ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

মাদ্রাসা ছাত্রকে এ কেমন নির্যাতন

প্রকাশিত: ০৩:৩৭ পিএম, ১৯ মে ২০১৫

দিনাজপুরে একটি কাওমী মাদ্রাসায় ৯ বছর বয়সের এক শিশুকে চুরির অভিযোগ এনে ৪ দিন ধরে তিন শিক্ষক অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছেন। নির্যাতনে আহত শিশুটিকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নির্যাতনের শিকার শিশুর নাম আবু সাঈদ (৯)। সে সদর উপজেলার ১০ নং কমলপুর ইউনিয়নের জয়রামপুর গ্রামের হাসান আলী ও সহিদা বানুর ছেলে।

দিনাজপুর সদর উপজেলার কমলপুর ইউনিয়নে নূরানী তালিমুল কোরআন হাফিজিয়া কওমী মাদ্রাসায় এ অমানবিক ঘটনাটি ঘটে। মঙ্গলবার সকাল ১০ টার দিকে এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। এলাকাবাসী নির্যাতনকারী ৩ শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

নির্যাতনকারী শিক্ষক হাফেজ মো. রেজাউল ইসলাম, মাওলানা মো. রিয়াজুল ইসলাম এবং হাফেজ মাওলানা মো. শরিফুল ইসলাম এলাকাবাসীর ভয়ে পালিয়ে গেছেন।

মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ঘটনার দায় স্বীকার করে বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য ৫ সদস্য বিশিষ্টএকটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।

দিনাজপুর সদর উপজেলার ১০নং কমলপুর ইউনিয়নের কমলপুর বাজারে অবস্থিত নূরানী তালিমুল কোরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসাটি ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই মাদ্রাসায় মোট ছাত্রের সংখ্যা ১৬০ জন। কমলপুর ইউনিয়নের জয়রামপুর গ্রামের বাসিন্দা হাসান আলীর ৯ বছরের শিশু আবু সাঈদ এ মাদ্রাসায় হেফজ বিভাগে পড়াশোনা করতো। চুরির অপবাদ এনে মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ মো. রেজাউল ইসলাম, মাওলানা মো. রিয়াজুল ইসলাম এবং হাফেজ মাওলানা মো. শরিফুল ইসলাম গত শুক্রবার শিশু আবু সাঈদকে  মাদ্রাসার একটি কক্ষে হাত পা বেঁধে ৩টি লাঠি (বেত) একত্রিত করে বেদম প্রহার করেন। নির্যাতনে সাঈদ জ্ঞান হারিয়ে ফেললেও নির্যাতন থামেনি। একই কায়দায় শনিবার, রোববার, সোমবার ও মঙ্গলবার সকালে  তার উপর নির্যাতন চালানো হয়।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশু আবু সাঈদ কান্না জড়িত কণ্ঠে বলে, গত শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর মাদ্রাসার ছাত্রদের লাইন করে দাঁড় করানো হয়। এরপর ওই তিন শিক্ষ তার মাথায় চাপ প্রয়োগ করে বুকে হাত দিয়ে বলেন, এর বুক ধরফর করছে এ চুরি করেছে বলেই  হাত পা বেঁধে তাকে বেদম প্রহার করতে শুরু করে। এতে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

আবু সাঈদের বাবা হাসান আলী ও মা সহিদা বানু জাগো নিউজকে বলেন, আমার ছেলের উপর যেভাবে অমানষিক নির্যাতন চালানো হয়েছে এরকম নির্যাতন আজকাল মানুষ গরু-ছাগলকেও করে না। এভাবে যারা নির্যাতন চালিয়েছেন তারা মানুষ নয়। এরা মানুষরূপী জানোয়ার।  

সাঈদের পিতা-মাতা আরো বলেন, মাদ্রাসার ৩ শিক্ষক  সাঈদকে বেদম প্রহার করেন এবং প্রহারের কথা কাউকে না বলার জন্যও তাকে শাসানো হয়। মঙ্গলবার সকালে সহপাঠিদের কাছে প্রহারের কথা জানতে পেরে মাদ্রাসায় গিয়ে দেখেন ছেলের উপর নির্যাতনের চিহ্ন। পরে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ছেলেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করি।


মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হাফেজ মো. গোলাম মোস্তফা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এভাবে কোনো শিক্ষক ছাত্রদের নির্যাতন করতে পারে না। এ ব্যাপারে মাদ্রাসার কোন শিক্ষক তাকে কিছুই জানাননি। শিশুটি উদ্ধার হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি কিছুই জানতেন না। মাদ্রাসায় এসে তিনি ঘটনাটি জানতে পেরেছেন। তিনি বলেন শিক্ষকদের এ ধরনের আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়।

মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. মাজিদুর রহমান জুয়েল ঘটনার সততা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ২৪ ঘন্টার  মধ্যে তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত রির্পোট পেলেই দোষি শিক্ষদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে দিনাজপুর কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালেকুজ্জামান জানান, আমরা শিশু নির্যাতনের বিষয়টি জানতে পেরেছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপপরিদর্শক (এস আই) রেজাউলকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি কার্যক্রম শুরু করেছেন।

এমদাদুল হক মিলন/এমজেড/আরআইপি