ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

সাঁড়া পদ্মা নদীর বাধ নির্মাণ কাজে ধীরগতি

প্রকাশিত: ০৩:১৯ এএম, ১২ মে ২০১৫

ঈশ্বরদী উপজেলার কোমরপুর হতে সাঁড়া ঝাউদিয়া পর্যন্ত এবং নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার তিলকপুর হতে গৌরিপুর পর্যন্ত পদ্মা নদীর বাম তীর সংরক্ষণ বাধের নির্মাণ কাজ চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ২শ ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এ বাধ নির্মাণ কাজ করছে। আসছে বর্ষা মৌসুমের আগে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে না পারলে আড়মবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়সহ আশপাশের বসতিগুলো এ বছর আবারও ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। নদী তীরে বসবাসরত ব্যক্তি, স্কুল শিক্ষার্থী ও সুশীল সমাজের ব্যক্তিদের দেয়া তথ্য সূত্রে বিষয়গুলো জানা গেছে।

সূত্র মতে, ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি পদ্মা নদীর বাম তীর সংরক্ষণ কাজের ডিপিপি একনেকে অনুমোদন পেলেও সে সময় প্রকল্পের অনুকূলে কোনে ভৌত কাজ আরম্ভ হয়নি। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ১৬ নভেম্বর উপজেলার সাঁড়া ইউনিয়নের কোমরপুর থেকে সাঁড়া ঝাউদিয়া পর্যন্ত ৫শ মিটার পদ্মা নদীর প্রতিরক্ষামূলক বাধ নির্মাণের ড্রেজিং ও ব্লক তৈরি কাজের উদ্বোধন করা হয়। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুস সালাম, ঠিকাদার কামিল হোসেন, আব্দুর রশিদ দুলালসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। পরবর্তীতে চলতি বছরের ২৫ মার্চ ভূমিমন্ত্রী  শামসুর রহমান শরীফ আনুষ্ঠানিকভাবে বাম তীর সংরক্ষণ কাজের উদ্বোধন করেন।

প্রকল্প সূত্র মতে, পদ্মা নদীর বাম তীর সংরক্ষণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো- পদ্মা নদীর বাম তীরের ভাঙন হতে পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার কোমরপুর হতে সাড়া-ঝাউদিয়া পর্যন্ত এবং নাটোর জেলার লালপুর উপজেরার তিলকপুর হতে গৌরিপুর পর্যন্ত এলাকা রক্ষা করা। পদ্মা নদীর ভাঙন হতে `পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প`-এর পদ্মা নদীর বামতীর বন্যা বাধের অংশ বিশেষ রক্ষা করা। এছাড়া এলাকার কৃষি জমি ও মূল্যবান স্থাপনা রক্ষা করা এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন পূর্বক ৮শ ৬৫ কোটি ২৯ লাখ টাকার বিপুল পরিমাণ সরকারি-বেসরকারি স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রক্ষা করা।

প্রকল্পটি ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ সালে একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে বাস্তবায়িত এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৩ হতে জুন ২০১৫ পর্যন্ত। সংশোধিত ডিপিপি অনুসারে প্রকল্পের ভৌত কাজের মোট ২০টি প্যাকেজের মধ্যে বর্তমানে ৭টি প্যাকেজের কাজ চলমান আছে। গত ৯ মার্চ ২০১৫ সালে ৫টি প্যাকেজের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে যা ৯ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে গ্রহণ করা হয়। এবং আরও ৮টি প্যাকেজের দরপত্র দ্রুত আহ্বান করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

অপরদিকে প্রকল্পের কাজ চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে শেষ করে পদ্মা নদীর ভাঙন রোধ করনে স্থায়ী বাধ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার কথা থাকলেও তা নিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পদ্মা নদীর তীরে বসবাসরত কৃষক সানাউল্লাহ জাগো নিউজকে জানান, পদ্মা নদীর ভাঙনে দশ বার ঘরের স্থান পরিবর্তন করতে করতে এখানে এসেছি। এ বছরও যদি বাধ নির্মাণ কাজ শেষ না হয় তবে হয়তবা আবারও ঘরের স্থান পরিবর্তন করতে হবে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এ জনপদে একসময় থানা ছিল, রেলওয়ে স্টেশন ছিল, নদী বন্দর ছিল, ইংরেজ সাহেব বাবুদের হাট ছিল, পাবলিকদের হাট ছিল। অথচ কালের বিবর্তনে প্রমত্তা পদ্মার দংশনে এ জনপদটি বিলীন হয়ে যায়। নিঃস্ব, অসহায় ও গৃহহীন হয়ে পড়নে এখানকার অর্ধ লক্ষাধিক পরিবার।

বর্তমান সরকারের ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ সাঁড়া বাসীর কথা চিন্তা করে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বলিষ্ঠ পদক্ষেপে ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণের মধ্য দিয়ে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কাজ শুরু করেন। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তত্বাবধায়নে ২শ ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা নদীর বাম তীর সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর বোয়ালিয়া কাদেরগঞ্জের মেসার্স এ এস কনস্ট্রাকসন বাধ নির্মাণ কাজ পেয়েছে। গত ১২ মে সরেজমিনে সাঁড়া পদ্মা নদীর বাধ নির্মাণ প্রকল্পে দেখা গেছে, আড়মবাড়িয়া স্কুলের সামনের অংশ বাদে প্রকল্প এলাকার সমস্ত বাধের কার্যক্রম চলছে ধীরগতিতে। কোমরপুর থেকে লালপুরের গৌরিপুর পর্যন্ত বাধ নির্মাণ কাজের তেমন অগ্রগতি নেই। ব্লক নির্মাণ কাজ শেষ হলেও ডাম্পিং ও ড্রেজিংয়ের কাজ চলছে। যে গতিতে কাজ চলছে তাতে চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে সম্পন্ন না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।


এদিকে কাজের ধীরগতির কারণে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে এবারের বর্ষা মৌসুমের আগে বাধ নির্মাণ কাজ শেষ করতে না পারলে নির্মানাধীন প্রকল্পটি হতে সুফল পাবেন না তারা। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের হেয়ালিপনায় জনস্বার্থে সরকারের বৃহৎ প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ব্যহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বাধ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়ে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

এ সকল বিষয়ে পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসি ও প্রকল্পের পিডি মীর মোশারফ হোসেন জাগো নিউজকে জানান, বাস্তবিক প্রেক্ষাপটে কাজের কিছুটা ক্রটি থাকতে পারে। তবে আমরা চেষ্টা করছি স্বচ্ছতা বজায় রেখে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার।

আলাউদ্দিন আহমেদ/এমজেড/এমএস