ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ঠাকুরগাঁওয়ে কালোবাজারে ট্রেনের টিকিট: ভোগান্তিতে যাত্রীরা

জেলা প্রতিনিধি | ঠাকুরগাঁও | প্রকাশিত: ০৪:০৭ পিএম, ২৭ মার্চ ২০২২

ঠাকুরগাঁও রোড স্টেশনে রেলের টিকিট যেন সোনার হরিণ। সাধারণ যাত্রীদের টিকিট পেতে পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন ভোগান্তি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাউন্টারে টিকিট মেলে না। তবে কাউন্টারের সামনেই কালোবাজারিদের কাছে পাওয়া যায় ট্রেনের টিকিট।

যাত্রীদের অভিযোগ, সকাল ৮টা থেকে কাউন্টার ও অনলাইনে টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই সার্ভার থেকে হাওয়া হয়ে যায় সব টিকিট। আর কাউন্টারে গিয়ে ট্রেনের টিকিট না মিললেও বাড়তি টাকা দিয়ে স্টেশনের বাইরে টিকিট পাওয়া যায়। দ্বিগুণ বা তার বেশি দাম দিলে কাউন্টারের সামনেই কালোবাজারিদের হাতে পাওয়া যায় সব শ্রেণির ট্রেনের টিকিট। এমনকী ঠাকুরগাঁওয়ের রেলের টিকিট মেলে স্টেশনের কিছু অসাধু কর্মচারী ও স্টেশনের আশপাশের প্রভাবশালীদের হাতে।

তবে কারা এসব টিকিট কালোবাজারে বিক্রি করেন তা জানেন না খোদ স্টেশনের কর্তাব্যক্তিরা। এদিকে, টিকিটের কালোবাজারি রোধে দায়িত্বশীলদের নজরদারির অভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এই চক্র।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও রোড রেল স্টেশনে এই চক্রটির সদস্য আছে। প্রভাবশালী এই চক্রের নিয়ন্ত্রণে ট্রেনের সব টিকিট। ফলে বাধ্য হয়েই যাত্রীদের স্টেশনের বাইরে থেকে বাড়তি টাকা দিয়ে টিকিট কিনতে হয়।

যাত্রীদের আরও অভিযোগ, ট্রেনের টিকিট চক্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন ঠাকুরগাঁও রেলওয়ে স্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। এর বাইরে টিকিট কালোবাজারিতে জড়িত রয়েছেন স্টেশনের ভেতরের দোকানদারসহ স্থানীয় নেতারা।

ঠাকুরগাঁওয়ে কালোবাজারে ট্রেনের টিকিট: ভোগান্তিতে যাত্রীরা

স্টেশনে টিকিট কিনতে আসা সাব্বির বলেন, কাউন্টারে গেলে টিকিট নেই বলে বিদায় করে দেওয়া হয়। পরে স্টেশনের কর্মচারী একজনের সঙ্গে কথা বলে পাঁচটি টিকিট অতিরিক্ত দাম দিয়ে তার কাছ থেকে কিনি।

জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও রেলওয়ে স্টেশনের বুকিং সহকারী ফারুক হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আমি স্টেশনে মাত্র কয়েকমাস আগে এসেছি। ঠাকুরগাঁওয়ের বরাদ্দকৃত টিকিট দ্রুত শেষ হয়ে যায়। কিন্তু কালোবাজারিদের হাতে কীভাবে সেই টিকিট মেলে তা আমার জানা নেই।

ঠাকুরগাঁওয়ে কালোবাজারে ট্রেনের টিকিট: ভোগান্তিতে যাত্রীরা

তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন সকালে স্টেশনে স্থানীয় অনেকেই এসে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটেন। তাদের অনেকবার নিষেধ করা হলেও তারা শোনেন না। তাছাড়া স্টেশনের কর্মচারী ও সদস্যদের টিকিট কাটতেও নিষেধ করা হয়েছে। তারপরও তারা এসব কাজ করে থাকেন।

আজমত রানা নামে এক ব্যক্তি জাগো নিউজকে বলেন, ট্রেনের টিকিট না পাওয়ার প্রধান কারণ কালোবাজারিদের হাতে টিকিট চলে যাওয়া। মূলত দুইভাবে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারিদের হাতে যাচ্ছে। আমাদের প্রচলিত অনলাইনে টিকিট কাটার সিস্টেমে যে কেউ প্রতিদিন একই এনআইডি/ফোন নম্বর ব্যবহার করে একাধিক টিকিট অনলাইন থেকে কিনতে পারে। এসব টিকিট পরে বেশি দামে বিক্রি করছে তারা।

ঠাকুরগাঁওয়ে কালোবাজারে ট্রেনের টিকিট: ভোগান্তিতে যাত্রীরা

রাসেল নামে এক ব্যক্তি জাগো নিউজকে বলেন, ট্রেনের টিকিটের সঙ্গে সরাসরি রেলের লোক জড়িত। কাউন্টারে বসে যে মানুষটি টিকিট বিক্রি করছে সে কিছু টিকিট দেওয়ার পর বলছে টিকিট শেষ। পরবর্তীতে সেই টিকিট প্রিন্ট করে নিজস্ব লোক দিয়ে বিক্রি করা হয় কালোবাজারে। আমার সঙ্গেও এমনটা ঘটেছে। কাউন্টারে মাত্র ১৮টি টিকিট বিক্রির পর আমার পালা আসার পর বলা হলো ‘টিকিট নেই’। আমি প্রতিবাদ করেছি, চিৎকার করেছি। আমার সঙ্গে আরও অনেকেই প্রতিবাদ করেছে, ফলে সেদিন কাউন্টার থেকেই আমাকে টিকিট দিতে বাধ্য হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও রোড রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার আকতারুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী আমরা টিকিট বিক্রি করে থাকি। লাইনে এসে কে বা কারা আগে টিকিট কিনে নিয়ে কালোবাজারে বিক্রি করে সেটা আমরা জানি না। তবে যেহেতু যাত্রীরা অভিযোগ তুলেছে, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমরা বিবেচনা করছি।

ঠাকুরগাঁওয়ে কালোবাজারে ট্রেনের টিকিট: ভোগান্তিতে যাত্রীরা

সম্প্রতি টিকিট কেনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের কিছু কর্মী ঠাকুরগাঁও রেল স্টেশন মাস্টারকে লাঞ্ছিত করেন। এ ঘটনার একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। সেই ভিভিওর কমেন্টে অনেকেই কালোবাজারে টিকিট বিক্রির অভিযোগ তোলেন। এছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে বিক্রির সময় গত বছরের ১৬ নভেম্বর হাতেনাতে জাহাঙ্গীর আলম নামে এক স্থানীয় যুবলীগ নেতাকে আটক করে পুলিশ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্টেশনের বাইরের এক যুবক বলেন, স্টেশনের লোকের কাছে আমরা টিকিট কিনি। পরে সেগুলো বাইরে বেশি টাকায় বিক্রি করা হয়। সেই টাকার ভাগ স্টেশনের কর্মকর্তারাও পায়। শুধু আমাদের দোষ দিয়ে লাভ কী?

তানভীর হাসান তানু/এমআরআর/জেআইএম