ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

সড়ক সংস্কার করবেন ব্যবসায়ীরা!

প্রকাশিত: ০৮:৪২ এএম, ০৬ জুন ২০১৫

দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র `প্রকৃতি কন্যা` খ্যাত জাফলং। পুরো বছর জুড়ে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা এখানে ঘুরতে আসেন প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে। মাত্র ৩ কিলোমিটার ভাঙা সড়ক আর কর্তৃপক্ষের অমনোযোগীতায় প্রায় হারিয়ে যাচ্ছে এর আসল রূপ। এই পর্যটন কেন্দ্র রক্ষায় কর্তৃপক্ষের তেমন সুনজর নেই বললেই চলে।
    
এবার এখানে আসায় সিলেট তামাবিল মহাসড়কের মামার দোকান এলাকার মোহাম্মদপুর থেকে বল্লাঘাট ও জাফলং তিন কিলোমিটার সড়ক মেরামত কিংবা সংস্কারের দায়িত্বটুকু ব্যবসায়ীদের ওপর ছেড়ে দিল সিলেটের সড়ক ও জনপথ বিভাগ। অজুহাত হলো, সংস্কারের জন্য অর্থ বরাদ্দ নেই। প্রায় ২ মাস ধরে সিলেট-তামাবিল সড়কের জাফলংয়ের রাস্তাটি সংস্কারে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ ট্রাক মালিক শ্রমিক ও পাথর কোয়ারি সংশ্লিষ্ট ৬টি সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

সম্প্রতি অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডাকা হলে এক সপ্তাহের মধ্যে জাফলংয়ে মামার দোকান থেকে কোয়ারি পর্যন্ত তিন কিলোমিটার ভাঙা সড়ক সংস্কারের আশ্বাস দেয় সওজ। আশ্বাসের পর একদিন ধর্মঘট ও সড়ক অবরোধ করার পর ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেন।

এক সপ্তাহের সময় নিয়ে একমাসেও সড়ক সংস্কার না হওয়ায় শুক্রবার এক সভায় ব্যবসায়ীদের স্থানীয় প্রশাসন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে সড়কটি জরুরি ভিত্তিতে সংস্কারে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে এ বরাদ্দ অনুমোদন হবে।

এক্ষেত্রে সড়ক সংস্কারে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা চাওয়া হয়। পরে স্থানীয় পাথর, চুনাপাথর, কয়লা ব্যবসায়ী এবং ট্রাক মালিক সমিতিসহ ৬টি সংগঠনের ব্যবসায়ী নেতারা সড়ক সংস্কারে অর্থ যোগানের দায়িত্ব নেন।

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সালাহ উদ্দিন জানান, সড়ক সংস্কার খাতে বরাদ্দ স্বল্পতার কারণে সড়কটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সংস্কার করতে গেলে দেরি হত। তাই গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি বর্তমানে চলাচলের উপযোগী করতে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। পাথর ব্যবসায়ীরা সড়ক ও জনপদ বিভাগকে ২৫ লক্ষ টাকার পাথর ও বালি দিতে আগ্রহী হয়েছেন। তাই আগামী রোববার থেকে সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু হবে।

সিলেট-তামাবিল জাফলংয়ের খানাখন্দে ভরা সড়ক সংস্কারে উপজেলা প্রশাসন, সড়ক ও জনপদ বিভাগ এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মিলিত সভা শুক্রবার বিকেলে নলজুরিস্থ জেলা পরিষদের ডাক বাংলোয় অনুষ্ঠিত হয়।

গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সালাহ উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন, সড়ক ও জনপদ বিভাগ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মনিরুল ইসলাম, জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ ও তামাবিল পাথর, চুনা পাথর ও কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলী, গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া হেলাল।
    
উপস্থিত ছিলেন, পুর্ব জাফলং ইউপি চেয়ারম্যান হামিদুল হক ভুইয়া বাবুল, জাফলং পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মুতলিব খা, সম্পাদক আব্দুল হাফিজ, জাফলং স্টোন ক্রাশার মিল মালিক সমিতির সভাপতি বাবলু বখত, সম্পাদক ইলিয়াছ উদ্দিন লিপু, ব্যাবসায়ী জালাল উদ্দিন, জাফলং ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অব্দুল আলীম, সিলেট জেলা ট্রাক চালক সমিতির সভাপতি দিলু মিয়া, জাফলং ট্রাক চালক সমিতির সভাপতি ফয়জুল ইসলাম প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, সিলেট-জাফলং মহাসড়কের মামার দোকান-বল্লাঘাট জাফলং কোয়ারি পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে বৃষ্টির এই মৌসুমে একটু বৃষ্টি হলেই হাঁটুজল আর কাঁদা মাটিতে একাকার হয়ে যায়। অথচ তামাবিল শুল্ক স্থলবন্দর দিয়ে ভারত যাতায়াতেরও একমাত্র মাধ্যম সিলেট-তামাবিল এই মহাসড়কটি।

এশিয়ান এই মহাসড়কটি দেখলে কেউই বিশ্বাস করবেন না এখানে একটি সড়ক ছিলো। সড়কের এই বেহাল অবস্থায়ও ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। ঘটছে দুর্ঘটনাও। কোয়ারি থেকে পাথর বহনকারী ট্রাক কিংবা ভারত থেকে আসা কয়লাবাহী ট্রাক প্রতিদিনই গর্তে আটকা পড়ছে অথবা উল্টে গিয়ে পুরো সড়কেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পর্যটকরাও আটকা পড়েন অহরহ। ফলে চরম দুর্ভোগের নাম এখন এই মহাসড়টি। আর এ কারণে জাফলংয়ে পর্যটকদের আগমন আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে।

স্থানীয় যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে মারাত্মক দুর্ভোগ। এ অবস্থায় স্থানীয় বেশ কয়েকটি সংগঠন ১৬ মে থেকে এই সড়কে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। পাথর পরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব যানবাহন ধর্মঘট পালন করে।

সিলেট তামাবিল মহাসড়কের মামার দোকান এলাকার মোহাম্মদপুর থেকে বল্লাঘাট ও জাফলং সড়ক সংস্কারের দাবিতে সম্প্রতি জাফলং পাথর ব্যবসায়ী সমিতি, জাফলং স্টোন ক্রাশার মিল মালিক সমিতি, জাফলং ট্রাক মালিক সমিতি, জাফলং ট্রাক চালক সমিতি ও জাফলং বল্লাঘাট পাথর উত্তোলন সরবরাহকারী শ্রমিক সমিতি ও স্থানীয় বিভিন্ন ব্যাবসায়ী সমিতির উদ্যোগে সড়ক অবরোধ করে এক যৌথ প্রতিবাদ সভাও করে সেসময়।

যোগাযোগ করা হলে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর সিলেটের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী খুরশেদ আলম জাগো নিউজকে জানান, রাস্তাটির মামার দোকান অংশের বেহাল দশা সম্পর্কে তারা ওয়াকিবহাল। এ নিয়ে সম্প্রতি জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায়ও আলোচনা হয়েছে। তবে বরাদ্দ না থাকায় জরুরি বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

ছামির মাহমুদ/এমজেড/এমএস