ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

সীমান্তে পুশইন ও পুশব্যাক চলছে সমানতালে

প্রকাশিত: ১২:৪৯ পিএম, ০২ ডিসেম্বর ২০১৬

মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে সেনাবাহিনীর হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার মুসলিম রোহিঙ্গারা সীমান্তের এপার-ওপারে লুকিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। মানবিক বিপর্যয়ের শিকার বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা ইতিমধ্যে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে।

ঢোকার চেষ্টায় রয়েছে আরো অনেক ভাগ্য বিড়ম্বিতরা। তাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্ত এলাকা জুড়ে বিজিবি, কোস্টগার্ড ও নৌ-বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে। এরপরও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ থামানো যাচ্ছে না। একদিকে বিজিবি কর্তৃক পুশব্যাক করা হলে অন্যদিকে রোহিঙ্গারা দালালের সহায়তায় বাংলাদেশে ইন চলছে সমানতালে।

বিজিবি ও কোস্টগার্ডরা নৌ ও স্থলপথে অনুপ্রবেশকৃত রোহিঙ্গাদের পুশব্যাক করা হচ্ছে বলে দাবি করলেও বেশির ভাগ রোহিঙ্গা ঠিকই সীমান্তে ওঁৎ পেতে থাকা দালালদের মধ্যেমে অন্যান্য পয়েন্টগুলো দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিরোধী সিন্ডিকেট নিয়োজিত দালালরা সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে উৎসাহ যোগাচ্ছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

বিদেশীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে রোহিঙ্গাদের নিয়ে ব্যবসা করতে বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট বস্তি এলাকায় রোহিঙ্গা ঢোকাতে তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে। রোহিঙ্গারা বস্তিতে আসার আগেরই নির্মাণ করা হচ্ছে ছোট ছোট ঘর। এসব ঘর ভাড়া দেয়ার প্রতিযোগিতাও চালিয়ে যাচ্ছে কয়েকটি সিন্ডিকেট। এতে সীমান্ত পেরিয়ে আসা শত শত রোহিঙ্গা পরিবার উখিয়া টিভি টাওয়ার সংলগ্ন রোড় দিয়ে কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে প্রবেশ করছে। এক্ষেত্রে সীমান্তে নিয়োজিত দালালরা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেয়ার কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় অধিবাসীরা।

Rohingya

এ সিন্ডিকেটের উপর অদৃশ্যভাবে সহযোগী রয়েছে রাজনৈতিক ও স্থানীয় ক্ষমতাধর অনেক ব্যক্তি। গত এক সপ্তাহে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করে উখিয়ার কুতুপালং বস্তিতে আত্মীয়-স্বজনদের সহায়তায় আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে।

সম্প্রতি নতুন আসা রোহিঙ্গাদের জন্য সেট নির্মাণের প্রতিযোগিতা চলছে রোহিঙ্গা বস্তি এলাকায়। বিশেষ করে রাতে ও ভোরে উখিয়া টিভি টাওয়ার সংলগ্ন এলাকার রাস্তার পাশ দিয়ে দলে দলে রোহিঙ্গারা কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে প্রবেশ করছে বলে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

সীমান্তরক্ষী বিজিবি ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে কিছু কিছু রোহিঙ্গা আটক হলেও বেশির ভাগ রোহিঙ্গা দালালদের মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে নির্ধারিত গন্তব্যে।

উখিয়া সীমান্তের রেজু আমতলী, ঘুমধুম, তুমব্রু, বালুখালী, পালংখালী, আনজুমান পাড়া পয়েন্ট দিয়ে গত এক সপ্তাহে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কথা স্থানীয় গ্রামবাসী বললেও ৩৪-বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল ইমরান উল­াহ সরকার অত অধিক সংখ্যাক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কথা অস্বীকার করেন।

তার মতে, সীমান্তের প্রতিটি পয়েন্টে বিজিবি সদস্যরা কঠোর অবস্থানে রয়েছে। অনুপ্রবেশকৃত রোহিঙ্গাদের আটক করে মানবিক সেবা দিয়ে প্রতিদিনই মিয়ানমারে পুশব্যাক করা হচ্ছে।

বিজিবি অনুপ্রবেশকৃত রোহিঙ্গাদের পুশব্যাক করা হচ্ছে-বলে দাবি করলেও সীমান্তে প্রত্যাবাসন বিরোধীদের নিয়োজিত দালালচক্র সিন্ডিকেট সীমান্তের অন্য পয়েন্টগুলো ব্যবহার করে পুশব্যাক করা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে নিয়ে আসছে।

refugees

সীমান্তবর্তী উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, মিয়ানমার সীমান্তে প্রচণ্ড গুলাগুলির আওয়াজ শোনা যায় প্রতিনিয়ত। সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বাড়লেও তার ইউনিয়নে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ তেমন একটা হচ্ছে না বলে তিনি দাবি করেন। তবে গাড়িতে করে রোহিঙ্গারা দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

উখিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল খায়ের জানান, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রতিরোধের পাশাপাশি এখানকার বৌদ্ধ মন্দির ও বৌদ্ধ পল্লীতে পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

এদিকে, শুক্রবার ভোরেও টেকনাফ নাফ নদী সীমান্ত অতিক্রম করার সময় রোহিঙ্গাবোঝাই ৬টি নৌকা ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুজার আল জাহিদ। তার মতে, প্রতি নৌকায় ১৫-২০ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু ছিল। জলসীমার জিরো পয়েন্টের উপারে তাদের ঠেলে দেয়া হলেও পরবর্তীতে তারা কোথায় গেছে তা নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি।

সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের একটি সূত্র দাবি করেছে, এক পয়েন্টে বাধা পেলে অন্য পয়েন্ট দিয়ে তারা কোনো না কোনোভাবে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের ভিতরে প্রবেশ করেছে।

এআরএ/এমএস