সুস্থ অবস্থায় ছেলেকে চান বাবা-মা
লক্ষ্মীপুরে ইসমাইল হোসেন ওরফে মুন্সি (২২) নামের এক যুবককে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিনি সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের গনেশ্যামপুর গ্রামের কৃষক আহম্মদ উল্লার ছেলে।
ইসমাইলের পরিবারের অভিযোগ, সুস্থ অবস্থায় তাকে ফিরিয়ে দিতে হলে পুলিশ পঞ্চাশ হাজার টাকা দাবি করে পরিবারের কাছে। এ দাবির প্রেক্ষিতে পয়ত্রিশ হাজার টাকা দিতে সম্মত হন তারা। পরদিন জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয়ের সামনে টাকা লেনদেন হওয়ার কথা। কিন্তু হঠাৎ বেঁকে বসেন মুন্সিকে গ্রেফতার করা চন্দ্রগঞ্জ থানার দত্তপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর হোসেন।
পরবর্তীতে নানা নাটকীয়তার পর পুলিশ জানায়, তারা ইসমাইল হোসেন মুন্সি নামের কাউকে গ্রেফতার করেনি। এ বিষয়ে তারা কিছুই জানে না। এরপর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, চন্দ্রগঞ্জ থানা, জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) শাখা এবং পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পরিবারের সদস্যরা খোঁজ নিলেও তার সন্ধান পাননি। এরপর থেকে সোমবার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চারদিনেও মুন্সির খোঁজ মেলেনি।
অবশ্য পুলিশ বলছে, ইসমাইলের সঙ্গে সন্ত্রাসী গোষ্ঠির সখ্যতা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
এদিকে ইসমাইলের পরিবারের দাবি, প্রকাশ্যে তাকে গ্রেফতার করা হলেও পুলিশ রহস্যজনক কারণে এখন তা অস্বীকার করছে। অপরাধী হলেও তাকে আদালতে হাজির করা হোক। ছেলের চিন্তায় বৃদ্ধ মা-বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তারা ছেলের মরদেহ হলেও ফেরত পেতে আকুতি জানিয়েছেন।
এর আগে নিখোঁজের সাতদির পর গত বুধবার লক্ষ্মীপুর পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলমের (২৮) অর্ধগলিত বস্তাবন্দি মরদেহ সদর উপজেলার পেয়ারাপুর খালে পাওয়া যায়। খোরশেদের পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ জেলা আদালত এলাকা থেকে লোকজনের সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করার পর তা স্বীকার করেনি। পরে তাকে হত্যার পর মরদেহ খালে ফেলে দেয়া হয়। অবশ্য পুলিশ খোরশেদকে ১১ মামলার আসামি বললেও তাকে গ্রেফতার ও হত্যার অভিযোগ শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছে।
প্রত্যক্ষদর্শী, মুন্সির পরিবার ও স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ইসমাইলকে দত্তপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সামন থেকে গ্রেফতার করে। এরপর তিনি তাকে দত্তপাড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখানে তাকে ঘণ্টাখানেক রাখা হয়। পরে ডিবি পুলিশের কাছ হস্তান্তর করা হলে ইসমাইলকে একটি মাইক্রোবাসে করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর স্থানীয় চাঁদপুর গ্রামের সিএনজি চালিত অটোকিশা চালক শরিফের মাধ্যমে খবর দেয়া হয় পরিবারের সদস্যদের।
বিকেলে মুন্সির বোন সালমা আক্তার রিনা ও শামিমা আক্তার তাদের ভাগিনা রনিকে নিয়ে পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে আসেন। সেখানে আগ থেকেই উপস্থিত ছিলেন সিএনজি চালক শরিফ। এসময় তাদের হাত থেকে মোবাইল ফোন সেট চেয়ে নিজের হাতে নেন জাহাঙ্গীর। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, আপনার ভাইকে কিভাবে পেতে চান। জীবিত না মৃত। এ বলেই শরিফের সঙ্গে বলা বলার জন্য ইঙ্গিত করেন তিনি। এসময় সুস্থ অবস্থায় মুন্সিকে ফেরত দিতে ৫০ হাজার টাকা তাদের কাছে জাহাঙ্গীরের উপস্থিতিতেই দাবি করেন শরিফ।
মুন্সির বোন জাগো নিউজকে জানান, ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে এসপি অফিসের সামনে গেলে সিএনজি চালক শরিফ তাদের কাছে এসে জানান, জাহাঙ্গীর স্যার ব্যস্ত। তার কাছে টাকা দিতে বলেছে। ভাইকে সুস্থ না দেখে টাকা দেবেন না বললে শরিফ জানায়, তাকে আদালতে পাঠানো হবে।
ইসমাইলের বাবা আহম্মদ উল্লা জাগো নিউজকে বলেন, আমার ছেলেকে সুস্থ অবস্থায় ফেরত চাই। পুলিশ দিনের বেলায় লোকজনের সামন থেকে তাকে গ্রেফতার করে দত্তপাড়া তদন্তকেন্দ্রে নিয়ে গেছে। ছেলে অপরাধী হলে তাকে আদালতে হাজির করা হোক। না হয় মৃত হলেও আমার ছেলের মরদেহ চাই।
এ ব্যাপারে সিএনজি চালক শরিফের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। দত্তপাড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের এসআই জাহাঙ্গীর হোসেন জাগো নিউজকে জানান, আমি মুন্সি নামের কাউকে গ্রেফতার করিনি। অন্য কেউ করেছে কিনা তা আমার জানা নেই। তার উপস্থিতিতে পঞ্চাশ হাজার টাকা দাবি করা প্রসঙ্গে তিনি জানান, তাও আমি জানি না। মুন্সির বিরুদ্ধে কয়টি মামলা রয়েছে জানতে চাইলে কাগজ-পত্র দেখে বলতে হবে বলে জানান তিনি।
জেলা সহকারী পুলিশ সুপার (সদর) মো. জুনায়েত কাউছার জাগো নিউজকে জানান, ইসমাইল হোসেন মুন্সি সন্ত্রাসী গোষ্ঠি জসিম বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে প্রসঙ্গে কথা তুললেই ওই পুলিশ কর্মকর্তা তখন ছুটিতে ছিলেন বলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) শাহ মিজান সাফিউর রহমান জাগো নিউজকে জানান, মুন্সি নামের এক তালিকাভুক্ত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী রয়েছে। তাকে পুলিশ গ্রেফতার করেনি। তাকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। পুলিশের বিরুদ্ধে টাকা দাবির অভিযোগ ওই সন্ত্রাসী পরিবারের কৌশল। সন্ত্রাসীদের পরিবার নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে নানা নাটক সাজায়।
কাজল কায়েস/এমজেড/এমএস
সর্বশেষ - দেশজুড়ে
- ১ টাঙ্গাইলে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩ শিক্ষার্থী নিহত
- ২ ভেকু দিয়ে নির্মাণাধীন রাস্তা কাটলেন আওয়ামী লীগ নেতা
- ৩ মা হলো ধর্ষণের শিকার কিশোরী, তিন মাসেও আসামিকে ধরতে ব্যর্থ পুলিশ
- ৪ সুদের টাকা আদায়ে ব্যবসায়ীর নামে আওয়ামী লীগ নেতার ১৯ মামলা
- ৫ নিজ বাড়িতে ‘যৌনকর্মীদের’ আশ্রয়, জামায়াত নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার