ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

মানিকগঞ্জে মৎস্য সম্পদ হুমকিতে ফেলেছে ‘চায়না দুয়ারী’

জেলা প্রতিনিধি | মানিকগঞ্জ | প্রকাশিত: ০২:১০ পিএম, ০৩ অক্টোবর ২০২১

দেশে মৎস্য শিকারের জন্য নতুন ধরনের জালের ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে।‘চায়না দুয়ারী’ নামের এ জালের বিশেষ ফাঁদে আটকা পড়ে মাছের ডিমও। শুরুর দিকে পদ্মায় এ জাল ব্যবহার হলেও, এখন ছড়িয়ে পড়ছে প্রত্যন্ত গ্রামেও।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি কারেন্ট জালের চেয়েও ক্ষতিকর। তবে এখনো নিষিদ্ধ জালের তালিকায় নাম ওঠেনি। হালকা ও মিহি বুননের এ জাল সাধারণত ৫০-১০০ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। প্রস্থ এক থেকে দেড় ফুট। ভেতরে লোহার চার কোণা রড দিয়ে বানানো হয় ফ্রেম। প্রতিটি ফ্রেমেই রয়েছে দুই পাশ দিয়ে মাছ প্রবেশের সুযোগ। জালের এক গিঁট থেকে আরেকটির দূরত্ব খুবই কম। যে কারণে মাছ একবার ঢুকলে আর বের হতে পারে না। এ জালে ধরা পড়ে ডিমও। ফলে মারা পড়ছে বিপন্ন প্রজাতির অনেক জলজ প্রাণী।

অনেকটা বাঁশের দোয়ারীর আদলে তৈরি এ জাল মূলত মাছ ধরার এক ধরনের ফাঁদ। চায়না দুয়ারী ছাড়াও অনেক স্থানেই এটি চায়না জাল বা ম্যাজিক জাল নামেও পরিচিত।

jagonews24

বছর দুয়েক ধরে এ জালের ব্যবহার বেড়েছে। মানিকগঞ্জের পদ্মা নদীসহ আশপাশের নদী খাল ও প্রত্যন্ত এলাকাতেও এখন মাছ ধরা হচ্ছে এ জাল দিয়ে। জেলেদের কাছে অল্প সময়ে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এ জাল।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পদ্মায় এ জাল দিয়ে অবাধে মাছ ধরা হচ্ছে। হরিরামপুর উপজেলার দুর্গম এক চরে দেখা যায় নদীর পাড়ে সারি সারি জাল। সবই চায়না দুয়ারী। এসব জালে ধরা পড়ছে ছোট বড় মাছ। জালের ফাঁদে আটকা পড়ছে, শামুক, কাঁকড়া, কুঁচেও।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জেলে জানান, চায়না দুয়ারী এমনভাবে তৈরি যেখানে ছোট বড় মাছ কিম্বা অন্য যে কোনো কিছু ঢুকলে আর বের হওয়ার সুযোগ নেই। এ জালের দুই দিকের মুখ খোলা। জালের পুরো অংশেই রয়েছে একাধিক ফাঁদ। তাই বেশি মাছ পাওয়ার আশায় এ জালের প্রতি ঝুঁকছেন জেলেরা।

jagonews24

এক জেলে জানান, আগে করেন্ট জাল ব্যবহার করলেও চায়না দুয়ারী আসার পার সেটি বাদ দিয়েছি। কারণ কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরলে প্রশাসন উৎপাত করে। এছাড়া কারেন্ট জালের চেয়ে চায়না দুয়ারীতে মাছ বেশি পাওয়া যায়। দেড় লাখ টাকা খরচ করে ৪০টি চায়না দুয়ারী কিনেছি।

তিনি আরও জানান, পেশায় জেলে নয় এমন মানুষও চায়না দুয়ারী দিয়ে মাছ ধরছেন। স্থানীয় হাট-বাজারে গুণগতমান ও আকার অনুসারে তিন থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হয় এ জাল।

jagonews24

হরিরামপুর উপজেলার পদ্মা পাড়ের বাসিন্দা পান্নু মিয়া জানান, নদী ও আশপাশের বিলে ব্যাপকভাবে চায়না দুয়ারী জাল ব্যবহার হচ্ছে। এ জাল এতটা সূক্ষ্ম যে ছোট ছোট জাতের মাছ এমনকি মাছের ডিমও ধরা পড়ে।

মানিকগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সাইফুর রহমান জানান, দেশে মাছ ধরার জালের ‘মেস সাইজ’ অর্থাৎ একটি গিঁট থেকে আরেকটি গিঁটের দূরত্ব হবে সাড়ে ৪ সেন্টিমিটারের ওপরে। এই ‘মেস সাইজ’ এর চেয়ে কম হলে সেটি দেশের আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ। আইনের এই ব্যখ্যা অনুযায়ী কারেন্ট জাল যেমন নিষিদ্ধ তেমনি চায়না দুয়ারীও নিষিদ্ধ। কিন্তু নিষিদ্ধ জালের তালিকায় চায়না দুয়ারীর নাম উল্লেখ নেই। তবে এ নিয়ে মৎস অধিদপ্তর কাজ করছে।

তিনি আরও জানান, চায়না দুয়ারী দেশের মৎস্য সম্পদ ও জলজপ্রাণীর জন্য মারাত্মক হুমকি। এ জাল ব্যবহার বন্ধে ইতিমধ্যে অভিযানও শুরু হয়েছে।

বি এম খোরশেদ/এএইচ/জেআইএম