টেনশনে হেভিওয়েট প্রার্থীরা
লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন। তাদের সঙ্গে কেন্দ্র থেকে দলের দুই সঙ্গী প্রার্থীর নামজুড়ে দেয়া হয়েছে।
এতে দলগুলোর নেতাকর্মী ও সমর্থকরা রয়েছেন সিদ্ধান্তহীনতায়। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে বিভক্ত হয়ে অনেকে পছন্দের প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণা করছেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির চূড়ান্ত প্রার্থী নির্ধারণ হলে শক্তির মহড়ায় নামবেন নেতাকর্মীরা। এতে জমে উঠবে ভোটের মাঠ।
দলীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের এ আসনে মনোনয়ন দেয়া হয় পর্যটনমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকুকে। শাহজাহান কামাল এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। বিএনপি থেকে মনোনয়ন পান কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাহাবুদ্দীন সাবু। শহীদ উদ্দিন চৌধুরী সাবেক সংসদ সদস্য।
চন্দ্রগঞ্জ ও মান্দারীর ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ আসনের পূর্বাঞ্চলের চন্দ্রগঞ্জে বিএনপি সরকারের আমলে গড়ে ওঠা ছোট-বড় ২২টি সন্ত্রাসী বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে রাজত্ব করেছে। রাজনৈতিক মদদে এসব বাহিনী প্রতিযোগিতা দিয়ে হত্যা, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, অপহরণ ও লুটপাটসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে। তাদের হাতে বিপুল সংখ্যক অবৈধ অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র মজুত ছিল। সন্ত্রাসীদের কাছে লক্ষাধিক মানুষ জিম্মি ছিল। ২০১৪ সালে সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণের জন্য ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ ও পুলিশ-র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় তা ইতোমধ্যে নিয়ন্ত্রণে এসেছে। অবশ্য এর জন্য শাহজাহান কামাল ও আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম ফারুক পিংকুর আন্তরিকতা ছিল। আধিপত্য নিয়ে নিজেদের মধ্যে এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে ২২টির মধ্যে ১৮ বাহিনীর প্রধানরা নিহত হয়েছে। অবশ্য সন্ত্রাসীদের হাতে থাকা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। উন্নয়ন সাফল্যের সঙ্গে ভোটের মাঠে সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ আওয়ামী লীগের জন্য ইতিবাচক হিসেবে গণ্য হবে। এছাড়া নির্বাচনের মাঠে বিএনপির ভরসা এখন প্রতীক। পাশাপাশি ২০০১ ও ২০০৮ সালে এমপি থাকাকালে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী নির্বাচনী এলাকার তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের কাছাকাছি পৌঁছেছেন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, এ আসনে ১২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের এ কে এম শাহজাহান কামাল, গোলাম ফারুক পিংকু, বিএনপির শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সাহাবুদ্দিন সাবু, স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ সাত্তার, জেএসডির সৈয়দ বেলায়েত হোসেন বেলাল, গণফোরামের আ ও ম শফিক উল্যা, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির নুর মোহাম্মদ, এনডিএমের মোহাম্মদ উল্যা, ইসলামী আন্দোলনের মোহাম্মদ ইব্রাহীম, জাসদের এম এ ইউছুফ ভূইয়া ও এনপিপির সেলিম মাহমুদ।
সদর উপজেলার তিনজন ইউনিয়ন (ইউপি) পরিষদের চেয়ারম্যান জানান, এ নির্বাচনী এলাকায় আগে বিএনপির শক্ত অবস্থান ছিল। তারা সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে রাজত্ব করেছে। এ জন্য সাধারণ মানুষ বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। গোলাম ফারুক পিংকু জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তিন বছর ধরে তৃণমূল পর্যায়ে দলকে সংগঠিত করেছেন। এর সঙ্গে সরকারও দৃশ্যমান বেশ কিছু উন্নয়ন করেছেন। এ কারণে আওয়ামী লীগ ভোটের হিসাবে অনেক এগিয়েছে।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, আমাদের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। আমাদের ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে। ভোটাররা যদি শান্তিপূর্ণভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, তাহলে আমাদের বিজয় নিশ্চিত।
জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু বলেন, আমার নির্বাচন করার জন্য সদরের পূর্বাঞ্চলের ৮টি ইউনিয়নের মানুষ দলমত নির্বিশেষে একাট্টা হয়েছে। এটি আমার ১৮ বছরের সাধনা। দল জনমত ও বাস্তবতার বিচার-বিশ্লেষণ করলে আমার ধারেকাছে অন্য প্রার্থী নেই। জনগণের আস্থা আর ভালোবাসা নিয়ে বিপুল ভোটে আমি জয়ী হব।
কাজল কায়েস/এএম/জেআইএম