ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

তলিয়ে গেছে ঝুলন্ত ব্রিজ

প্রকাশিত: ১২:৩৩ পিএম, ১৯ আগস্ট ২০১৫

কয়েক দিন হালকা বৃষ্টিপাতের পর বুধবার থেকে রাঙামাটিতে ফের ভারি বর্ষণ হচ্ছে। এতে হঠাৎ করে কাপ্তাই লেকের পানির উচ্চতা আরও বেড়ে গেছে। বর্তমানে লেকে পানির উচ্চতা অস্বাভাবিক পর্যায়ে।

অন্যদিকে, বর্ষণে কাপ্তাই লেকের পানি বাড়ায় প্লাবিত হয়েছে রাঙামাটির বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন শহরসহ জেলার কয়েক হাজার পরিবার। বর্ষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জনজীবন। ঝুলন্ত ব্রিজটিও লেকের পানিতে তলিয়ে রয়েছে।

কাপ্তাইয়ে অবস্থিত কর্ণফুলি পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আব্দুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, কাপ্তাই লেকের রুলকার্ভ অনুযায়ী লেকে স্বাভাবিক নিয়মে পানি ধরে রাখা যায় ৯০ ফুট বা এমএসএল (মীন সি লেভেল) উচ্চতায়। এ সীমা অতিক্রম করলে অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে যায়। চলতি বর্ষা মৌসুমে ভারি বর্ষণে কাপ্তাই লেকে দ্রুত পানি বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক সীমা অতিক্রম করে তা ১০৫ ফুট লেভেলে চলে যায়। পানির চাপ কমাতে পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্প্রিলওয়ে খুলে দিয়ে অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ফের বর্ষণ হওয়ায় লেকের পানি আবারও অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে গেছে।

তিনি জানান, লেকের সর্বোচ্চ পানি ধারণক্ষমতা ১০৯ ফুট। এর কাছাকাছি গেলে বিপদসীমা। বর্তমানে লেকে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৫ ফুট পানি অতিরিক্ত রয়েছে।

তিনি আরও জানান, লেকে অতিরিক্ত পানির চাপ কমাতে রাত দিন পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সবগুলো ইউনিট সচল রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। বর্তমানে দৈনিক সর্বোচ্চ ২৩৭ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে কেন্দ্রে। ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ওই কেন্দ্রের মোট পাঁচ ইউনিট দিয়ে স্বাভাবিকের চেয়েও অধিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে।

এদিকে সাম্প্রতিক বর্ষণে সীমান্তের ওপার থেকে অবিরাম নামা পাহাড়ি ঢলে জেলার বিভিন্ন স্থানে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। কাপ্তাই লেকে অতিরিক্ত পানি বাড়ায় এবং আকস্মিক বন্যায় শহরসহ জেলা সদর, বাঘাইছড়ি ও বরকলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। শহরসহ জেলায় কয়েক হাজার পরিবারের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে।
দেখা গেছে, কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে যাওয়ায় শহর এলাকার রিজার্ভ বাজার, পুরানবস্তি, জেলেপাড়া, মুসলিমপাড়া, জুলুক্যা পাহাড়, চেঙ্গিমুখ, ডিসি বাংলো সংলগ্ন, এসপি অফিস সংলগ্ন এলাকা, ফিশারিঘাট, শান্তিনগর, গর্জনতলী, পুলিশ লাইন, কেরানি পাহাড়, তবলছড়ি, ওয়াপদা কলোনি, আসামবস্তি, মাঝের বস্তি, কলেজগেট, রাজবাড়ি, পাবলিক হেলথ এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অনেক বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অসংখ্য পরিবারের মানুষ।

এছাড়াও জেলা সদর, বরকল, লংগদু, বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়ি ও নানিয়ারচর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ায় নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী লোকজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এতে কয়েক হাজার পরিবার গৃহহারা হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, বন্যার কবলে কাপ্তাই লেকে দ্রুতবেগে পাহাড়ি ঢল নামায় জেলার বিভিন্ন রুটে নৌ-যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। রাঙামাটি-মাইনি-বাঘাইছড়ি, রাঙামাটি-বরকল-ছোটহরিণা, রাঙামাটি-জুরাছড়ি, রাঙামাটি-বিলাইছড়ি এবং রাঙামাটি-নানিয়ারচর নৌ-রুটে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।

এদিকে সাস্প্রতিক বর্ষণে রাঙামাটির জনজীবন প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। দুর্ভোগে পড়েছেন অসংখ্য মানুষ। মাঝারি, হাল্কা ও ভারি বর্ষণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা এখন বিপর্যস্ত। শহরসহ বিভিন্ন জায়গায় ভূমি ও পাহাড় ধস অব্যাহত রয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে অসংখ্য বাড়িঘরসহ বহু ফসলি জমি। রাঙামাটি শহরের পর্যটন এলাকায় অবস্থিত মনোরম ঝুলন্ত ব্রিজটি এখনো কাপ্তাই লেকের পানিতে তলিয়ে রয়েছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বাঘাইছড়ি উপজেলা সদরের মুসলিম ব্লক, মধ্যামপাড়া, হাজীপাড়া, মাস্টারপাড়া, মাদ্রাসাপাড়া, বটতলী, উগলছড়ি, লাইল্যাঘোনা, ব্যাপারিপাড়া, পূূর্ব মাদ্রাসাপাড়া আকস্মিক বন্যার কবলে পড়ে ওইসব এলাকার ঘরবাড়ি তলিয়ে হাজারও পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে সহায়তা দিতে বিভিন্ন স্কুলে আশ্রয় কেন্দ্র খুলেছে। দুর্গত লোকজনের সহায়তায় ত্রাণ তৎপরতা চলছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

সুশীল প্রসাদ চাকমা/এমজেড/আরআইপি