পাখির ডাকে ঘুম ভাঙে
গ্রামে ঢোকার অনেক আগে থেকেই ভেসে আসছে পাখির কিচিরমিচির শব্দ। পাখির কলকাকলিতে মুখরিত গ্রামটি। প্রতিদিন পাখির ডাকেই ঘুম ভাঙে গ্রামবাসীর। পাখিগুলো অভয়াশ্রম হিসেবে বেছে নিয়েছে এ গ্রামকে। নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার মগলিশপুর গ্রামে দেখা মিলছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির।
নওগাঁ জেলা শহর থেকে প্রায় ২৪ কিলোমিটার দূরে মহাদেবপুর উপজেলা। এ উপজেলা থেকে আরো প্রায় ৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে মগলিশপুর গ্রামের অবস্থান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গ্রামের পুকুর পাড়ে আশরাফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির বাঁশঝাড়ে অভয়াশ্রম হিসেবে বসবাস করছে পাখিগুলো। পাখির কিচিরমিচির শব্দে আর কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে আছে গ্রামটি। এসব পাখি স্বাচ্ছন্দে গাছে বসছে আবার ঝাঁকে-ঝাঁকে ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে।
গত তিন মাস থেকে উপযুক্ত পরিবেশ ও নিরাপদ আশ্রয়ে যেন পাখিগুলো নির্ভাবনায় আবাস গড়ে তুলেছে। থাকার জন্য খড়কুটা দিয়ে বাসা বেঁধেছে। অনেক পাখি ডিম দেয়া শুরু করেছে এবং অনেকগুলো বাচ্চাও ফুটিয়েছে। বিশেষ করে বিকেলে ও ভোরে কিচিরমিচির শব্দে জানিয়ে দেয় তাদের সরব উপস্থিতি।
এখানে দেখা মিলছে বিভিন্ন ধরনের শামুকখোল, জ্যাঠা বক, কানি বক, পানকৌড়ি, রাতচোরা, ডাহুক, দোয়েল, ঘুঘু, শালিক, বাবুইসহ নানান জাতের দেশীয় পাখি।
এই গ্রামের মানুষেরাও প্রকৃতিপ্রেমী। পাখির প্রতি ভালোবাসা থেকে পাখি রক্ষায় নানা উদ্যোগও নিয়েছেন তারা। গ্রামের ভিতরে কোনো গাছকাটা বা উচ্চ শব্দে আওয়াজ করাও নিষিদ্ধ। তবে এক সপ্তাহ আগে প্রচণ্ড ঝড়, বৃষ্টি ও শিলায় প্রায় কয়েক হাজার পাখির ডিম নষ্ট হয়ে যায় এবং অনেক পাখির বাচ্চা মারা যায়।
বাঁশঝাড়ের মালিক আশরাফুল ইসলাম বলেন, কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ হলেও বাঁশঝাড় থেকে বাঁশ বিক্রি করে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় পার হতো। গত তিন মাস থেকে বাঁশঝাড়ে হঠাৎ করে পাখিরা এসে বসবাস শুরু করায় এখন আর বাঁশ কাটতেও পারছেন না।
গত শনিবার সন্ধ্যায় প্রচণ্ড ঝড়, বৃষ্টি ও শিলা হয়। বাড়িতে টিন বাঁধার জন্য ঝাঁড় থেকে বাঁশ না কেটে ১৪ কিলোমিটার দূরে শ্বশুরবাড়ি থেকে বাঁশ নিয়ে এসে কাজ করতে হয়েছে।
পাখি দেখতে নওগাঁ থেকে এসেছেন ব্যবসায়ী নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, পাখির কলকাকলিতে আমি মুগ্ধ। একসঙ্গে এত বেশি পাখি দেখার সৌভাগ্য কখনো হয়নি। পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
আব্বাস আলী/এফএ/এমএস