ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

জয়পুরহাটে হঠাৎ টাইফয়েডের প্রাদুর্ভাব

প্রকাশিত: ০৭:৫২ এএম, ০২ মার্চ ২০১৭

জয়পুরহাটের পাঁচ উপজেলায় হঠাৎ করে সর্দি, কাশিসহ টাইফয়েড জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই জ্বরের প্রকোপে দিশেহারা রোগী ও অভিভাবকরা জ্বর সারাতে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলেও তাতে কাজ হচ্ছে না।

দীর্ঘ মেয়াদী জ্বরের কারণে ওষুধ বিক্রি কয়েকগুণ বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ওষুধ ব্যবসায়ীরা। জয়পুরহাট শহরের রেলগেট এলাকার ওষুধ ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন, উজ্জল মিয়া ও সদর রোডের মামুন হোসেন জানান, প্রায় প্রতি বছরই শীতের শেষ সময়ে জ্বর, সর্দি ও কাশি হলেও তা ২/৩ দিনের মধ্যে সামান্য ওষুধ সেবনেই রোগীরা সুস্থ হতেন। কিন্তু এ বছরই দীর্ঘ মেয়াদী জ্বরে অধিক সংখ্যক রোগী চিকিৎসকের পরামর্শপত্র নিয়ে ওষুধ কিনতে আসছেন।
 
একাধিক রোগী জানান, জ্বর হওয়ার পর প্রথমে তারা জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেয়েছেন। তারপরও ৫-৬ দিনে জ্বর না কমায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছেন। চিকিৎসক তাদেরকে অ্যান্টিবায়োটিক অ্যাজিথ্রমাইসিন, সিফিক্সিম, সিফোরক্সিম, সিফোরক্সিম + ক্লাভোনিক এসিড দিয়েছেন। এতেও জ্বর না সারায় দ্বিতীয় মেয়াদে ইনজেকশন সেফট্রিয়াক্সন দেয়ার পর জ্বর কিছুটা কমে গেলেও তা ২০-২৫ দিনের আগে ভালো হচ্ছে না।

এত করে রোগী ও অভিভাবকরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে সরকারি হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে ভিড় করছেন।

Taifoed

জয়পুরহাট পৌর এলাকার মাদারগঞ্জ এলাকার নিরাঞ্জন সরকারের অসুস্থ কন্যাশিশু  পল্লবী রানী  (৪) ও শান্তিনগর এলাকার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী আনিকা তাবাসসুমকে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। একই হাসপাতালে জেলা শহরের শান্তিনগর এলাকার তানিয়া দাস তার ননদ অন্তরা দাসকে (১২) ভর্তি করেছেন বেশ কয়েক দিন আগেই।পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে টাইফয়েড জ্বর ধরা পড়ে এখন চিকিৎসা চলছে।

এ ছাড়া এই হাসপাতালে আরো ১১ জন শিশুকে দীর্ঘ মেয়াদী জ্বরের কারণে ভর্তি করা হয়েছে। অভিভাবকরা জানান, এই দীর্ঘ মেয়াদী জ্বরের ব্যাপারে এর আগে কখনো শোনা যায়নি। শুধু জ্বরই নয় এ ব্যাধিতে আক্রান্ত অধিকাংশই রোগী এখন টাইফয়েডে আক্রান্ত।

জেলা শহরের মাস্টারপাড়া এলাকার ফরহাদের মেয়ে ফারজানা আক্তার, কালাই ঝামুটপুর গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের মেয়ে তাছলিমা আক্তারসহ টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত কয়েকজন রোগী জানান, জ্বরের প্রথম দিকে স্বাভাবিক ও সাধারণ রোগ মনে করে তারা বাড়িতেই চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু ৮/১০ দিনেও সুস্থ না হওয়ায় তারা সরকারি হাসপাতাল বা নিকটস্থ বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে এখনো মাঝে মধ্যেই শরীরে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসছে।

চিকিৎসকদের পরামর্শ মত রক্ত, প্রসাব, মল ইত্যাদি পরীক্ষা শেষে তাদের সকলেরই টাইফয়েড রোগ ধরা পরেছে বলে জানান এসব রোগী ও অভিভাবকরা।

Joypurhat

ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা রওশন আরা ও বিলকিস বেগম জানান, ওষুধের দোকানে গিয়ে জ্বরের কথা বললেই ওষুধ দোকানদাররা যে ওষুধ দিতেন তাতেই ২/৩ দিনের মধ্যেই জ্বর ভালো হয়ে যেত। কিন্তু এ বছর সে সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে।

জয়পুরহাট মডার্ন জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. আনোয়ার হোসেন জানান, এন্টিবায়োটিক ব্যবহারে আর আগের মত কাজ হচ্ছে না। কারণ পল্লী চিকিৎসকদের পরামর্শে, না হয় ওষুধ বিপণীগুলো থেকে রোগীরা নিজেদের পছন্দ মত বা ফার্মাসিস্টদের কিংবা পল্লী চিকিৎসকদের ইচ্ছে মত এন্টিবায়োটিকসহ বিভিন্ন ওষুধ সেবন করে থাকেন।

ফলে অন্যান্য রোগের মতই উচ্চ ক্ষমতার এন্টিবায়োটিকেও  টাইফয়েড জ্বর যাচ্ছে না। এতে করে মানবদেহে রোগটি হচ্ছে দীর্ঘ মেয়াদী।

বাস্তবতা স্বীকার করে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. খুরশিদ আলম জানান, খাদ্য, পানি ও মানুষসহ জীব-জন্তুর মলবাহিত এক ধরনের জীবাণু থেকে মানুষের শরীরে সংক্রমণের ফলে টাইফয়েড জ্বর নামক এ রোগটির প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।

জয়পুরহাট জেলা সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার জানান, অজ্ঞতা আর অসচেতনতার কারণে এ যাবৎ অনিবন্ধিত চিকিৎসক আর ওষুধ বিপণী মালিকদের কাছ থেকে ইচ্ছামত ও অপরিকল্পিত এন্টিবায়োটিক সেবন করে আসছেন অধিকাংশ রোগী। ফলে মানুষের শরীরে এর কার্যক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে আশঙ্কাজনকভাবে। এতে টাইফয়েড জ্বরসহ অন্যান্য রোগ-ব্যাধি দ্রুত সারছে না বলেও তিনি জানান।

ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার  আরো জানান, রোগীদের সংখ্যার সুষ্পষ্ট তথ্য বা পরিসংখ্যান এখনো জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে নেই। রোগটির লক্ষণ, কারণ ও প্রতিষেধক বিষয়ে ব্যাপক গণসচেতনার জন্য শিগগিরই প্রচার-প্রচারণা চালানো হবে।  

রাশেদুজ্জামান/আরএআর/আরআইপি