ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশ নেই, পালিয়ে বেড়াচ্ছেন জেলেরা

জেলা প্রতিনিধি | ভোলা | প্রকাশিত: ০৪:৩৪ পিএম, ১১ অক্টোবর ২০২০

সেপ্টেম্বর থেকে ভরা মৌসুম শুরু হলেও ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে দেখা মিলছে না ইলিশের। নদীতে ইলিশ শিকার করতে না পেরে বিভিন্ন এনজিও এবং মহাজনের কাছ থেকে ধারদেনা করে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন জেলেরা। অনেক জেলে নদীতে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। কেউ কেউ দেনা পরিশোধের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

তবে সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। কিন্তু সাগর উত্তাল থাকায় ভয়ে মাছ শিকারে যাচ্ছেন না জেলেরা। ফলে কষ্ট করে দিন কাটাচ্ছেন তারা। জেলেদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের তুলাতুলি গ্রামের জেলে মো. মনির হোসেন বলেন, গত বছর এ সময়টাতে নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরেছি। কিন্তু এ বছর দিন-রাত জাল ফেলে ৪-৫টা ইলিশ পাচ্ছি। এতে সংসার চালানো তো দূরের কথা খরচের টাকাও উঠছে না।

একই গ্রামের দুলাল মাঝি বলেন, আমরা করুণ অবস্থায় আছি। এনজিও এবং মহাজনের কাছ থেকে নেয়া ঋণ পরিশোধ করতে পারছি না। দেনা পরিশোধ করতে না পেরে অনেক জেলে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কেউ কেউ নদীতে জাল ফেলা বন্ধ করে দিয়েছেন। কারণ নদীতে মাছ পাওয়া যায় না।

Bhola-Jale

ওমর ফারুক বলেন, নদীতে ইলিশ নেই। তবে সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। সাগর উত্তাল থাকায় ভয়ে মাছ শিকারে যেতে পারছি না। খুবই কষ্ট করে সংসার চলছে আমাদের।

সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ব্যাংকেরহাট এলাকার আল-আমিন মাঝি বলেন, প্রতি বছর সরকারের নিষেধাজ্ঞার আগে নদীতে প্রচুর মাছ ধরা পড়তো। প্রতিটি মাছের পেটে ডিম থাকতো। কিন্তু এ বছর নদীতে ইলিশ নেই। ৪-৫ টা ধরা পড়লেও ডিম নেই। কাজেই আগেভাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সফলতা আসবে বলে মনে হয় না।

ধনিয়া ইউনিয়নের তুলাতুলি গ্রামের জেলে মঞ্জুর আলম বলেন, আগামী ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত সরকার নিষেধাজ্ঞা দেবে। অথচ মাছের পেটে ডিম আসেনি এখনও। নিষেধাজ্ঞা যদি সফল না হয়।

তিনি বলেন, ইলিশ যদি নিষেধাজ্ঞার সময় ডিম ছাড়তে না পারে তাহলে নদীতে মাছের উৎপাদন হবে না। আমরা পরবর্তীতে নদীতে ইলিশ পাব না। যার ফলে ভবিষ্যতে আমাদের না খেয়ে জীবন-যাপন করতে হবে। তাই আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই- নিষেধাজ্ঞা আরও ১০ দিন পিছিয়ে দেয়া হোক।

Bhola-Jale-1

তুলাতুলি মৎস্যঘাটের মাছ ব্যবসায়ী মো. হোসেন মিয়া বলেন, মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীর ওপর নির্ভর করে ভোলার সাত উপজেলার কয়েক লাখ জেলে ও হাজার হাজার মৎস্যজীবীর সংসার চলে। কোনো কারণে এ বছর যদি অভিযান সফল না হয় তবে নদীতে ইলিশের সঙ্কট দেখা দেবে। তখন জেলে ও মৎস্যজীবীদের পথে নামতে হবে। তাই নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি সরকারকে পুনর্বিবেচনার দাবি জানাই।

ভোলা সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, নদীতে বর্তমানে জো না থাকায় ইলিশের পরিমাণ কম। তবে দু’তিনদিনের মধ্যে আবার জো আসবে। তখন জেলেরা নদীতে ইলিশ ধরতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, ভোলার জেলেরা প্রতি বছর সরকারের নিষেধাজ্ঞার সময় পিছিয়ে দেয়ার দাবি জানান। তাদের মতে এটি সঠিক সময় না। মূলত জেলে ও গবেষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে ইলিশ প্রজনন মৌসুম নির্ধারণ করা হয়। সেই সঙ্গে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ বছর একইভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অভিযান পিছিয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। তবে আগামী বছর আরও বেশি জেলে, মৎস্য ব্যবসায়ী ও গবেষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে নিষেধাজ্ঞার সময় নির্ধারণ করব।

চলতি বছর ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মোট ২২ দিন ইলিশসহ সব ধরনের মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ১৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মৎস্য ভবনে মৎস্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

জুয়েল সাহা বিকাশ/এএম/পিআর