জয়পুরহাটে ঈদে চামড়া কেনার প্রস্তুতি নেই, পাচারের আশঙ্কা
উত্তরাঞ্চলের চামড়ার বড় একটি অংশ কেনাবেচা হয় জয়পুরহাটে। তবে করোনা ও ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে কোটি কোটি টাকা বকেয়া থাকায় কোরবানির চামড়া কেনা নিয়ে বিপাকে পড়ছেন জেলার চামড়া ব্যবসায়ীরা। তাদের আশঙ্কা কিনতে না পারলে চামড়া পাচার হয়ে যাবে ভারতে।
জানা যায়, প্রতিবছর কোরবানির ঈদে জয়পুরহাটের আড়তগুলো থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকার পশুর চামড়া ঢাকায় সরবরাহ করা হয়। তবে এ বছর জেলার চামড়ার আড়তগুলোতে নেই কোনো প্রস্তুতি।
ব্যবসায়ীরা জানান, করোনার পাশাপাশি বর্তমান বাজার ধসে এমনিতেই লোকসান রয়েছেন তারা। এর ওপর ট্যানারি মালিকদের কোটি কোটি টাকার বাকি দিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। এ অবস্থায় চামড়া শিল্পকে বাঁচাতে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ চেয়েছেন চামড়া মালিক সমিতি।
জানা যায়, জয়পুরহাট শহরের আরাফাত নগর, আমতলী, পাঁচবিবির রেলগেট, আক্কেলপুরের হাজিপাড়া এলাকায় চামড়ার আড়তগুলোতে প্রতি বছরের মতো এবার নেই কোনো প্রস্তুতি।

এসব আড়তের চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, ট্যানারি মালিকেরা গত কয়েক বছরের কোটি কোটি পাওনা টাকা এখনও পরিশোধ করতে পারেননি। এছাড়া নির্ধারিত দামের চেয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত দামে চামড়া কিনেছেন। এতে বিপাকে পড়েছেন মূল ব্যবসায়ীরা। সীমান্ত জেলা হওয়ায় চামড়া পাচারের আশঙ্কাও থাকে এখানে। এছাড়া চামড়া শিল্পের প্রধান কাঁচামাল লবণের দাম ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় সব মিলিয়ে ব্যবসায়ীরা লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন।

জয়পুরহাটের চামড়া ব্যবসায়ী শাহিন আকতার জানান, কোরবানির ঈদের জন্য তারা আড়তগুলো প্রস্তুত রেখেছেন। তবে ট্যানারি মালিকদের কাছে পাওনা টাকা না পাওয়ায় বিপাকে রয়েছেন চামড়া কেনা নিয়ে। এদিকে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারেননি তারা। ফলে নতুন করে ঋণ পাচ্ছেন না তারা। ঈদে নতুন করে চামড়া কেনা মুশকিল হয়ে পড়বে।

তিনি জানান, ট্যানারি মালিকেরা সবসময় সিন্ডিকেট দিয়ে চামড়া কেনে এবং দাম পরিশোধের বেলাতেও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অল্প করে টাকা দেয়, যা দিয়ে তারা ব্যবসা চালাতে পারেন না।
পাঁচবিবির চামড়া ব্যবসায়ী অহেদুল হোসেন ছোটন জানান, চামড়া পাচার হওয়ার প্রচুর সম্ভবনা রয়েছে। পাচার রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে এ শিল্প করোনার মধ্যেও লাভের মুখ দেখবে।

জয়পুরহাটের চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি শামিম আহমেদ জানান, ‘দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি চামড়া শিল্প। এর কাঁচামাল লবণের দাম স্থিতিশীল রাখাসহ চামড়া পাচার রোধ ও বকেয়া টাকা পরিশোধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে এ শিল্প টিকে থাকবে।’
জয়পুরহাট ২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ব্যাটালিয়নের অধীনে সীমান্ত এলাকা রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪১ কিলোমিটার। এরমধ্যে ২২ কিলোমিটার এলাকা তারকাঁটায় ঘেরা ও বাকি ১৮ কিলোমিটার সীমান্তে নেই তারকাঁটা। চোরাকারবারিরা মূলত এ জায়গাগুলোকেই তাদের পাচারের পথ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। তাই এই জায়গাগুলো সবসময় নজরদারির মধ্যে রাখা হয়।’
রাশেদুজ্জামান/এসএমএম/জেআইএম