দেলদুয়ারে শিশু নাহিদের মৃত্যু নিয়ে রহস্য
টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে ৭ বছরের শিশু নাহিদের মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। পরিবারের দাবি শিশু নাহিদকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে। অপরদিকে পুলিশ বলছে, নাহিদ নদীতে গোসল করতে গিয়ে ডুবে মারা গেছে।
পুলিশ ও পরিবারের বিপরীতমুখী দাবির কারণে মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে পরিবারের পক্ষ থেকে সন্দেহের তীর যার দিকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ মাদক মামলায় চালান দেয়ায় এটি হত্যা না মৃত্যু এ নিয়ে রহস্য আরো জট বেধেছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলা ফাজিলহাটি ইউনিয়নের মেরুয়াঘোনা গ্রামের মসজিদের ইমাম আ. রাজ্জাকের একমাত্র ছেলে নাহিদ (৭) ১০ জুলাই বিকেলে বাড়ির পাশে সড়কে বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করার সময় নিখোঁজ হয়। এ সময় তার পরনে ছিল লাল রংয়ের হাফ প্যান্ট। অনেক খোঁজাখুজির পর না পেয়ে ১১ জুলাই দেলদুয়ার থানায় একটি জিডি করা হয়।
ওই দিনই দুপুর সাড়ে ১২ টায় এলেংজানী নদীর মাঝালিয়ায় নাহিদের উলঙ্গ মরদেহ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় সন্দেহজনক ব্যক্তিদের আসামি করে এজাহার দিতে গেলে থানা এজাহার না নিয়ে অপমৃত্যুর মামলা নেয়।
নাহিদের বাবা আ. রাজ্জাকের অভিযোগ পুলিশ অভিযুক্তদের থেকে ঘুষ নিয়ে অপমৃত্যুর মামলা নিয়েছে। অবশ্য থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোশাররফ হোসেন ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ছেলের মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে আ. রাজ্জাক থানা পুলিশের পক্ষ থেকে সহযোগিতা না পেয়ে ২৬ সেপ্টেম্বর ওই গ্রামের মোবারক হোসেনে ছেলে মো. সোহেল (২৫), সুভাষ সূত্রধরের ছেলে সুমন সূত্রধর (২৫) ও সফিকুল ইসলামের ছেলে মো. আশিকুল ইসলামকে (২৭) আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল টাঙ্গাইল আদালতে মামলা করেন।
অপহরণের সময় প্রত্যক্ষদর্শী মেরুয়াঘোনা গ্রামের আ. কাফির ছেলে শুভ (১৮) জানান, ঘটনার দিন বিকালে নাহিদকে একটি লাল রংয়ের মোটরসাইকেলে তুলে দেয় সোহেল। ওই সময় সোহেলের বন্ধু সুমন ও আশিকুল পাশেই দাঁড়িয়েছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত এক পুলিশ কনস্টেবল ও দুইজন শিক্ষক জানান, সোহেল একজন চিহ্নিত দুষ্কৃতিকারী। এলাকায় চুরি, ডাকাতি, অপহরণ ও মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সে জড়িত।
এসব বিষয়ে সালিশ-বিচার করতে গিয়ে নাহিদের বাবা আ. রাজ্জাকের সঙ্গে সোহেলের শত্রুতা সৃষ্টি হতে পারে। তাছাড়া ঘটনার পর থেকে সোহেল ও তার দুই বন্ধু সুমন ও আশিকুল পলাতক ছিল। পরে পুলিশ সোহেলকে গ্রেফতার করলেও তাকে মাদক আইনে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে নাহিদের মা জানান, নিখোঁজের পর দিন সোহেলকে সন্দেহ হলে তাকে ডেকে এনে পা ধরে কান্নাকাটি করে নাহিদকে মৃত বা জীবিত এনে দিতে বলি। সে আমার ঘর থেকে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যায় এবং দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ছেলের মরদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরে। এ সময় তার পরনে কোনো কাপড় ছিল না। এরপর আর সোহেলকে এলাকায় দেখা যায়নি।
এ ব্যাপারে দেলদুয়ার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, উপজেলা থানা পুলিশ মাদকের অভিযোগে সোহেলকে আটক করায় তাকে মাদক মামলা দিয়েই কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আরিফ উর রহমান টগর/এসএস/পিআর