ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

মা- অনেক দিন হয়ে গেছে, তোমাকে দেখি না

জেলা প্রতিনিধি | লক্ষ্মীপুর | প্রকাশিত: ০৮:৪১ পিএম, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

‘মা জানো, আজ অনেকদিন হয়ে গেছে, তোমাকে দেখি না। মা আমি এখন অনেকটা বুঝতে শিখেছি। কি করব বলো, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে যে। আমি যখন কাঁদি তখন কাউকে দেখায় না।’

এমন হৃদয় বিদারক কথাগুলো লিখেছেন মা-হারা কলেজ শিক্ষার্থী স্মৃতি মিজি তামান্না। মাকে এই চিঠি লিখে লক্ষ্মীপুরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভাষার প্রদীপ আয়োজিত ‘মায়ের ভাষায় মাকে চিঠি লেখা’ প্রতিযোগিতায় সবার সেরা হয়েছেন তিনি।

শনিবার লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে চিঠি লেখা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে তামান্না আসতে পারবে না জেনে নিজের কণ্ঠে চিঠির ভয়েস রেকর্ডিং করে সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক ফাহাদ বিন বেলায়েতের কাছে পাঠান।

ওই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব এ কে এম টিপু সুলতান ও সভাপতি মাইনউদ্দিন পাঠানসহ উপস্থিত সবাইকে রেকর্ডিংটি শুনানো হয়। তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে চিঠির ভাষাগুলো শুনে মনের অজান্তে সবার চোখের কোন পানি এসে যায়। লেখাটি সত্যিই খুব হৃদয় বিদারক।

জানা গেছে, তামান্না জেলার রায়পুর রেসিডেন্সিয়াল কলেজের এইচএসসির ছাত্রী। গত বছর তার মা মারা যান। অল্প বয়সে মাকে হারানোর ব্যথা সহ্য করা খুবই কষ্টকর। সেই অভিব্যক্তি তিনি তার মাকে নিয়ে লেখা চিঠিতে প্রকাশ করেছেন। তার পারিবারিক সমস্যা থাকার কারণে পুরো পরিচয় দিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি। যার কারণে শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কারটি নিতেও অনুষ্ঠানে আসেননি তিনি।

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তামান্নার ভয়েস রেকর্ডিংটিতে শোনা যায়, ‘মা জানো, আজ অনেকদিন হয়ে গেছে, তোমাকে দেখি না। মা আমি এখন অনেকটা বুঝতে শিখেছি। কি করব বলো, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে যে। আমি যখন কাঁদি তখন কাউকে দেখাই না। আমি কেন কাউকে আমার কষ্ট দেখাব। আমার তো আর মা নেই। কেউ আমার কষ্ট দেখলে আমিও কষ্ট পাব, সেও কষ্ট পাবে।

আমি না, এখন আর দুষ্টুমি করি না। এখন আর আগের মতো অভিমানও করি না। বায়না, আবদার কিছুই করি না। আমি জানি, যার মা নেই তার এসব বায়না থাকতে নেই। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি মা। খুব ভালোবাসি। কেন চলে গেছো তুমি। আমাকে কেন নিয়ে গেলে না। বিশাল পৃথিবীতে আমি খুব অসহায়। তুমি ছাড়া যে ভালো লাগে না। আমি চেষ্টা করি মাবিহীন জীবনটা কাটিয়ে দিতে। কিন্তু আমি পারি কই। আমি পারি না মা। মাঝেমধ্যে তো খুব শূন্য লাগে। বুকের বাম পাশটায় খুব ব্যথা করে। কেমন যেন একটা হাহাকার।

আমিতো কাউকে বলতেও পারি না। জানো, ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। আচ্ছা, তোমার শূন্যতায় যদি এত কষ্ট, তাহলে মৃত্যু হয় না কেন। মরে যেয়েও তো সুখ হবে। পৃথিবীতে মা ছাড়া একটি মুহূর্তও কাটা যায় না। ভালো থাকা যায় না মা। প্লিজ মা, আর একটা বার ফিরে আসো। তুমি তোমার খোদাকে বলো, আমাকে যেন নিয়ে যায়। আমাকে যেন নিয়ে যায় মা। আমাকে...।’

আয়োজকরা জানান, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভাষার প্রদীপের আয়োজনে ‘মায়ের ভাষায় মাকে চিঠি লেখা’ প্রতিযোগিতার এটি চতুর্থ আসর ছিল। এবার জেলার ২১টি বিদ্যালয়ের দুই হাজার ২০০ শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। প্রতিযোগীদের মধ্যে ১০০ জন বিজয়ীকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়জন শ্রেষ্ঠ হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন। সবার মধ্যে সেরা হয়েছেন স্মৃতি মিজি তামান্না।

কাজল কায়েস/এএম/পিআর

আরও পড়ুন