কাটাগড়ে বসছে ৩০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী মেলা
পুরোদমে চলছে মেলার প্রস্তুতি
প্রায় ৩০০ বছর ধরে চলে আসছে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের কাটাগড়ের মেলা। আধ্যাত্মিক সাধক দেওয়ান শাগের শাহে্র (রহ.) বার্ষিক ওরস উপলক্ষে বসে ঐতিহ্যবাহী এ মেলা।
স্থানীয়রা জানান, চৈত্র মাসের ১১ তারিখ থেকে মেলা শুরু হলেও রেশ থাকে সপ্তাহব্যাপী। ফার্নিচার মেলা চলে মাসব্যাপী। মূল মেলা ১২ চৈত্র। এদিন দেওয়ান শাগের শাহ (রহ.) এর ওরস। এ কারণে ওই দিন লোক সমাগম বেশি হয়। প্রায় ৬০-৭০ একর জায়গা জুড়ে হয় এ মেলা। মেলাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের হাজারো ভক্ত, ফকির-সন্ন্যাসীর আগমন ঘটে।
মেলার আরেকটি ঐতিহ্য হচ্ছে চিনির তৈরি সাজ-বাতাসা ও কদমা। আগতরা আর কিছু কিনুক বা না কিনুক মাটির পাতিলে সাজ-বাতাসা ও কদমা কিনবেনই। সেটি আধ্যাত্মিক সাধক দেওয়ান শাগের শাহের (রহ.) আস্তানার ওপর ছিটিয়ে থাকেন। এভাবে প্রায় কয়েকশ মণ সাজ-বাতাসা ও কদমা ছিটানো হয়।

মেলা শুরুর দিন, মাস ও বছরের সঠিক ইতিহাস জানা নেই কারে। এলাকার প্রবীণ ও ঐতিহাসিকদের মতে, ফকির-সন্ন্যাসী আন্দোলনের আধ্যাত্মিক নেতা ছিলেন দেওয়ান শাগের শাহ (রহ.)। ধারণা করা হয় ১৮ শতকের গোড়ার দিকে কাটাগড়ে আস্তানা গাড়েন তিনি। ১৮ শতকের প্রথমদিকে মারা যার এ আধ্যাত্মিক সাধক। তার মৃত্যুর দিন ভক্তরা জড়ো হয়ে ওরসের আয়োজন করে। কালক্রমে সে ওরস ঘিরে জমে ওঠে মেলা।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাজারের পাশে প্রায় ৬০-৭০ একর এলাকায় তৈরি মেলার পরিবেশ। পুতুল নাচ, সার্কাস, ভ্যারাইটি শো, যাত্রাপালা, যাদু ও নাগরদোলার প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া ফার্নিচার, সাজ-বাতাসা, মিষ্টির দোকান, হোটেল, বাহারি খাবারের দোকান, নানা ধরনের খেলনার দোকান গড়ে উঠছে।

মেলা প্রাঙ্গণে একাধিক আগত বলেন, প্রতি বছর এ এলাকায় ভিন্ন রকমের আমেজ সৃষ্টি হয়। এবারও তাই হয়েছে। কাটাগড় কলিমাঝি, সূর্যোগ, সহস্রাইল, ভুলবাড়িয়া, শেখর, ভাটপাড়া, মাইটকুমরা, গঙ্গানন্দপুর, ছত্রকান্দা, বন্ডপাশা, বয়রা, বামনগাতি, বাজিদাদপুর, টোংরাইল, মোড়া, সুতালীয়া, বনমালীপুর, ছয় হাজার, কদমী গ্রামে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য (মেম্বার) শামিমা আক্তার চায়না জাগো নিউজকে বলেন, মেলার সময় আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত দেওয়ার রীতি চালু রয়েছে। এলাকার চাকরিজীবী ও পেশাজীবীরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন মেলায় গ্রামের বাড়িতে আসার।

শেখর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইসরাফিল মোল্লা বলেন, কাটাগড়ের মেলা এ এলাকার ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ। মেলাকে ঘিরে আশপাশের প্রায় অর্ধশত গ্রামজুড়ে বইছে উৎসবের আমেজ। গ্রামের অনেক মানুষ ঈদ বা পূজায় বাড়ি না এলেও মেলায় ঠিকই বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন।
কাটাগড় মেলা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মশিউল আজম বাবু মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, এটি পুরনো ঐতিহ্যবাহী মেলা। মেলার শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কমিটির পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরুল আলম বলেন, আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এ বিষয়ে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রেজাউল করিম জাগো নিউজকে বলেন, অসামাজিক কার্যকলাপ ও অশ্লীলতা বন্ধে মেলা কমিটিকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর ব্যত্যয় ঘটলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরএইচ/এএসএম