ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

জ্বীনের বাদশা : না খেয়ে একটি পরিবার

প্রকাশিত: ০১:১৬ পিএম, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

নওগাঁর সাপাহার উপজেলার আইহাই ইউনিয়নের ঘোলাপুকুর গ্রামের বাসিন্দা দরীদ্র কৃষক নজরুল ইসলাম হুজুর পরিবার কতিথ এক জ্বীনের বাদশার খপ্পড়ে পড়ে প্রায় ৪ লক্ষ টাকা হারিয়ে এখন সর্বস্বান্ত।

প্রতারণার স্বীকার নজরুল ইসলাম হুজুর জানান, এক সপ্তাহ আগে মধ্যরাতে তার এক মাত্র ছেলে মানিকের (১৮) মোবাইল ফোনে বগুড়া মহাস্থান শাহ সুলতান পীরের মাজার থেকে খাদেম সাহেবের ফোন দিয়ে জ্বীনের বাদশা পরিচয়ে এক প্রতারক জানায় যে, সে খুব ভাগ্যবান ছেলে তার নামে কতিথ জ্বীনের মহাবাদশা সোলাইমান পয়গাম্বরের পক্ষ থেকে ১ কেজি ওজনের একটি স্বর্ণের পুতুল ও ১ কেজি সোনা দেওয়া হয়েছে। এটি পেতে হলে তার ৮ হাজার টাকা বিকাশ করার পর মহাস্তান মাজারে যেতে হবে।

ওই প্রতারকের কথা শুনে লোভে পড়ে পরদিন সকালে ৮ হাজার টাকা বিকাশ করার পর বাবা নজরুল ইসলাম হুজুর ও ছেলে মানিক মোটরসাইকেল ভাড়া করে বগুড়া মহাস্তান মাজার এলাকায় যায়। এক পর্যায়ে ফোনে ওই প্রতারক জ্বীনের বাদশা তাদের জানায় যে, পশ্চিম দিকের গাছের নিচে সোনার একটা পুতুল রাখা আছে তা নিয়ে সোজা বাড়ি চলে যাও। এ ঘটনা কোন মানুষের কাছে প্রকাশ করা যাবেনা। প্রকাশ হলে বা পুতুলের ব্যাগ খোলা হলে তার একমাত্র সন্তানের মৃত্যু হবে অথবা অন্ধ হয়ে যাবে। পুতুলটি ৪১ দিন লোহার তৈরি বাক্সে করে ঘরের মধ্যে লুকিয়ে রাখতে হবে। এদিকে ঘটনাটি তারা গ্রামের কোন লোকজনকে না জানিয়ে লোভে পড়েকতিথ জ্বীনের বাদশার কথা মত চলতে থাকেন।

সোনার ওই পুতুলের বর্তমান বাজার মুল্য ২৫ লক্ষ টাকা। ৪১ দিন পার হলে তা বিক্রি করতে পারবে। এ দিকে প্রতারক চক্র এবার নতুন করে ফাঁদ পাতে জ্বীনের বাদশা সোলাইমান পয়গাম্বর বাবা-ছেলের আচরণে খুব সন্তুষ্ট হয়ে তাদের পরিবারের জন্য এবার আরো এক হাঁড়ি সোনা ও ৬ হাঁড়ি রোপ্য মুদ্রা দিয়েছেন যা জীনের রথে করে পাঠানো হবে। এজন্য তাদের ফোনে খরচ বাবদ ৯৫ হাজার টাকা বিকাশ করে। দুই দিন পরে আবার জানানো হয় তাদের বাড়ির অবস্থা। সেখানে খারাপ খারাপ জ্বীনের আছর আছে। তাই এতগুলো সম্পদ তাদের ওখানে নিয়ে যাওয়া সমস্যা হচ্ছে। খারাপ জ্বীনদের খুশি করার জন্য মজলিশের খরচ দিতে হবে। সাত দিনের মধ্যে এগুলো না নিলে তার পরিবার ধ্বংস হয়ে যাবে। প্রতারকের কথা বিশ্বাস করে বাবা-ছেলে তাদের মাঠের তিন বিঘা জমি বন্ধক ও ৫ শতক জমি, গরু ছাগল ধান চাল সব কিছু বিক্রি করে আরো ২ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা তড়িঘরি করে সংগ্রহ করে।

জ্বীনের বাদশার কথামত গত সোমবার সকালে টাকা নিয়ে আবার মোটর সাইকেল ভাড়া করে বগুড়া চার মাথায় পৌঁছে। পরে তাদের বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা ও আক্কেলপুর উপজেলার মধ্যেবর্তী গুডুম্বা আমশহর নামক স্থানে অবস্থিত একটি পীরের মাজারে যেতে বলে। তারা সেখানে গিয়ে পৌঁছালে ওই মাজার এলাকার একটি গাছের নিচে গামছায় বেঁধে টাকা গুলি রেখে আসতে বলে পিছনে ফিরে দেখলে এক মাত্র পুত্র সন্তান মানিক সাথে সাথে মারা যাবে এমন ভয়ংকর নির্দেশ দিলে সরল বিশ্বাসে টাকাগুলো রেখে বাবা-ছেলে রাতে বাড়ি ফিরে আসে। পরদিন সকালে প্রতারক জ্বীনের বাদশা ফোন দিয়ে জানায় তোমাদের সংসারে অভাব দেখা দিয়েছে তাই সোনার পুতুলটির কিছু অংশ তোমরা বিক্রি করতে পার। তার কথা মতো সাপাহার বাজারে স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কাছে গেলে পরীক্ষা নিরিক্ষা করে পুতুলটি পিতলের তৈরি একটি মূর্তি বলে স্বর্ণকার জানালে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ পায়।

বর্তমানে কথিত ওই জ্বীনের বাদশার মোবাইল ফোনটি বন্ধ রয়েছে। লোভের বশবর্তী হয়ে প্রায় ৪ লক্ষ টাকা খোয়া দিয়ে রসুলপুর ঘোলাপুকুর গ্রামের নজরুল ইসলাম হুজুরের অসহায় দরিদ্র পরিবারের লোকজন এখন খেয়ে না খেয়ে মানবেতর দিনাতিপাত করছে।

এমএএম/আরআই