পলো বাওয়া উৎসব, নদী পাড়ে আনন্দের ঢল
দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার সেই প্রাচীন ঐতিহ্য। কালের পরিক্রমায় শুকিয়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে খাল-বিল আর নালা। আগের মতো আষাঢ়-শ্রাবণ এলেও নৌকায় পাল তুলে মাঝিদের গান ধরতে দেখা যায় না।
শত প্রতিকূলতার মধ্যে ও কেউ কেউ বাঙালির গ্রামীণ সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকে লালন করার চেষ্টা করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে নরসিংদীর মেঘনা নদীতে পালিত হলো ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসব।
রোববার নরসিংদীর সদর উপজেলার বদরপুর গ্রামে মেঘনার শাখা নদীতে পালিত হয়েছে এই উৎসব। এদিন সকাল ১০টায় নদীর জামতলা ঘাট থেকে মাছ ধরা শুরু হয়ে বেলা ২টা পর্যন্ত চলে মাছ ধরার উৎসব। এতে অংশ নেয় সদর উপজেলা, রায়পুরা, শিবপুরসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিভিন্ন বয়সের কয়েকশ শৌখিন মাছ শিকারি।
নরসিংদীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদী-নালা খাল-বিলের পানি এরই মধ্যে শুকিয়ে এসেছে। আর সেসব শুকনো জলাশয়ে প্রতি বছরের আশ্বিন মাস থেকে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত চলে বিভিন্ন এলাকার শৌখিন মৎস্য শিকারিদের পলো বাওয়া উৎসব। সময়টা এলেই বিভিন্ন এলাকা থেকে এক সঙ্গে দলবেঁধে উৎসবমুখর পরিবেশে পলো বাওয়া উৎসবে অংশ নেয়।
উৎসবকে ঘিরে শৌখিন মাছ শিকারিরা গড়ে তোলে ‘পলিয়া’ নামে একটি মৎস্য শিকারি সমিতি। ব্যাপক প্রস্তুতি না থাকলেও সমিতির শৌখিন মাছ শিকারিরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে পলো বাওয়ার দিনক্ষণ নির্ধারণের পর সবাইকে জানিয়ে দেয়। এ ঘোষণার পর আগ্রহীরা পলো নিয়ে উৎসবে অংশ নেয়।

একেকজন একটি মাছ ধরার সঙ্গে সঙ্গে অন্যরাও আনন্দে মেতে ওঠে। শৈল, গজার, বোয়াল, আইর, কালনা ও টাকিসহ নানা প্রজাতির মাছ ধরা পড়ে। পলো বাওয়া দেখতে আশপাশের গ্রামের লোকজন ভিড় জমায় নদীর ঘাটে।
আয়োজকরা জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদী-নালা ও খাল-বিলের তলদেশ ভরাট হয়ে প্রতিনিয়ত পানি হ্রাস পাচ্ছে। নদী দূষণসহ নানামুখী তৎপরতার কারণে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্রগুলোর বেশির ভাগই বিনষ্ট হয়ে গেছে। নদী বেঁচে থাকলে বেঁচে থাকবে ঐতিহ্যবাহী এ পলো উৎসব। তাই পলো বাওয়া উৎসব থেকেই নদী রক্ষার দাবি জানানো হয়।
শৌখিন মাছ শিকারি রফিকুল ইসলাম বলেন, দিন দিন হারিয়ে যাওয়া বাঙালির ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে নদীমাতৃক প্রতিটি এলাকাতেই যেন ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসবের আয়োজন করা হয়।
সঞ্জিত সাহা/এএম/আরআইপি