গা ঢাকা দিয়েছেন সৈয়দপুরে বঙ্গবন্ধুর নামে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি
সৈয়দপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চ্যান্সেলর (ভারপ্রাপ্ত) পরিচয়দানকারী অধ্যাপক ড. এবিএম শরিফুজ্জামান শাহ সম্প্রতি প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর ও শিক্ষকসহ বিভিন্ন পদে জনবল নিয়োগে একটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দেখানো হয়েছে নারী আসনের সংসদ সদস্য রাবেয়া আলীমকে। বিশ্ববিদ্যালয় অস্তিত্বহীন প্রকাশ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চ্যান্সেলর (ভারপ্রাপ্ত) পরিচয়দানকারী অধ্যাপক ড.এবিএম শরিফুজ্জামান শাহ ক্যাম্পাস গুটিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন।
এদিকে সৈয়দপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় নামে কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব নেই বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এমন নামের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় সরকার অনুমোদন দেয়নি বলেও জানিয়েছে কমিশন। একই সঙ্গে চাকরিপ্রত্যাশী ও শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে সর্তক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র সাংবাদিকদের বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় নামে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব সম্পর্কে কমিশন জানে না। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় নামক কোনো প্রকল্প প্রস্তাবও ইউজিসিতে পাঠানো হয়নি।’
শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও চাকরি প্রত্যাশীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ইউজিসি। ইউজিসির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা ও অনুমোদিত প্রোগামের তালিকা দেখে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কমিশন। অস্তিত্ববিহীন এ প্রতিষ্ঠানটির অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টদের সহায়তা চেয়েছে ইউজিসি। এ বিষয়ে শিগগিরই একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।
কমিশন বলেছে, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০’ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রত্যেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর মেয়াদে ভিসি, প্রো-ভিসি এবং কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেন। কাজেই এসব পদে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কাউকে নিয়োগ প্রদান করলে তা হবে সম্পূর্ণ আইন পরিপন্থী। এছাড়া উপাচার্যবিহীন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রোগ্রামের প্রদত্ত সাটিফিকেটও অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
ইউজিসির এমন বিজ্ঞপ্তির পর সৈয়দপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। সৈয়দপুর শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে লাগানে সাইনবোর্ড সরিয়ে দেয়া হলেও সৈয়দপুর দিনাজপুর বাইপাস সড়কের সাইনবোর্ডটি এখনো ঝুলছে। বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে অফিসে তালা দিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
সৈয়দপুর শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে কয়েক বছরের জন্য ঘরটি ভাড়া নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চ্যান্সেলর (ভারপ্রাপ্ত) পরিচয়দানকারী অধ্যাপক ড. এবিএস শরিফুজ্জামান শাহ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। তবে সরকারি খাসজমিতে একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানটির স্থান নির্ধারণ করা হয়। স্থান নির্ধারণের সময় সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রাবেয়া আলীম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রয়াত আখতার হোসেন বাদল, সাধারণ সম্পাদক মহসিনুল হক উপস্থিত ছিলেন।
সে সময় সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিনকেও কমিটিতে রাখা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য গঠন করা হয় একটি কমিটি।
তবে সৈয়দপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসা শুরু করায় আমি সরে এসেছি।’
এদিকে পত্রিকায় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর বিষয়টি ইউজিসির নজরে আসে। প্রতিটি পদের জন্য আবেদনের সঙ্গে ৫০০টাকার অফেরতযোগ্য ব্যাংক ড্রাফট চাওয়া হয় ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চ্যান্সেলর (ভারপ্রাপ্ত) পরিচয়দানকারী অধ্যাপক ড. এবিএম শরিফুজ্জামান শাহের সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি। এমনকি মোবাইল ফোন নম্বরটি বন্ধ থাকায় মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
জাহেদুল ইসলাম/এসআর