ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

নাটোরের রেলস্টেশনে ভারতীয় কিশোর, কীভাবে এল জানে না সে

জেলা প্রতিনিধি | নাটোর | প্রকাশিত: ০৩:৩১ পিএম, ১৯ এপ্রিল ২০২১

এক সপ্তাহ ধরে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার লোকমানপুর স্টেশনে অবস্থান করছে এক প্রতিবন্ধী কিশোর। সে কথা বলা ও চলাফেরা করতে না পারলেও লিখতে জানে। তার দাবি, তার বাড়ি ভারতে। সৎ ভাইয়েরা তাকে জোর করিয়ে তরল জাতীয় কিছু পান করান। এরপর থেকে সে আর কিছু মনে করতে পারছে না।

স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী কয়েকজন যুবক তার থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। অন্য এক ব্যক্তি দিয়েছেন একটি হুইল চেয়ার। ছেলেটি জানায়, তার তার নাম তামিম খান। বাবার নাম বিল্লাল খান। তার বাড়ি ভারতের মেদিনীপুরে। বাবা ব্যবসার জন্য কোচবিহারে থাকতেন। সেখানে সে মা–বাবার সঙ্গে থাকত। সেখানকার একটা স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ালেখা করত। হঠাৎ মা মারা যাওয়ার পর বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সৎমা ও ভাইয়েরা তাকে নির্যাতন করা করতেন। সম্প্রতি তার বাবা মারা গেছেন। এরপর থেকে তার ওপর নির্যাতন শুরু হয়। তাকে তরল কিছু খাইয়ে অচেতন করা হয়। এরপর সে কীভাবে এ দেশে ঢুকে পড়ে এবং লোকমানপুর রেলস্টেশনে আসে, তার কিছুই সে মনে করতে পারছে না।

লোকমানপুরের যেসব তরুণ তামিমের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাদের মধ্যে আশরাফুল আলম নামের একজন বলেন, ‘গত ১০ এপ্রিল সকালে রেলস্টেশনের নিচের রাস্তায় একটি ছেলেকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। ছেলেটি হাঁটতে ও কথা বলতে পারছিল না। তবে শুনতে ও বুঝতে পারছিল। পরনের পোশাক দেখে ধনাঢ্য ঘরের সন্তান বলেই তাদের ধারণা হয়। স্থানীয় কয়েকজন তরুণ ছেলেটিকে প্ল্যাটফর্মে তুলে এনে গোসল করান। পরে চিকিৎসককে দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। তখন সে ইশারা করে লেখার জন্য কাগজ-কলম চায়। এরপর লিখে সে তার পরিচয় জানায়।’

লোকমানপুরের শারীরিক প্রতিবন্ধী কালু মণ্ডল বলেন, ‘আমি হুইলচেয়ারে চলাফেরা করি। তেমন আর্থিক সংগতি নেই। তবু ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে ঠিক থাকতে পারিনি। আমার জমানো টাকা দিয়ে ওকে একটা হুইলচেয়ার কিনে দিয়েছি। এলাকার ছেলেরা ওকে প্ল্যাটফর্মে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। বিছানা, মশারি কিনে দিয়েছে। বাজারের ব্যবসায়ীরা পালা করে তার খাওয়া ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে। তবে উন্নত চিকিৎসা করা হলে ছেলেটি কথা বলতে ও হাঁটতে পারবে বলে মনে হচ্ছে।’

নিজ দেশে ফিরতে চায় কি-না জানতে চাইলে তামিম খান বলে, দেশে গেলে তাকে মেরে ফেলা হবে। তাই সে এখানকার মানুষের সহযোগিতায় বেঁচে থাকতে চায়। তার দাবি, সে সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল। তাকে বিষাক্ত কিছু খাওয়ানোর ফলে কথা বলার ও হাঁটার শক্তি পাচ্ছে না। চিকিৎসা পেলে সে সুস্থ হয়ে উঠবে।

এ বিষয়ে বাগাতিপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক বলেন, স্থানীয় লোকজনের কাছে তামিমের বিষয়ে তিনি জেনেছেন। বিষয়টি তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন। পুলিশ তার ব্যাপারে খোঁজখবর নিবে।

রেজাউল করিম রেজা/এসআর/জিকেএস