প্রতিবন্ধী ভাতাও জুটলো না বুশরার ভাগ্যে !
প্রথম দেখাতে বুশরা জাহানকে আর দশটা কিশোরীর মত স্বাভাবিক মনে হয়। চমৎকার ছবি আঁকে, মিষ্টি হাসি ছড়িয়ে সে সবার মন জয় করে নেয়। কিন্তু একটু ঘনিষ্ঠ হলেই বোঝা যায় মেয়েটির সমস্যাগুলো। জন্মগতভাবে শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী সে। পড়ালেখায় সহপাঠীদের চাইতে একটু পিছিয়ে পড়লেও বুশরা জাহান তার বাবা-মা ও নিজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ বালিকা বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে।
এদিকে তার চিকিৎসা করতে গিয়ে পরিবারে তীব্র অর্থ সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক চেষ্টা করেও শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী প্রতিভাবান এই মিষ্টি মেয়েটির ভাগ্যে জোটেনি প্রতিবন্ধী ভাতা। কর্মকর্তাদের কানে পৌঁছায়নি অসহায় পরিবারটির আর্তি।
বুশবার মা জাকিয়া ইয়াসমিন টফি জানালেন, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বকচর গ্রামে তাদের বাড়ি। তাদের একমাত্র মেয়ে বুশরা জাহান জন্ম থেকেই কানে শুনতে এবং কথা বলতে পারে না। আব্দুল ওয়াহাব গ্রামীণ ব্যাংকে কর্মরত আছেন। তার স্বল্প আয়ের উপর নির্ভর করে শিশুকাল থেকেই বুশরা জাহানের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া হয়।
জন্মের ৯ বছর পর নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ ডা. এমএ মতিনের তত্ত্বাবধানে বগুড়ার একটি ক্লিনিকে টনসেলসহ কানে এবং গলায় ৫ দফা অস্ত্রপোচার করা হয়। এতে তার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও শ্রবণ শক্তি ফেরেনি। তবে কিছু কথা বলতে শুরু করে। কিন্তু অনেক কথা সে এখনো স্পষ্ট করে বলতে পারে না। এ অবস্থা মোকাবেলা করেও বুশরা জাহান লেখাপড়া চালু রেখেছে। তবে অসাধারণ ছবি আঁকে সে। শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিযোগিতায় সে জিতেছে পুরস্কার। এসময় তাকে প্রশ্ন করা হলে কিছুটা অস্পষ্ট স্বরে আর কিছুটা ইশারায় জানায়, লেখাপড়া শিখে সে বড় শিল্পী হতে চায়।
বুশরা যখন হাসছিল, তখন দূরে দাঁড়িয়ে তার মা জাকিয়া ইয়াসমিন মুখ ঢেকে কাঁদছিলেন। তিনি জানালেন, বুশরাকে পরিপূর্ণভাবে সুস্থ করে তুলতে প্রয়োজন উন্নত চিকিৎসার। কিন্তু নিম্ন মধ্যবিত্ত এই পরিবারটির সেই আর্থিক সামর্থ্য নেই। যা দিয়ে তারা প্রতিবন্ধী মেয়েটির উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেন।
তিনি বললেন, সমাজের কত মানুষ ভালবেসে অন্য মানুষের জন্য কত কি করে। এই অসহায় মেয়েটিকে সুস্থ করে তুলতে আমরা কি কারও সহযোগিতা পাব না!
উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের সমাজসেবা কর্মকর্তার অফিস, গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার মেয়র, জাতীয় সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে একাধিক বার গিয়েও তারা কোন সহায়তা পাননি।
এসএস/এমএস