শত বছরের ঐতিহ্য সীতা তলার মেলা
জেলার প্রত্যন্ত এলাকা আত্রাই উপজেলার জামগ্রাম। এ গ্রামে প্রতি বছর ঐতিহ্যবাহী ‘সীতা তলার’ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ মেলাকে ঘিরে এলাকায় নানা স্মৃতি রয়েছে। শত বছরের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে মেলাটির আয়োজন করে স্থানীয়রা। এটিই জেলার সর্ববৃহৎ মেলা। এ মেলাকে ঘিরে এলাকায় চলছে উৎসবের আমেজ।
কথিত আছে, প্রত্যন্ত এলাকা হওয়ায় জামগ্রাম ছিল বন জঙ্গলে পরিপূর্ণ। এক কথায় গহীন বন। শত শত বছর আগে শ্রী শ্রী রামচন্দ্র তার স্ত্রী সীতা রাণীকে নিয়ে এ গহীন বনে বনবাসে এসেছিলেন। সীতা রাণী সেসময় বসবাসের জন্য বনের মধ্যে একটি বটগাছের নিচে আশ্রয় নেন। জীবনের শেষ অবধি তিনি গাছটির নিচেই কাটিয়ে দেন।
গাছটির পাশে রয়েছে এক বিরাট কুপ। সেই কুপের পানিতেই তিনি স্নান করতেন। বিশ্বকর্মা এক রাতেই নাকি নির্মাণ করেছিলেন এই কুপ। সেই থেকেই সীতার নামে ‘সীতা তলার’ মেলার নামকরণ করা হয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন সীতা তলায় একটি মণ্ডপকে ঘিরে এ মেলার আয়োজন করতেন। কিন্তু কালের পরিক্রমায় এখন হিন্দু, মুসলিম ধর্মবর্ণের সবাই মিলে এ মেলার আয়োজন করে থাকেন।

পৌষ মাসের শেষ দিনে সীতা তলা মণ্ডপে রাম সীতার পূজা অনুষ্ঠিত হয়। পরদিন মাঘ মাসের প্রথম দিন থেকে তিন দিনব্যাপী মেলা হয়ে থাকে। তবে আরো কয়েক দিনব্যাপী চলে মেলার বেচা-কেনা। মেলায় শাড়ি-লুঙ্গি, বাঁশ ও কাঠের তৈরি বিভিন্ন ফার্নিচার, কসমেটিক, মিষ্টান্ন, বড় মাছ বিক্রি হয়ে থাকে। নওগাঁসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজারো লোকের সমাগম হয় এ মেলায়। মেলাকে ঘিরে এলাকায় সাজসাজ রব ওঠে। আত্মীয়-স্বজনের আগমন ঘঠে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে। বিভিন্ন ধরনের মিঠাই মিষ্টান্ন পিঠা খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়।
মেলা ঘিরে এলাকায় জামাই আদর রেওয়াজের শুরু হয়েছে। ঈদের সময় না হলেও অন্তত মেলা উপলক্ষে জামাই-মেয়েকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসা হয়। জামাই মেলা থেকে বড় মাছ-মিষ্টি নিয়ে শ্বশুরালয়ে যান। আর শ্বশুরও জামাইকে উপহার দিয়ে থাকেন।
মেলা উদযাপন কমিটির সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, ঐতিহ্য রক্ষায় আমরা প্রতি বছর এই মেলার আয়োজন করে থাকি। মেলার সময় মনে হয় এলাকায় ঈদের উৎসব বিরাজ করে। মেলায় শান্তি শৃঙ্খলার জন্য প্রশাসনের ব্যবস্থা রয়েছে।
আব্বাস আলী/এফএ/জেআইএম