জয়পুরহাটে বেড়েছে রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়ার প্রকোপ
জয়পুরহাটে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ। জেলায় গত দুই মাসে এ পর্যন্ত এই রোগে শিশুসহ আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় দুই হাজারের বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ। প্রতি দিনই ২৫ থেকে ৩০ জন চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে ছুটে আসছেন।
জেলা সদরের আধুনিক হাসপাতালসহ ৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় ও ওয়ার্ডে জায়গা না থাকায় তাদের মেঝেতে রেখে তাদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।
সরেজমিন সোমবার জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আবহাওয়ার তারতম্যের পাশাপাশি, অপরিস্কার, অপরিচ্ছন্নতা থেকে রোটা নামক ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটে। গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ২ হাজার রোগী এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে যাদের মধ্যে এক থেকে পাঁচ বছর বয়সের শিশুর সংখ্যাই বেশী। তবে ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে এর প্রকোপ বাড়তে থাকে।
জয়পুরহাট পাঁচবিবি উপজেলার গোন্না গ্রামের নাহারা বেগমের (২৮) স্বামী শাহারুল ইসলাম বলেন, প্রথমে বমি ও পরে পাতলা পায়খানা আর পেটের ব্যথায় অবস্থা খুব খারাপ হওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার কেন্দুল গ্রামের ১ বছরের ছেলে নাজিম এর বাবা হারুণ-অর-রশিদ জানান, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২/৩ দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি তবে এখন একটু কমে গেছে।
কালাই উপজেলার গারইল গ্রামের ১৩ বছরের শিশুর অভিভাবক নাহিদ হোসেন জানান, হাসপাতাল থেকে শুধু স্যালাইনের পানি দেয়া হচ্ছে আর মাঝে মাঝে কিছু ওষুধ দিচ্ছে তবে এতেও কমছে না। তবে আরও ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বলে তিনি জানান।
জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. খাদিজা আকতার জানান, অন্য সময়ের চেয়ে রোটা ভাইরাসের প্রকোপ বর্তমানে কিছুটা বেড়েছে। গোটা জেলা থেকেই আক্রান্ত শিশুদের অভিভাবকরা জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসার কারণে এর সংখ্যা বেশি মনে হচ্ছে। তবে হাসপাতাল থেকে সঠিক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া মানুষকে সচেতন করার জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে এ অবস্থা কেটে যাবে।
জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আতাউর রহমান বলেন, রোগীদের অতি প্রয়োজনীয় স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধসহ সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে ২৪ ঘণ্টা তাদের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। প্রতিদিন এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছেই।
জয়পুরহাট জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার ডা. মৌ পিয়া মন্ডল জানান, রোটা ভাইরাল সংক্রান্ত ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব ঘটেছে আবহাওয়ার তারতম্যের পাশাপাশি অপরিস্কার অপরিচ্ছন্নতাসহ নানা কারণে। মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি নেয়া হয়েছে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা।
বছরের এ সময়টা আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে রোটা ভাইরাসের জন্য সহায়ক হিসেবে কাজ করে। যা অস্বাস্থ্যকর খাবার ও দুষিত পানির মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রবেশ করে এ রোগের সৃষ্টি করে। এজন্য স্বাস্থ্য সেবা বাড়ানোসহ এ ব্যাপারে গণসচেতনতার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও গ্রহণের দাবি করেন ভুক্তভোগীসহ এলাকাবাসীরা।
রাশেদুজ্জামান/এফএ/জেআইএম