ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

নড়াইলে যুবলীগে ঠাঁই হলো রাজাকারের ছেলে-মূর্তি পাচারকারীর

প্রকাশিত: ০১:৪৪ পিএম, ২২ মে ২০১৭

রাজাকারের ছেলে ও চিহ্নিত মূর্তি পাচারকারী অপরাধীদের নিয়ে নড়াইলের কালিয়া উপজেলা ও নড়াগাতি থানা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করার অভিযোগ উঠেছে।

এ নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। কমিটি দুটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় যুবলীগ, আ.লীগ দলীয় নেতাকর্মী ও মুক্তিযোদ্ধারা। জেলার যুবলীগের দুটি কমিটি নিয়ে ক্ষোভের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও ব্যাপক সমালোচনা চলছে।

স্থানীয় দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত রোববার জেলার কালিয়া উপজেলা ও নড়াগাতি থানা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি প্রকাশ পেয়েছে। ১৫ মে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ স্বাক্ষরিত ২১ সদস্য বিশিষ্ট ওই দুটি কমিটি নড়াইলে পৌঁছানোর পর স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটিতে তৃণমূলের নিবেদিত ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের নেতাকর্মীদের পরিবর্তে রাজাকারের ছেলে ও বিতর্কিতরা থাকায় তৃণমূল নেতাকর্মীরা ওই আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।

স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, কালিয়া যুবলীগের কমিটিতে আহ্বায়ক হয়েছেন রবিউল ইসলাম খান। যিনি আন্তর্জাতিক মূর্তি পাচারকারী দলের অন্যতম সদস্য।

২০১৪ সালের ৫ আগস্ট র্যাব-৬, যশোর ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর আশরাফ উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি অভিযান চালিয়ে জেলার কালিয়া থানাধীন বড় কালিয়া গ্রামের বসতবাড়ীতে অভিযান চালিয়ে মূর্তি পাচারকারী রবিউল ইসলাম খানসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেন। ৩৪ কেজি ওজনের ১টি কষ্টি পাথরের মূর্তিসহ তাকে আটক করে র্যাব। যার আনুমানিক মূল্য ছিল ১ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা।

ওই সময় ছবিসহ সংবাদ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। এ ঘটনায় দীর্ঘসময় কারাভোগের পর তিনি বর্তমানে জামিনে থাকলেও মামলাটি (মামলা নং-৩/৭০) আদালতে বিচারাধীন।

এছাড়া উপজেলার বাহিরডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা মোতালেব খানের ছেলে রবিউল ইসলাম খাঁন ইতোপূর্বে ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ আ.লীগ সমর্থিত কোনো সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তার পরিবারের সদস্যরা কেউ কোনোদিন আ.লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততাও ছিলনা। এমনকি তার পরিবারের এক সদস্য কালিয়া উপজেলা যুবদলের সদস্য।

অপরদিকে, নড়াগাতি থানা কমিটির আহ্বায়ক হয়েছেন নড়াইলের তালিকাভুক্ত শীর্ষ রাজাকারদের অন্যতম শেখ তবিবর রহমানের ছেলে শেখ হাদিউজ্জামান হাদি। গত মাউলী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা.সুদিপ্ত কুমার দাস বিলাসের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি। এমনকি সংখ্যালঘূ নির্যাতনসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

হাদিউজ্জামানের বাবা শেখ তবিবর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে আলবদর, আল-শামস তৎকালীন নড়াইল মহকুমা পিস কমিটির চেয়ারম্যান কুখ্যাত রাজাকার সোলায়মানের ব্যক্তিগত সহকারীর দায়িত্ব পালন করেন। এভাবে বিতর্কিতরা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন। আর বঞ্চিত হয়েছেন রাজপথের নিবেদিতপ্রাণ এবং পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা।

এ নিয়ে তৃণমূলে যেমন হতাশার সৃষ্টি হয়েছে তেমনি এই কমিটি নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। কেন্দ্র থেকে এ ধরনের কমিটি চাপিয়ে দেয়া প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক বাবুল সাহা বলেন, কোনো নির্দেশনা ছাড়াই কাউকে কিছু না জানিয়ে কালিয়া উপজেলা ও নড়াগাতি থানা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয়েছে। এভাবে কেন্দ্র থেকে কমিটি ঘোষণার বিষয়টি আমাদের বোধগম্য নয়। কেন্দ্র থেকে এভাবে কমিটি  ঘোষণা করা অগণতান্ত্রিক ও গঠণতন্ত্র পরিপন্থী। এ ব্যাপারে জেলা যুবলীগের কমিটির সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা বা যোগাযোগ করা হয়নি।

একই প্রসঙ্গে কালিয়া উপজেলা যুবলীগের বর্তমান আহ্বায়ক শরীফ নাসির মাহমুদ জানান, বিদ্যমান নিয়মনীতিকে উপেক্ষা করে গত ১৫ মে কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ স্বাক্ষরিত কালিয়া উপজেলা ও নড়াগাতি থানা কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে স্পষ্টভাবে স্বাধীনতা বিরোধী, বিএনপি-জামায়াত পরিবারের সদস্য ও সন্ত্রাসীদের নিয়ে জেলা কমিটির সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই একটি বিতর্কিত কমিটি দেয়া হয়েছে। তিনি এই কমিটি বাতিল করে জেলা কমিটির মাধ্যমে সম্মেলন করে পরবর্তী কমিটি গঠনের দাবি জানান।

কেন্দ্র থেকে বিতর্কিত লোকদের দিয়ে কমিটি ঘোষণা প্রসঙ্গে নড়াগাতি থানা আ.লীগের সভাপতি আলহাজ হাফেজ মফিজুল হক বলেন, যুবলীগের এ দুটি কমিটিতে নড়াইল-১ আসনের এমপি কবিরুল হক মুক্তির ক্যাডার মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী রাজারকারের ছেলে, সন্ত্রাসী ও মূর্তিপাচারকারীকে নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

নড়াগাতি থানা যুবলীগের ঘোষিত কমিটির আহ্বায়কের বাবা একজন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী। এমপি মুক্তি তার স্বার্থ হাসিলের জন্য টাকার বিনিময়ে কেন্দ্র থেকে একটি পকেট কমিটি গঠন করেছেন। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য এবং দলের জন্য কাম্য নয়। এমন যুদ্ধাপাধীর সন্তান ও বিতর্কিতদের কোনোভাবেই আওয়ামী লীগ মেনে নেবে না। অবিলম্বে নব গঠিত যুবলীগের কমিটি বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।

হাফিজুল নিলু/এমএএস/আরআইপি