ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

মুখ থুবড়ে পড়ছে চিংড়ি শিল্প

প্রকাশিত: ০৮:৫১ এএম, ২৭ জুলাই ২০১৫

বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম খাত হিমায়িত চিংড়ি শিল্পের বিপর্যয় কাটছে না।  আশির দশকে লাভজনক এ শিল্পটি বর্তমানে লোকসান শিল্পে রূপ নিয়েছে। ইতোপূর্বে গড়ে ওঠা দেশের ৭৮টির মধ্যে ৫০টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।  মাত্র ২৮টি প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে।  এর মধ্যে খুলনাঞ্চলের ৫৮টির মধ্যে ২৪টি এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের ২০টির মধ্যে মাত্র ৪টি প্রতিষ্ঠান চলমান রয়েছে।  বিদেশি বাজার ধরে রাখতে না পারলে এ শিল্পটি আরো নাজুক অবস্থায় পড়তে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসেব অনুযায়ী, ২০০১ সাল থেকে মাছ রফতানি বাড়লেও হঠাৎ করে ২০০৮-০৯ অর্থ বছর থেকে হ্রাস পেতে থাকে।  কিন্তু ডলারের মূল্য বৃদ্ধিসহ বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা কিছুটা কাটিয়ে ওঠায় ২০১০-১১ অর্থ বছরে ঘুরে দাঁড়ায় এ দেশের চিংড়ি শিল্প।  তবে দেশীয় স্বার্থবাদী কিছু লোকের কারণে এটি হুমকির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।  দেশের চিংড়ি রফতানির সিংহভাগই খুলনা থেকে রফতানি হলেও এখানকার কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে এটি ধ্বংসের প্রায় দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে।

নগরীর পশ্চিম রূপসার নতুন বাজার এবং পূর্ব রূপসা এলাকার কিছু মাছ ব্যবসায়ী পানি ও জেলি প্রয়োগ করে মাছের ওজন বাড়িয়ে তা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বিক্রি করায় বিশ্ব বাজারে চিংড়ি শিল্প প্রশ্নের মুখে পড়ে।  এসব প্রয়োগকারীদের বিরুদ্ধে মাঝে-মধ্যে প্রশাসনিক অভিযান হলেও কিছুদিন পর আবারো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। দেশের স্বার্থে অন্তত এসব পুশের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন বলেও সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

অপরদিকে পুশের কারণে কতিপয় প্রতিষ্ঠানের মালিক দায়ী উল্লেখ করে একাধিক সূত্র জানায়, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে মাছ রিসিভের সময় উপস্থিত থাকা রিসিভ ইনচার্জরা সচেষ্ট হলেই পুশবিহীন মাছ রিসিভ করা সম্ভব।  কিন্তু ওইসব রিসিভ ইনচার্জরা জেনে-শুনেই পুশ দেয়া মাছ গ্রহণ করে থাকেন বলেও সূত্রটি উল্লেখ করে।

এ প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠান মালিকরা জানান, মাছ রিসিভের সময় তাতে পুশ দেয়া কি না তা নির্ধারণ করা সম্ভব হয় না।  এজন্য বাইরে থেকে যখন মাছে পুশ দেয়া হয় তখনই রোধ করতে হবে।  আর এজন্য মৎস্য অধিদফতর ও প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা পালন জরুরি বলেও তাদের দাবি।

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ মো. আব্দুল বাকী জাগো নিউজকে বলেন, এক সময় চিংড়ি শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের মূল্যায়ন করা হতো।  এখনো কিছুটা হচ্ছে।  কিন্তু চিংড়ি শিল্পের যে দূরবস্থা তাতে অদূর ভবিষ্যতে তাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সুযোগ হয়তো থাকবে না।  বর্তমানে খুলনায় ২৪টি চিংড়ি শিল্প চলমান থাকলেও এক বছরের মাথায় হয়তো ৮/১০টিতে নেমে আসতে পারে।  তাই চিংড়ি ঘেরগুলোকে মানসম্মত করার পাশাপাশি বিদেশি বাজারের প্রসার ঘটাতে হবে।

খুলনা মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আব্দুর রাশেদ জাগো নিউজকে বলেন, মূলত কোম্পানিগুলোর কমিশন এজেন্টের কারণেই মাছের বাজার নষ্ট হচ্ছে।  কমিশন এজেন্ট প্রথা বাতিল করা হলে প্রান্তিক চাষিরাও উপকৃত হবে।  সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠানগুলো মাছ কিনলে বৈদেশিক বাজার হারাতে হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।  গত বছরের চেয়ে এ বছর অন্তত ৭০ কোটি টাকার বেশি চিংড়ি রফতানি হয়েছে।

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক এবং এনজিও বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান এস. হুমায়ন কবীর জাগো নিউজকে জানান, স্বাধীনতা পরবর্তী মাত্র ১৫/২০ বছরের মাথায় চিংড়ি শিল্প লাভজনক শিল্প হিসেবে পরিচিতি পায়।  লাভজনক শিল্প দেখে তৎকালীন সময়ে দেশে ১৬৮টি চিংড়ি শিল্প গড়ে ওঠে।  কিন্তু ধীরে ধীরে সে অবস্থা হ্রাস পেতে থাকে।  বিগত তিন বছর আগেও চিংড়ি শিল্প ছিল দেশের দ্বিতীয় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী শিল্প।  বর্তমানে খুলনায় যে ২৪টি এবং চট্টগ্রামে ৪টি মাছ কোম্পানি রয়েছে অদূর ভবিষ্যতে সেগুলো থাকবে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।  এজন্য ইউরোপীয় বাজার ধরে রাখতে সরকারি-বেসরকারি পলিসি গ্রহণ জরুরি।

এমজেড/ এমএএস/পিআর