ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

সার্টিফিকেট দিতে অধ্যক্ষের ঘুষ দাবি : ছাত্রের আত্মহত্যার চেষ্টা

প্রকাশিত: ০১:০০ পিএম, ১২ নভেম্বর ২০১৬

নরসিংদীর মনোহরদীতে সার্টিফিকেট না দেয়ায় অধ্যক্ষের কার্যালয়ে বিষ পানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন শহিদুল ইসলাম (১৯) নামে এক শিক্ষার্থী। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা  হয়েছে।  

শনিবার দুপুরে মনোহরদী উপজেলা হরি নারায়ণপুর ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসায় এ ঘটনা ঘটে। সার্টিফিকেট দিতে ঘুষ দাবির অভিযোগ উঠেছে মাদরাসার অধ্যক্ষ মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর থেকেই পলাতক মাদরাসা অধ্যক্ষ। পুলিশের পাশাপাশি তাকে আটক করতে মাঠে নেমেছে এলাকাবাসী।  

শিক্ষার্থীর পরিবার ও মাদরাসা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে মনোহরদী উপজেলার হরিনারায়ণপুর ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসা থেকে আলিম পরীক্ষা দেন দৌলতপুর ইউনিয়নের কেরানীনগর গ্রামের মৃত কফিল উদ্দিনের ছেলে শহিদুল ইসলাম। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করেন শহিদুল। উচ্চশিক্ষার আশায় দরিদ্র পরিবারের সন্তান তিনি মনোহরদী ডিগ্রি কলেজে অনার্সে ভর্তির আবেদন করেন এবং সিলেক্ট হন। শিক্ষা বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী অনার্স ভর্তির জন্য উক্ত প্রতিষ্ঠানে আলিম পাশের সার্টিফিকেট জমা দেয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু গত এক মাস যাবৎ  মাদরাসার অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন মৌলভীর কাছে সার্টিফিকেট তোলার জন্য ধরণা দিচ্ছেন শহিদুল। তবে মাদরাসা অধ্যক্ষ সার্টিফিকেট দিতে রাজি হচ্ছেন না। সর্বশেষ তিনি গত সপ্তাহে সার্টিফিকেট দেয়ার জন্য শহিদুলের কাছে তিন হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে শহিদুল অধ্যক্ষের চাহিদা মতো তিন হাজার টাকা যোগার করতে পারেন নি। অবশেষ কৃষি কাজ করে পাঁচশত টাকা তুলে দেন অধ্যক্ষের কাছে। এতে তিনি সার্টিফিকেট দিতে রাজি হননি। এদিকে, শনিবার  মনোহরদী ডিগ্রি কলেজে অনার্স ভর্তি পরীক্ষার শেষ দিন ছিল। তাই পুনরায় সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে মাদরাসায় যায় শহিদুল। কিন্তু তিন হাজার টাকা না দিলে সার্টিফিকেট দেয়া হবে না বলে শিক্ষার্থী শহিদুলকে সাফ জানিয়ে দেন মাদরাসার অধ্যক্ষ। সার্টিফিকেট না দিলে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করবেন বলে জানান শহিদুল। পরে কোনোভাবেই সার্টিফিকেট না নিতে পেরে মনের দুঃখে অধ্যক্ষের সামনে বিষ পানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন শহিদুল। পরে মাদরাসার অন্য শিক্ষকরা তাকে উদ্ধার করে মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হলে বিকেলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

শহিদুলের চাচাতো ভাই জামাল বলেন, ছোট বেলা থেকেই উচ্চশিক্ষার অর্জনের স্বপ্ন দেখতেন শহীদুল। নুন আনতে পান্তা ফুরালেও পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। কিন্তু আলিম পাশের পর ভর্তির জন্য সার্টিফিকেট দিচ্ছিলেন না মাদরাসার অধ্যক্ষ। তাই মনের দুঃখে বিষ পান করেন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে ঢাকায় নেয়া হচ্ছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য বজলুর রহমান বলেন, ছেলেটি অত্যন্ত মেধাবী। অনার্স ভর্তির জন্য তাকে সার্টিফিকেট দিচ্ছিল না মাদরাসার অধ্যক্ষ। নিয়ম বহির্ভূতভাবে তা আটকে রেখে ছিলেন। পরে সার্টিফিকেট দেয়ার জন্য আমি তাকে অনুরোধ করি। কিন্তু তিনি শোনেননি। তিনি তিন হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। ৫শ টাকা দেয়ার কথা বললেও তিনি রাজি হননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদরাসার এক শিক্ষক জানান, অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন অত্যন্ত দুর্নীতিবাজ একজন লোক। টাকা ছাড়া শুধু শিক্ষার্থী নয়, কোনো শিক্ষকের কাজও তিনি করেন না। তার সামনে ছেলেটা বিষ খেলেও, পাষণ্ড অধ্যক্ষ তাকে একবারও বাধা দেয়নি । তার কাছে টাকাই সব।

এদিকে ঘটনার পর থেকে মোবাইল ফোন বন্ধ করে গা ঢাকা দিয়েছেন মাদরাসার অধ্যক্ষ। একাধিকবার তার ব্যবহৃত মোবাইল ০১৭১৮৮০৭৮৪৯ নম্বরে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

মনোহরদী থানা পুলিশের ওসি ( তদন্ত) মেহেদী মাসুদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঘটনার পর থেকে অধ্যক্ষকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ ও এলাকাবাসী তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।

মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি সানাউল্লাহ হক নিরু বলেন, শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট দেয়ার ক্ষেত্রে টাকা নেয়ার কোনো বিধান নেই। মাদরাসার অধ্যক্ষ যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে তাহলে মাদরাসা বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সঞ্জিত সাহা/আরএআর/এবিএস