ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ঘটা করে উদ্বোধনের তিনমাস পরই বন্ধ সি-ট্রাক

নাসিম উদ্দিন | প্রকাশিত: ০৫:১৭ পিএম, ১৯ এপ্রিল ২০২২

ঘটা করে উদ্বোধনের তিনমাস পরই বন্ধ হয়ে গেছে জামালপুর-বগুড়া নৌপথের সি-ট্রাক চলাচল। ফলে এখন চরম ঝুঁকি নিয়ে যমুনা পাড়ি দিচ্ছেন দুই পাড়ের লাখো মানুষ।

স্থানীয় সূত্র ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে মাদারগঞ্জের জামথল ও বগুড়ার সারিয়াকান্দির নদীপথের দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। শুকনো মৌসুমে দূরত্ব বেড়ে হয় ১৫ কিলোমিটার। তাই এ পথে ফেরি সার্ভিস চালুর সিদ্ধান্ত বহুদিনের। তারই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ১২ আগস্ট বিআইডব্লিউটিএ ২০০ আসনবিশিষ্ট শহীদ আব্দুর রউফ সেরনিয়াবাত নামে একটি সি-ট্রাক পরীক্ষামূলকভাবে চালু করে। ফলে এ অঞ্চলের যাত্রীদের রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দূরত্ব কমে আসে প্রায় ৮০ কিলোমিটার। ওইদিন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন মাদারগঞ্জ-মেলান্দহ এলাকার সংসদ সদস্য মির্জা আজম ও বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান। তবে উদ্বোধনের পর থেকেই খুঁড়িয়ে চলছিল যানটি। মাঝে তিনবার যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ১৭ থেকে ২০ দিন বন্ধও থাকে। তারপর তিনমাস যেতে না যেতেই নদীর নাব্যতার দোহাই দিয়ে একেবারে বন্ধ হয়ে যায় নৌযানটি।

এ বিষয়ে কথা হয় কাউসার আহমেদ নামে স্থানীয় এক যুবকের সঙ্গে। তিনি হিলি শাখায় ব্যুরো বাংলাদেশে চাকরি করেন। কাউসার জাগো নিউজকে বলেন, যে কয়দিন ফেরি চলাচল করেছে সে কয়দিন তারা স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পেরেছেন। এখন আবারও ঝুঁকি নিয়েই নদী পারাপার হচ্ছেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে বছরে ২০ থেকে ২৫ বার যাওয়া-আসা করেন। যাতায়াত করতে গিয়ে নানারকম অসুবিধার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। এখন তাদের রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। যেহেতু তিনি দূরে থাকেন তাই সময়মতো আসতে না পারলে অনেক সময় ডাবল ভাড়াও গুনতে হয়।

Jamalpur-3.jpg

নাছারুল ইসলাম ব্যবসার কাজে বগুড়া যাবেন, কিন্তু একটু বিলম্ব হওয়ার কারণে নৌকা ধরতে না পেরে করে দুর্ভোগে পড়েছেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, তার বগুড়া যাওয়া খুব জরুরি। কিন্তু নৌকা মিস করে দুর্ভোগে পড়েছেন। কতক্ষণ পর নৌকা আসবে তার ঠিক নেই। এমনিতে ভাড়া ৬০ টাকা, রিজার্ভ নিতে হলে তাকে গুনতে হবে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা। তাই ধৈর্য ধরে বসে আছেন। তার দাবি একটি সেতুর। দুর্ভোগ লাঘবে সরকার চাইলে এ রুটে একটি সেতু করে দিতে পারে।

নৌকাচালক মোস্তাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, যখন ফেরি চলাচল করেছে তখন যাত্রী একটু কম ছিল। এখন আবার যাত্রী হচ্ছে। ঝামেলামুক্ত হওয়ায় এ পথে অনেকেই যাতায়াত করে থাকেন। শুষ্ক মৌসুমে সময় বেশি লাগলেও বর্ষা মৌসুমে সময় একটু কম লাগে।

সি-ট্রাক ইজারাদার জাহিদুর রহমান উজ্জ্বল জাগো নিউজকে বলেন, মাত্র দুই মাস নৌযানটি ভালোভাবে চালাতে পেরেছেন। নদীতে চর জাগার কারণে উদ্বোধনের তিনমাস পর এটি বন্ধ হয়ে যায়। সঠিক পরিকল্পনা ও নদী খননের আগে এটি চালানো সম্ভব নয়। তিনি মাসিক ৫০ হাজার টাকায় এটি ইজারা নিয়েছিলেন। ইজারা নেওয়ার পর থেকে প্রতিদিন তাকে লোকসান গুনতে হয়েছে।

Jamalpur-3.jpg

এ বিষয়ে মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও) ইলিশায় রিছিল জাগো নিউজকে বলেন, যতটুকু জানতে পেরেছি সি-ট্রাকটি কিছুদিন চালু থাকার পর পর্যাপ্ত পানি না থাকা ও ড্রেজিংয়ের কাজ চলায় অনেকদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর প্রধান প্রকৌশলী এরইমধ্যে জায়গাটি পরিদর্শন করেছেন। তারা এটা নিয়ে কাজ করছেন বলেও জানান তিনি।

সি-ট্রাক বন্ধের বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসর পরিচালক (বাণিজ্য) এস এম আশিকুজ্জামান মুঠোফোনে জাগো নিউজকে বলেন, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সি-ট্রাকটি মেরামতের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। মেরামত শেষ হলে এটি আবার চালুর চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। এছাড়া একটি প্রকল্পের মাধ্যমে নদী খননের কাজ চলমান রেখেছে বিআইডব্লিউটিএ। খননের কাজ শেষ হলে এখানে এটি ফেরি দেওয়ার চিন্তা-ভাবনাও রয়েছে বলেও জানান তিনি।

জামালপুর জেলা প্রশাসক মুর্শেদা জামান জাগো নিউজকে বলেন, নাব্যতা সংকটের কারণে আপাতত সি-ট্রাকটি বন্ধ রয়েছে। তবে ভবিষ্যতে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর নাব্যতা সংকট কেটে গেলে এটি আবারও চলমান হবে।

এমআরআর/এমএস