শিশু ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা ধামাচাপা, চেয়ারম্যানসহ ৬ জন গ্রেফতার
শেরপুরে নালিতাবাড়ীতে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা আপস করে ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগে নয়াবিল ইউপি চেয়ারম্যান ইউনুছ আলী দেওয়ান, দুই ইউপি মেম্বার ও সালিশকারীসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছ পুলিশ।
শুক্রবার ভোরে তাদের গ্রেফতার করে দুপুরে বিচারিক হাকিমের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত অন্যান্যরা হলেন, নয়াবিল ইউনিয়নের ইউপি সদস্য শাজাহান আলী, ইউপি সদস্য আজাহার আলী, ধর্ষণ চেষ্টাকারী মৌয়াকুড়া জামে মসজিদের ইমাম আজিজুল হক (৬০), মসজিদ কমিটির সদস্য ফুল মাহমুদ এবং ইসমাইল হোসেন।
নালিতাবাড়ী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফসিহুর রহমান ৬ জনকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, আট বছর বয়সী দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা আপস করে ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ ঘটনায় ভিকটিমের মা বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। ভিকটিমকে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য শেরপুর জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার সকালে ওই শিশুটি তার ছোট ভাইকে নিয়ে নালিতাবাড়ী উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়নের মৌয়াকুড়া জামে মসজিদ মক্তবে পড়তে যায়। এসময় বৃষ্টি থাকায় উপস্থিতি কম দেখে ওই মক্তব্যের শিক্ষক ও মসজিদের ইমাম আজিজুল হক উপস্থিত দুই ছাত্রকে খাবার আনতে একটি বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। পরে সে ওই শিশুটিকে নিজ ঘরে ডেকে নিয়ে বিবস্ত্র করে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এসময় শিশুটি চিৎকার করলে তার মুখ চেপে ধরে। পরে ঘটনাটি কাউকে না বলার শর্তে তাকে ছেড়ে দেয়। ধর্ষণের চেষ্টার সময় ওই শিশুর গালে ও শরীরের বিভিন্ন অংশে কামড়ে দেয় আজিজুল।
পরদিন বুধবার সকালে ওই শিশুটি ব্র্যাক পরিচালিত স্থানীয় বিদ্যালয়ে পড়তে যায়। ওই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকা গালে কামড়ের বিষয়টি জানতে চাইলে, শিশুটি ঘটনাটি খুলে বলে। এরপরই ঘটনাটি শিশুটির পরিবারের লোকজনের মাঝে জানাজানি হলে এলাকাবাসী ইমাম আজিজুলকে অবরুদ্ধ করে। এরই প্রেক্ষিতে ওই দিন বিকেলে নয়াবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুস আলী দেওয়ানসহ ওই ইউনিয়নের কয়েক জন ইউপি সদস্য এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সালিশ বৈঠক করেন।
সালিশে ঘটনাটি সুরাহা করার জন্য ওই ইমামকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তবে সালিশের সিদ্ধান্তে ভুক্তক্তভোগীর পরিবার সন্তুষ্ট না হয়ে ন্যায়বিচার দাবি করেন। কিন্তু তাদেরকে সালিশকারীরা হুমকি-ধামকি এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করে। এর প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রাতে ওই শিশুটির মা বাদী হয়ে নালিতাবাড়ী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ চেষ্টা ও সহযোগিতার অভিযোগ এনে ৭ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।
অভিযোগ পেয়ে পুলিশ রাতেই উপজেলার বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে ৬ জনকে গ্রেফতার করে। তবে মামলার আরেক আসামি ইউপি সদস্য সুরুজ আলী পলাতক রয়েছেন।
নালিতাবাড়ী থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) সরোয়ার হোসেন জানান, ঘটনাটির তদন্ত চলছে। নালিতাবাড়ী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম ঘটনাস্থলে পরির্দশন করেছেন।
হাকিম বাবুল/এমএএস/পিআর