ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

কুমিল্লায় খাল ভরাট করে নির্মিত হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর

জেলা প্রতিনিধি | কুমিল্লা | প্রকাশিত: ১২:৩৬ পিএম, ১২ জুন ২০২১

কুমিল্লার দেবীদ্বারে প্রবাহমান খাল ভরাট করে নির্মিত হচ্ছে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প। খাল ভরাটে বন্যা ও জলাবদ্ধতাসহ ফসলী জমি বিলীনের আশঙ্কায় দিশেহারা এখানকার শত শত কৃষক। এছাড়াও দুর্ভোগে পড়বেন আশপাশের অন্তত ২০ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ভানী খাল ভরাট করে ৪০ গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য নির্মিত হচ্ছে আবাসস্থল। এর ফলে দেবীদ্বার উপজেলার ভানী, আছাদ নগর, খিরাইকান্দি, বখরিকান্দি, আন্দিরপাড়, মধ্যনগর, টেবারিয়াসহ প্রায় ২০ গ্রামের সাধারণ মানুষ এবং কয়েকশ কৃষক পরিবার দুর্ভোগে পড়বেন। দ্রুত এ খাল উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

ভুক্তভোগীরা জানান, উপজেলার ভানী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড ভানী গ্রামের মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর মাধ্যমে সারাদেশে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের ঘর ও জায়গা দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব তৈরি করে দেবীদ্বারের ভানী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান ব্যাপক অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন। যা প্রধানমন্ত্রীর এ উদ্যোগকে সাধারণ জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

ইউনিয়নের একাধিক স্থানে সরকারের খাস জমি থাকলেও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ইউপি চেয়ারম্যান ও কিছু অসাধু ব্যক্তির যোগসাজশে লাখ লাখ হেক্টর ফসলী জমির পানি নিষ্কাশনের একমাত্র খাল গোমতী নদীর শাখা ভানী খাল ভরাট করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এটি বাস্তবায়ন হলে কৃষি জমিতে পানির সেচ এবং বর্ষার পানি নিষ্কাশনসহ পানি চলাচলের রাস্তা বন্ধ হয়ে ফসলি জমি নষ্ট, জলাবদ্ধতা ও বন্যা সৃষ্টি হবে। এতে করে অপূরুনীয় ক্ষতি সম্মুখীন হবে কয়েকশ কৃষক পরিবার।

স্থানীয়দের অভিযোগ, আশ্রয়ণ প্রকল্পে গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণে ভরাটকৃত ভানী খাল পাড়ের সরকারি খাস জায়গাটি বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছিল ১৩ জন দরিদ্র ব্যক্তির মাঝে। বন্দোবস্তকৃত সম্পত্তির কাগজপত্র বাতিল না করেই ভেকু মেশিন দিয়ে ৮/৯ ফুট গভীর করে উক্ত প্রকল্পের জন্য মাটি কাটার কাজ করা হয়েছে। বন্দোবস্তকৃত সম্পত্তিতে মাটি কাটায় বাধা প্রদানে কোনো প্রকার আশ্বাস বা সান্ত্বনা না দিয়ে উল্টো মারধরসহ হত্যার হুমকি প্রদর্শন করা হয়েছে।

jagonews24

অন্যদিকে এই প্রকল্পের প্রয়োজনীয় মাটির জন্য প্রকল্প থেকে ৮০০ গজ উত্তরে জোরপূর্বক অবৈধভাবে স্থানীয়দের মালিকানাধীন পুকুরে ড্রেজার বসানো হয়েছে। পুকুর পাড়ে প্রায় ১শত পরিবারের বসবাস। ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে এই পুকুর থেকে মাটি, বালু উত্তোলনে আশপাশের বাড়ি, ঘর পুকুরে ভেঙ্গে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। এসব অভিযোগে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রকল্প বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্টদের দুষছেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় কৃষক আবদুল মজিদ বলেন, ফসলী জমি না থাকায় অন্যের জমি বর্গা নিয়ে ফসল উৎপাদক করে আসছি। পানি সেচ এবং বর্ষা শেষে জমি থেকে পানি নিষ্কাশনের একমাত্র ভরসা এই ভানী খাল। এটি ভরাটয় পানির চলাচল বন্ধ হয়ে ফসলী জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।

কামরুল হাসান মামুন নামে অন্য এক ভুক্তভোগী বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পে মাটি ভরাটের জন্য পুকুরে ড্রেজার মেশিন বাসানো হয়েছে মাটি ও বালু উত্তোলন করার জন্য। ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা শুরু করলে পুকুরের চার পাশে থাকা শত বসতির ঘর, বাড়ির ভেঙ্গে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

এ বিষয়ে ভানী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. নুরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ভরাটকৃত অংশ সরকারি খাস জমি। খাল পূর্বেই দখল করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে খালের দখলকৃত অংশ উচ্ছেদ করবে প্রশাসন। যাতে পানির চলাচল বন্ধ হয়ে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

কুমিল্লার জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, গৃহহীন ও ভূমিহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে যাতে কোনো সাধারণ মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সেদিকে আমরা সবসময় খেয়াল রাখছি। ভানী খাল ভরাট, বন্দোবস্ত সম্পত্তি দখল ও ড্রেজার বসানোর কোনোটাই সত্য নয়। খাল ভরাটে কৃষকরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়ে বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে।

আরএইচ/এএসএম