়ে। তাই দাম একটু বেশি না হলে তাদের পুষাবে না। দাম বেশি থাকায় বিক্রেতারা খুশি হলেও ক্রেতারা ক্ষুব্ধ।
জেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট শোলাকিয়া গরুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, বিশাল এ হাটে লোকে লোকারণ্য। প্রচুর পরিমাণে গরু এসেছে এ হাটে। বেচা-কেনাও হচ্ছে ভালো। স্থানীয় ক্রেতা ছাড়াও বাইরে থেকে ব্যবসায়ীরা ট্রাক নিয়ে এসেছেন গরু কিনতে। এসব পশু তারা ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য হাটে নিয়ে যাবেন।
চংশোলাকিয়া এলাকার বাচ্চু মিয়া ৪টি গরু নিয়ে হাটে এসেছেন। তিনি জানান, এক বছর গরুগুলো মোটাতাজা করেছেন। তিনি আশা করছেন, তার অন্তত ৭০ হাজার টাকা লাভ হবে গরু বিক্রি করে।
তাড়াইল উপজেলার আজিজুল হক তার গরুর দাম হাকছেন দেড় লাখ টাকা। এ পর্যন্ত এক লাখ ২০ হাজার টাকা দাম উঠেছে।
যশোদল ইউনিয়নের কর্ষাকড়াইল গ্রামের কৃষক মিজান মিয়া পাকিস্থানি জাতের দু’টি বিশাল ষাঁড় নিয়ে এসেছেন। তার ষাঁড় দু’টিকে ঘিরে মানুষের জটলা। তিনি জানান, এ পর্যন্ত দু’টি গরু সাড়ে তিন লাখ টাকা দাম হয়েছে। ৪ লাখ টাকা হলে তিনি বিক্রি করবেন।
করিমগঞ্জ উপজেলার বড়চর গ্রামের দুলাল মিয়ার কালো রঙের ষাঁড়টির দাম হচ্ছে এক লাখ টাকা। আর বিশ হাজার টাকা বাড়লেই ছেড়ে দিবেন বলে জানান তিনি।
শোলাকিয়া হাটের ইজারাদার মো. তাজুল ইসলাম জানান, এ হাটে ২০ থেকে ২৫ হাজার গরু বিক্রি হবে।
অপরদিকে, এবার প্রশাসনের বাড়তি নজরদারি থাকায় কোরবানির পশু মোটাতাজা করায় ক্ষতিকর স্টেরয়েড ব্যবহার হয়নি। ফলে স্বস্তিতে ক্রেতারা। এজন্য প্রতি উপজেলায় ৩টি করে মেডিকেল টিম কাজ করছে। এছাড়া জাল টাকা রোধে প্রতিটি হাটে যন্ত্র বসানো হয়েছে। এসব হাটকে ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে।
জেলা পশু সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার কিশোরগঞ্জে কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৭০ হাজার। এর মধ্যে ৫২ হাজার গরু ও ২০ হাজার ছাগল। কিন্তু ১৩টি উপজলায় রয়েছে ৭ লাখ ৪৫ হাজার গরু, ২ লাখ ছাগল।
জেলা পশু সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আলী জানান, কোরবানির অনেক আগে থেকেই জেলায় গণসংযোগ ও মানুষকে উদ্বুদ্ধকরণ করা হয়েছে। গরু মোটাতাজা করতে স্টেরয়েট জাতীয় টেবলেট ব্যবহার না করতে এলাকায় ব্যাপক মাইকিং করা হয়েছে। এনজিও কর্মীরা গ্রামে বিভিন্ন সভায় আলোচনা করেছেন। ফলে এর সুফল পাওয়া গেছে।
তিনি জানান, কিশোরগঞ্জে পশুর হাট রয়েছে ৬৫টি। তবে কোরবানির সময় বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য স্থানে অস্থায়ী হাট বসে। এসব হাটে এবার প্রায় সাড়ে তিন’শ কোটি টাকার পশু বিক্রি হবে।
এসএস/এবিএস