ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

মানুষের সঙ্গে শিয়ালের সখ্য

জেলা প্রতিনিধি | নওগাঁ | প্রকাশিত: ০৯:২৪ পিএম, ২৬ আগস্ট ২০২১

জনবসতি বেড়ে যাওয়ায় ক্রমেই কমছে ঝোপঝাড়। একসময় সন্ধ্যা নামলেই আশপাশে শোনা যেতো শিয়ালের ‘হুক্কা হুয়া’ ডাক। তবে এ বন্যপ্রাণী এখন অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। যেগুলো এখনও টিকে আছে তারা আড়ালেই থেকে যায়। তবে খাবারের সন্ধানে রাতের আঁধারে চুপিসারে বেরিয়ে এলেও মানুষ দেখলেই পালিয়ে যায়।

সাধারণত বন্যপ্রাণীর সঙ্গে মানুষের তেমন সখ্য নেই বললেই চলে। তবে তাদের সঙ্গেও যে মানুষের সখ্য তৈরি হতে পারে তার দৃষ্টান্ত ফজলুল করিম আরজু। তিনি নওগাঁর বদলগাছীর পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের কাস্টডিয়ান। অভুক্ত শিয়ালদের দুবেলা খাবার দেওয়ার মাধ্যমে তাদের সঙ্গে সখ্যতা তৈরি হয়েছে এই যুবকের।

jagonews24

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারে সন্ধ্যা নামলেই শুরু হয় শিয়ালের হাঁকডাক। বৌদ্ধ বিহার চত্বরে গর্ত করে বসবাস করছে প্রায় শতাধিক খ্যাঁকশিয়াল। সন্ধ্যার পর প্রতিদিন ডাকবাংলোর সামনে অপেক্ষা করে ১৫ থেকে ২০টি শিয়াল। করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘসময় পর্যটন এ এলাকাটি বন্ধ থাকায় অভুক্ত হয়ে পড়ে শিয়ালগুলো। এতে করে সন্ধ্যার পর তাদের ডাক-চিৎকার একটু বেশিই শোনা যায়।

শিয়ালের খাবারের জন্য এ চিৎকার চরমভাবে ব্যথিত করে আরজুকে। তখন থেকেই তিনি শিয়ালগুলোর জন্য প্রতিদিন দুবেলা (সন্ধ্যা ও ভোর) খাবারের ব্যবস্থা করেন। এরপর থেকে শিয়ালের সঙ্গে ভাব জমে যায় আরজুর।

jagonews24

এখন সন্ধ্যা নামলেই শিয়ালগুলো গর্ত থেকে বেরিয়ে অপেক্ষা করে খাবারের আশায়। পাউরুটি ও রান্না করা খাবার নিয়ে ডাকবাংলোর সামনে এসে আরজু ‘আয়’ বলে ডাক দিতেই ঝাঁক বেঁধে দৌড়ে আসে তারা।

শিয়ালগুলো পুরোপুরি পোষ মেনে গেছে আরজুর। খাওয়া-দাওয়া শেষে বন্যপ্রাণীগুলো ক্যাম্পাসে ঘোরাঘুরি করে এবং ভোরের দিকে আবার আসে। এমন চিত্র প্রতিদিনের। প্রাণীগুলোকে খাওয়ানোর কাজে আরজুকে সহযোগিতা করছেন বৌদ্ধ বিহারের সাইট পরিচালক সারোয়ার হোসেন ও কেয়ারটেকার মাসুম হোসেন।

jagonews24

স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল হক বলেন, দীর্ঘদিন থেকে দেখে আসছি কাস্টডিয়ান আরজু সন্ধ্যার পর খাবার নিয়ে ‘আয়’ বলে ডাক দিলেই ছুটে যায় শিয়ালগুলো। অনেক সময় হাত থেকেও খাবার নিয়ে যায়। তার এ মহতী উদ্যোগের কারণে শিয়ালগুলোকে অভুক্ত থাকতে হচ্ছে না।

সাইট পরিচালক সারোয়ার হোসেন ও কেয়ারটেকার মাসুম হোসেন বলেন, গত বছরের মার্চ মাস থেকে লকডাউনের কারণে খ্যাঁকশিয়ালগুলো খাবার সংকটে পড়ে। সন্ধ্যার পর তাদের ডাক-চিৎকার বেড়ে যাওয়ায় ফজলুল করিম আরজু স্যার একদিন আমাদের ডেকে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করতে বলেন। খাবারের জোগান তিনি নিজেই বহন করবেন বলে জানান। এরপর থেকেই শিয়ালগুলোকে কখনও খিচুড়ি রান্না করে আবার কখনও পাউরুটি খাবার হিসেবে দেওয়া হচ্ছে। আর এর সব অর্থ জোগান দেন আরজু স্যার। আমরা শুধু রান্না করে স্যারকে সহযোগিতা করি।

jagonews24

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের কাস্টডিয়ান ফজলুল করিম আরজু জাগো নিউজকে বলেন, সন্ধ্যার পর তারা বাসার দরজার সামনে এসে বসে থাকে। খাবার দেওয়ার পর তারা খেয়ে ঘোরাঘুরি করে চলে যায়। তাদের প্রতি এমন ভালোসার বহিঃপ্রকাশ করতে পেরে আমি নিজেও খুব আনন্দিত ও প্রশান্তি অনুভব করি।

তিনি আরও বলেন, শিয়ালের খাবারের জন্য সরকারি কোনো বরাদ্দ নেই। ব্যক্তিগত অর্থ থেকে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করছি। এছাড়া বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং জয়পুরহাটে থেকে সেনাবাহিনীর একটি টিমও কিছু খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। তবে আমি যতদিন এখানে দায়িত্বে ততদিন তাদের খাবারের কোনো সংকট হবে না ইনশাল্লাহ।

এসআর/জিকেএস