ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন থেকে বিজিবি

জেলা প্রতিনিধি | খাগড়াছড়ি | প্রকাশিত: ১০:১৩ এএম, ২০ ডিসেম্বর ২০২০

ছয় পাউন্ড গোলার ৪টি কামান এবং দুটি অনিয়মিত অশ্বারোহী দল নিয়ে ২২৫ বছর আগে ১৭৯৫ সালের ২৯ জুন পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়ির সাবেক মহকুমা শহর রামগড়ে রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন নামে যাত্রা শুরু করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সপ্তদশ শতকের শেষভাগে পার্বত্য চট্টগ্রামে লুসাই বিদ্রোহ দেখা দিলে এ এলাকা রক্ষায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ‘রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন’ গঠন করে।

৪৪৮ জন সৈন্য নিয়ে ‘রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন’ নামে যাত্রা শুরু করা এ ব্যাটালিয়ন আজ দেশের সীমান্ত রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করছে।

ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা রামগড়ে বিজিবির সুদীর্ঘ বছরের সেই গৌরবোজ্জ্বল জন্ম ইতিহাসকে অম্লান রাখতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘রাইফেলস স্মৃতিস্তম্ভ’।

স্মৃতিস্তম্বের বেদীতে বিজিবির জন্মের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লেখা ছাড়াও পোড়া মাটি দিয়ে তৈরি এ বাহিনীর বিবর্তনের ৮টি অবয়ব বা টেরাকোটা স্থান পেয়েছে।

২০০৫ সালে তৎকালীন ৩৩ রাইফেল ব্যাটালিয়ন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবির সুতিকাগার রামগড়ে দৃষ্টিনন্দন এ স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়। যা ওই বছরের ৬ জুন বাংলাদেশ রাইফেলসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী উদ্বোধন করেন।

BGB-Dibas-News-Pic-04.jpg

সেই থেকে খাগড়াছড়িতে আগত পর্যটকরা রামগড় সদরের ভারত সীমান্তঘেঁষা অফিস টিলা এলাকায় অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন এ বিশাল ‘রাইফেলস্ স্মৃতিস্তম্ভ’ ঘুরে দেখেন আর জেনে নেন এ বাহিনীর সুদীর্ঘকালের গৌরবময় ইতিহাস।

সময়ের পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে ১৭৯৫ সালে ‘রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন’ নামে বাহিনীটির গোড়াপত্তন হওয়ার পর এ বাহিনীতে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। এ বাহিনীর বহরে ভারী অস্ত্রশস্ত্র যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি পরিবর্তন হয় বাহিনীটির নামও। আর পরিবর্তন এসেছে পোষাকেও। সময়ের তাগিদে বৃদ্ধি পেয়েছে জনবল আর শক্তি সামর্থ।

১৭৯৫ সালে যাত্রা শুরু করে ১৮৬০ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘ ৬৫ বছর ‘রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন’ নামেই এ বাহিনীর কার্যক্রম চললেও ১৮৬১ সালে নিয়মিত-অনিয়মিত পুলিশ বাহিনীর সমন্বয়ে প্রথমবারের মতো পুনর্গঠিত হয় রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন। তখন এ বাহিনীর নামকরণ হয় ‘ফ্রন্টিয়ার গার্ডস’।

৪৪৮ জন থেকে বাড়িয়ে সৈন্য সংখ্যা উন্নীত করা হয় ১ হাজার ৪৫৪ জনে। অবস্থান পরিবর্তন করে তখন সদর দফতর ছিল চট্টগ্রামে। ওই সময় এ পার্বত্য এলাকায় লুসাই বিদ্রোহ চরম আকার ধারণ করলে ১৮৭১ সালে সৈন্য সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করা হয়। তখন লুসাই বিদ্রোহ দমন করে বাহিনীটি।

BGB-Dibas-News-Pic-04.jpg

পরবর্তী সময়ে ১৮৭৯ সালে ‘ফ্রন্টিয়ার গার্ডস থেকে ‘স্পেশাল রির্জাভ বাহিনী’ নামে এ বাহিনীর সদস্যরা পিলখানায় প্রথম ঘাঁটি স্থাপন করেন। সেই থেকে পিলখানাকে ঘিরেই রাইফেলসের সকল কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়ে আসছে।
১৮৯১ সালে ‘বেঙ্গল মিলিটারি পুলিশ ব্যাটালিয়ন’ নামে আবির্ভুত হয় পাহাড়ে জন্ম নেয়া এ বাহিনী। তখন ৪টি কোম্পানিতে বিভক্ত করা হয়। বাহিনীটির নাম আর পোশাক বদলের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় ১৯৪৭ এ ভারত বিভক্তির পর এ বাহিনীর ‘ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস বা ইপিআর’ নামে পুরোদমে কাজ শুরু করে।

সুদীর্ঘ পথপরিক্রমায় ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালের ৩রা মার্চ ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর) থেকে নাম বদল করে বাংলাদেশ রাইফেলস্ বা বিডিআর নামে আবির্ভুত হয়।

পরে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানা ট্রাজেডির পর ২০১০ সালের ৮ ডিসেম্বর মহান জাতীয় সংসদে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন-২০১০’ পাস হওয়ার মাধ্যমে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি নামে কাজ শুরু করে সীমান্তরক্ষী এ বাহিনী।

২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পতাকা উত্তোলন করেন। ওই বছর ২০ ডিসেম্বরকে বিজিবি দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবির জওয়ানদের আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে রামগড়ে রিক্রুটিং (লোক ভর্তি) কেন্দ্র এবং বিজিবির জাদুঘর স্থাপনের দাবি জানিয়েছে রামগড়ের সচেতন মহল।

মুজিবুর রহমান ভুইয়া/এফএ/এমএস