প্রেমের ফাঁদে ধর্ষণ, সন্তানের ভরণপোষণের দায়ভার ধর্ষকের
শেরপুরে বিয়ের প্রলোভনে তরুণীকে ধর্ষণের দায়ে এক যুবককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা আদায় করে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ভিকটিমকে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সোমবার দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ মোছলেহ উদ্দিন এ রায় দেন। সাজাপ্রাপ্ত মোস্তফা মিয়া ওরফে মোস্তফা (২২) নকলা উপজেলার উরফা ইউনিয়নের কুরেরকান্দা গ্রামের সিরাজ আলীর ছেলে।
আদালতের রায়ে, ধর্ষিতার গর্ভে জন্ম নেয়া ১১ মাস বয়সী ছেলের জন্মদাতা হিসেবে ধর্ষক মোস্তফা মিয়াকে ‘বায়োলজিক্যাল পিতা’ বলে ঘোষণা করেন এবং ২১ বছর পর্যন্ত ওই সন্তানের ভরণপোষণের ব্যয় বহনের নির্দেশ দেন। রায় ঘোষণার পর সাজাপ্রাপ্ত মোস্তফা মিয়া ওরফে মোস্তফা কাঠগড়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েন।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট গোলাম কিবরিয়া বুলু বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করছি। মাত্র নয় মাসের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি হয়েছে। এ রায় একটি নজির হিসেবে থাকবে এবং নারী অধিকার সুরক্ষায় গুরত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
পিপি অ্যাডভোকেট গোলাম কিবরিয়া বুলু মামলার নথির বরাত দিয়ে জানান, নকলার ইউনিয়নের কুরেরকান্দা গ্রামের দরিদ্র পরিবারের তরুণীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেন একই গ্রামের মোস্তফা মিয়া।
একপর্যায়ে ওই তরুণীকে ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে বিয়ের প্রলোভনে মোস্তফা মিয়া ধর্ষণ করেন এবং পরবর্তীতে তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়।
এতে অসহায় ওই তরুণী গর্ভবতী হয়ে পড়ায় বিয়ের জন্য চাপ দিলে ধর্ষক মোস্তফা সম্পর্কের বিষয়টি অস্বীকার করেন। এ নিয়ে এলাকায় শালিস-দরবার হলেও বিয়ে না করায় ওই তরুণী বাদী হয়ে গর্ভের সন্তানের পিতৃপরিচয় দাবি করে ওই বছরের ৩ অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে নকলা থানায় মামলা করেন।
নকলা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) বন্দে আলী মিয়া তদন্ত শেষে ওই বছরের ২৩ নভেম্বর মোস্তাফা মিয়াকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন।
ওই তরুণীর গর্ভের সন্তানের ডিএনএ টেস্টে ধর্ষক মোস্তফা মিয়ার সন্তান বলে নিশ্চিত হয়। বিচারিক পর্যায়ে ভিকটিম, তদন্ত কর্মকর্তা, চিকিৎসকসহ ৮ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে সোমবার আদালতে ধর্ষক মোস্তফা মিয়াকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।
হাকিম বাবুল/এএম/এমএস