বগুড়ায় বেড়েই চলেছে অনুমোদনহীন সুউচ্চ ভবন
বগুড়ায় পৌরসভার অনুমোদন ছাড়াই গড়ে ওঠা অধিকাংশ সুউচ্চ ভবন এখন রয়েছে ভূমিকম্প ঝুঁকিতে। তবে গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি নিয়ে যথাযথ তদারকি নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। মাত্র ৫ বছরের ব্যবধানে বগুড়া শহরে সুউচ্চ ভবন গড়ে উঠেছে দুইশোরও বেশি। এর মধ্যে ৯০ ভাগ ভবনেই ভূমিকম্প ঝূঁকি কাটিয়ে ওঠার কোনো ব্যবস্থা নেই।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, যেখানে বগুড়া পৌরসভার অনুমোদন ক্ষমতা মাত্র ৬ তলার, সেখানে বগুড়া শহরে ৮ থেকে ১২ তলার ভবন রয়েছে ২ শতাধিক।
পৌরসভা সূত্র জানায়, তাদের কাছে থেকে অনুমোদন নেয়া হয় ৪ থেকে ৬তলা ভবনের। পরে দেখা যায় সেই ভবনই ৮-১০ তলা হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে পৌরসভার নির্দেশনাও কেউ মানে না। এর আগে ভূমিকম্পে বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্রে দুইটি ভবন হেলে যায়। গত ৫ বছরেও এই ভবন দুইটির নকশাসহ বৈধ কাগজপত্র মালিকপক্ষ কিংবা পৌরসভার সংশ্লিষ্ট বিভাগ দেখাতে পারেনি। ঠিক একই অবস্থা ঝূঁকিপূর্ণ অধিকাংশ ভবনের।
ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠিত ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি ‘অ্যাড্রেস ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ বেশ কয়েকটি সুউচ্চ ভবনের নির্মাণ করছে বগুড়া শহরে। এই প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার প্রকৌশলী জিএম বায়োজিত জানান, একটি ৪তলা ভবনের অনুমোদন নিয়ে পরে সেই ভবনটিকে ৬/৭ তলায় রূপান্তর করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ন একটি কাজ। বগুড়া শহর আধুনিক করার পর এ ধরনের প্রবনতা অনেকের মধ্যে রয়েছে।
ভূমিকম্প প্রসঙ্গে তিনি জানান, আমাদের দেশে যেসব হাইটেক ভবনে ভূমিকম্প রুলস মানা হয় সেগুলোর ডিফারেনশিয়াল সেটেলমেন্ট ঠিক রাখা হয়। কারণ খুঁটি লোড না নিলে ভবনটি ডেবে যাবে এটাই স্বাভাবিক। এটা যথাযথ ভাবে মানা হলে ৭ রিকটর স্কেলে ভূমিকম্প হলেও ভবনটি রক্ষা পাবে।
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের ক্ষেত্রে আরো একটি বড় অন্তরায় হিসেবে উল্লেখ করেন, মাটির প্রপার টেস্ট না করা এবং ভবনের উপরে অবৈধ ভাবে মোবাইল টাওয়ার ও বিলবোর্ড স্থাপন করাকে।
অধিকাংশ সময় দেখা যায় যে ভবনের উপরে টাওয়ার বা বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে সেটি ভূমিকম্প সহ্য করার করার ক্ষমতা রাখে না। সেক্ষেত্রে অতি মাত্রায় ভবনটি দুললে তা ডেবে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে শতভাগ।
পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ভবন নির্মাণের ব্যাপারে পৌরসভা থেকে নকশা করে নেয়া হলেও ভবনের মালিকরা তা অমান্য করে থাকেন। দু’টি ভবন নির্মাণের সময় উভয় পাশে ৩ ফুট করে ৬ ফুট স্থান ছাড়ার কথা থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা ছাড়া হয়না। গাড়ি পার্কিং’এর জায়গা না ছেড়ে সানশেড বা ব্যালকুনি রাস্তার ওপর নির্মাণ করা হয়ে থাকে। বিল্ডিং নির্মাণের আগেই ফায়ার সার্ভিস থেকে অনুমোদন নেয়ার নিয়ম থাকলেও তা করা হয় না।
এছাড়া ৫ ফুট সড়কের পাশে সর্বোচ্চ দু’তলা করার বিধান রয়েছে। আর সেখানে বগুড়া পৌর এলাকায় ৬ থেকে ১২ তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া ইমারত নির্মাণে ভূমি ব্যবহার নীতিমালা, ভূমিকম্প নিধোরক ব্যবস্থা, বৈদ্যুতিক লাইন থেকে ইমারতের দূরত্ব রাখার বিধান থাকলে সেসব মানা হয় না।
পৌর এলাকার মধ্যে অভিজাত এলাকা বলে পরিচিত নিশিন্দারা উপশহর, মালতিনগর, রহমাননগর, জলেশ্বরীতলা ও সূত্রাপুর এলাকায় অধিকাংশ ভবনগুলোই নির্মাণের ক্ষেত্রে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা মানা হয়নি। এ সব ভবনের বিরুদ্ধে পৌরসভার অভিযানও কোনোদিন হয়নি।
শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকায় ডলফিন হাউজিং'এর ৯তলা ডলফিন টাওয়ার এর একটি উদাহরণ। আবাসিক এবং ঘিঞ্জি এলাকায় মাত্র ১৬ ফুট সড়কের সামনে ৯তলা এই ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
পৌর চেয়ারম্যান অ্যাড. মাহবুবুর রহমান জানান, নিয়ম না মানার প্রবনতা দিনদিন বেড়েই চলেছে। এ ক্ষেত্রে স্বল্প জনবল নিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষ একেবারেই অসহায়। কোনো অভিযান চালালে স্থাপনার মালিক আদালতের শরণাপন্ন হয়। এক্ষেত্রে পরবর্তী নির্দেশ না পেলে আর কিছুই করা যায় না।
লিমন বাসার/এফএ/জেআইএম