‘ত্বকীকে হত্যা করেছে আজমেরী ওসমান’
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমান মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ।
বুধবার বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ত্বকী হত্যার চার বছর পূর্তিতে অবস্থান কর্মসূচিতে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের নেতারা এমন অভিযোগ করেন।
ত্বকী হত্যার চার বছর পূর্তিতে অবস্থান কর্মসূচিতে নারায়ণগঞ্জের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষেরা অংশগ্রহণ করেন। তারা নারায়ণগঞ্জের সকল হত্যাকারীকে গ্রেফতার ও দ্রুত অভিযোগপত্র দেয়ার আহ্বান জানান। পরে তারা শহীদ মিনারে মোম শিখা প্রজ্জলন করেন।
ত্বকী মঞ্চের সভাপতির রফিউর রাব্বি বলেন, আগে এ সরকার অপরাধীদের ওপর ভর করে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এবার মনে হচ্ছে সরকার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেছে। সে কারণে আমরাও প্রত্যাশা করবো ত্বকী হত্যার বিচার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এবার নির্দেশনা দেবেন। ত্বকীকে হত্যা করেছে এমপি শামীম ওসমান এতে কোনো সন্দেহ নেই। আর এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমান। আজমেরী ওসমানকে গ্রেফতার করে জবানবন্দি গ্রহণের দাবী জানাচ্ছি।
ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব হালিম আজাদ বলেন, ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি ওসমান পরিবারের বিভিন্ন দুর্নীতি, লুটপাট আর জোরাজুরির প্রতিবাদ করায় ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে। প্রয়াত নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমান এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। শামীম ওসমান এখন সংসদে দাঁড়িয়ে মিথ্যাচার করছে। সাংবাদিকদের গালাগাল করছে এসব পতনের লক্ষণ।
নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েলের সঞ্চালনায় এতে আর বক্তব্য দেন খেলাঘর আসর নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি রথিন চক্রবর্তী, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাসুম, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শিবনাথ চক্রবর্তী, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক হিমাংশু সাহা, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি জাহিদুল হক দিপু ,নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজল প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীকে নারায়ণগঞ্জে নিজ বাসার কাছ থেকে অপহরণ করা হয়। এর দুইদিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর শাখা খালে তার মরদেহ পাওয়া যায়। ওই ঘটনায় নিহতের বাবা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশে র্যাবকে এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব হস্তান্তর করে পুলিশ। গ্রেফতারর হন ইউসুফ হোসেন লিটন, সালেহ আহমেদ সীমান্ত, রিফাত বিন ওসমান, তায়েব উদ্দিন জ্যাকি ও সুলতান শওকত ভ্রমরসহ আরও কয়েকজন।
তাদের মধ্যে সুলতান শওকত ভ্রমর ত্বকী হত্যার ঘটনা স্বীকার করে ২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ত্বকী হত্যার দায় স্বীকার করে কীভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে সে ব্যাপারে বিশদ বর্ণনা দেন। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কিলিং মিশনে ভ্রমরসহ ১১ জন ছিল। তবে এ জবানবন্দি দেয়ার ১৬ দিন পর ২৮ নভেম্বর ভ্রমর তার জবানবন্দি প্রত্যাহারের জন্য আদালতে আবেদন করেন। এরপর ২০১৫ সালের ২০ মার্চ উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে আত্মগোপনে চলে যান তিনি। কিন্তু এ হত্যাকাণ্ডের ৪ বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত এ মামলার অভিযোগপত্র দেয়া হয়নি।
শাহাদাত হোসেন/আরএআর/জেআইএম