নড়াইলে স্লুইস গেট ভেঙে সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি
নড়াইলে স্লুইস গেট ভেঙে সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এবং তিনটি বিলের ফসলি জমি পানির নিচে চলে গেছে। এমনকি বিলীন হতে যাচ্ছে সড়ক ও বসবাসের ঘরবাড়ি। শুক্রবার বিকেলে ভেঙে যায় নড়াইল সদর উপজেলার শিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়নের হাড়িভাঙা খালের ওপর নির্মিত স্লুইস গেটের গাইড ওয়াল।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত তিনদিন অতিবাহিত হলেও এ ব্যাপারে কেউ কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। অবাধে পানি প্রবেশ করায় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের পাঁচটি বিলসহ নড়াইল পৌর সভার ১০টি গ্রাম এবং নড়াইল-নওয়াপাড়া ভায়া গোবরা সড়ক।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক শেখ আমিনুল হক জাগো নিউজকে বলেন, চিত্রা নদীর জোয়ারের পানির প্রচণ্ড চাপে হাড়িভাঙা খালের স্লুইস গেটের গাইড ওয়াল ভেঙে তিনটি বিলের ১ হাজার ৩০ হেক্টর জমির আবাদি ফসল তলিয়ে গেছে। আরো ৩০ হাজার হেক্টর জমির ফসল ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় এক হাজার কৃষি পরিবার। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে আরো ১৫ হাজার পরিবার। তিনি বলেন, আনুমানিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩ কোটি টাকা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) নড়াইল অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০০৯ সালে হাড়িভাঙা খালের ওপর তিন ভোল্ট (১৫০ মিটার গুণ ১৮০ মিটার) রেগুলেটর নির্মাণ করা হয়।
সরেজমিন ভাঙন কবলিত এলাকায় দেখা গেছে, হাড়িভাঙা খালটি গোবরা বাজার হয়ে চিত্রা নদীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় খালেও পানির চাপ বেড়েছে। সদর উপজেলার শিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়নের উত্তর খলিশাখালি গ্রামের খালের ওপর নির্মিত স্লুইস গেটটির গাইড ওয়াল পানির চাপে ভেঙে গিয়ে প্রবল বেগে লোকালয়সহ বিলে পানি প্রবেশ করছে। এতে সদর উপজেলার কলোড়া, মুলিয়া ইউনিয়ন ও নড়াইল পৌর সভার তিনটি বিলের বেশির ভাগ ফসলি জমিসহ প্রায় ৩০টি মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। এসকল এলাকার প্রায় তিন হাজার কৃষি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আরো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে পাঁচটি বিলসহ ১০টি গ্রামের মানুষ।
স্লুইস গেট সংলগ্ন উত্তর খলিশা গ্রামের মৎস্যজীবী অনাদি দাস জাগো নিউজকে বলেন, খালে জলের মেলা চাপ রইছে। শুক্রবার বিকেলে হঠাৎ গেটের পাশের দেয়াল ভাঙ্গে যায়। তীর বেগে পানি ঢুকতে থাকে ফসলি মাঠের দিকে। আমরা এখন ভয়ের ভিতর আছি। আমাগে ঘর-দরজা ভেঙে যেতে পারে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কতো লোকই তো দেখতে আসতেছে। কিন্ত কোনো উপকারে আসছে না।
কৃষক হরিচাঁদ বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, কাড়ার বিল, বকচরের বিল, বরেন্দার বিল তলিয়ে গেছে। যেখানে ভেঙে গেছে সেখানে খুব তাড়াতাড়ি বন্ধ না করলে পানি মুলিয়া ইউনিয়নের বাসভিটা, নুনখির বিল এবং মাইজপাড়া ও পৌরসভার চার-পাঁচটা মাঠে চলে যাবে। তিনি আরো বলেন, মেলা মানুষের বাড়ি-ঘরে পানি উঠছে। ঘরের তে বেরোতে পারতেছে না।
কলোড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশীষ কুমার বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, স্লুইস গেটটি শিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়নের মধ্যে। অথচ পানি প্রবেশ করে আমার ইউনিয়নের কয়েক হাজার কৃষকের ফসল তলিয়ে গেছে। পরিষদের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন,পানি প্রবেশ বন্ধ করা না গেলে নড়াইল পৌর সভাসহ মুলিয়া, মাইজপাড়া ইউনিয়নের বিল তলিয়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, নড়াইল-নওয়াপাড়া ভায়া গোবরা সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হবে। বিষটি এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে।
এলজিইডির নড়াইল অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোতালেব বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি শুনেছি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অনুরোধ করা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বনানী সরকার জাগো নিউজকে বলেন, স্লুইস গেট দেখভালের দায়িত্ব পানি উন্নয়ন বোর্ডের।
বাহিরগ্রাম পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সম্পাদক মিঠুন হাজরা বলেন, স্থানীয় উদ্যোগে পানি প্রবেশ বন্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, স্লুইচ গেট ভেঙে গেছে এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। আমাদের সঙ্গে এলাকাবাসী কোনো যোগাযোগ করেনি। জাগো নিউজের প্রতিনিধির মাধ্যমে জানতে পারলাম। আমরা স্লুইচ গেট দ্রুত সম্প্রসারনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবো যাতে কোনো ফসলি জমি, কৃষকদের ঘরবাড়ি ও যোগাযোগের সড়ক বিলীন না হয়।
হাফিজুল নিলু/এসএস/পিআর