নারায়ণগঞ্জে জমে উঠেছে ঈদ বাজার
বিপণিবিতানগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়
নারায়ণগঞ্জে জমে উঠেছে ঈদ বাজার। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলোতে রয়েছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের আনাগোনা। সেই সঙ্গে ধুম পড়েছে কেনাকাটায়। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মার্কেটগুলোতে ভিড় করছেন। তবে এখনও ক্রেতাদের মাঝে করোনার প্রভাব রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের মার্ক টাওয়ার, হক প্লাজা, সায়াম প্লাজা, সান্তনা মার্কেট, বেলি টাওয়ার, বর্ষণ সুপার মাকেট, এফ রহমান সুপার মার্কেট ও আল জয়নাল প্লাজায় পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি পোশাক। এসব মার্কেটগুলোতেও রয়েছে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। সেই সঙ্গে বিভিন্ন শোরুমেও ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে।

বেইলি টাওয়ার, হক প্লাজা, মার্ক টাওয়ার, সমবায় মার্কেট, প্যানোরমা প্লাজা, লুৎফা টাওয়ার, সায়াম প্লাজায় এখন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় থাকে। শহরের শায়েস্তা খান সড়কের ফ্রেন্ডস মার্কেটের পাঁচ শতাধিক দোকান মূলত দেশি কাপড়ের জন্য বিখ্যাত। এখানে শাড়ি, থ্রি-পিস, বিছানার চাদর, পর্দা ও সোফার কাপড় পাওয়া যাচ্ছে।
মধ্যবিত্তের কেনাকাটার জন্য জনপ্রিয় ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকার মার্কেটগুলোতেও ক্রেতাসমাগম রয়েছে। দেশি-বিদেশি পোশাক, জুতা, কসমেটিকস, অলংকার, শাড়ি থেকে শুরু করে সবকিছুই এই মার্কেটে পাওয়া যাচ্ছে।

শহরের জয়নাল ট্রেড সেন্টারের মুসলিমা হাউজের বিক্রয়কর্মী ইসরাত জাহান নদী বলেন, আমরা মূলত অনলাইনেই বেশি অর্ডার নিয়ে থাকি। ঈদে বেশ ভালই অর্ডার পাচ্ছি। আর এখানে এসে কালার মিলিয়ে নিয়ে যান। আমাদের এখানে প্রায় সব ধরনের বোরখা রয়েছে। সেই সঙ্গে থ্রি-পিছও বিক্রি করে থাকি।
কালিরবাজার এলাকার অ্যাফলিক ফ্যাশনের মালিক মো. ইউসুফ হাসান বলেন, আমি এ ব্যবসায় নতুন এসেছি। প্রথম অবস্থাতেই বেশ ভালো ব্যবসা করছি। আশা করছি সামনের দিনগুলোতে ব্যবসা ভালো হবে।

সমবায় মার্কেটের রাইসা পয়েন্টের মালিক এস রনি বলেন, আমার এখানে শিশুদের বিভিন্ন পোশাক রয়েছে। গত দুই বছর করোনার কারণে তেমন ব্যবসা হয়নি। তবে এ বছর ভালই ব্যবসা হচ্ছে। সামনে হয়তো আরও বাড়বে।
লুৎফা টাওয়ারের অরিন্দমের ম্যানেজার রাজীব ঘোষ বলেন, আমাদের এখানে প্রায় সব রকমের পণ্যই রয়েছে। গত দুই বছর করোনার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ ছিল। তবে এবার মোটামুটি ব্যবসা হচ্ছে। কিন্তু এখনও আশানুরুপ বেচাকেনা এখনও শুরু হয়নি। এখনও ঈদের ১০-১৫ দিন বাকি রয়েছে। ঈদের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তুলনামূলক ব্যবসা বাড়তে শুরু করছে।

মুসলিমা হাউজের মালিক মুসলিমা বলেন, গত দুই বছর করোনা কারণে তেমন ব্যবসা হয়নি। এবার আশা করছি কিছুটা ব্যবসা করা যাবে। এখনও ক্রেতাদের মাঝে করোনার প্রভাব কিছুটা রয়েছে।
শহরের ইসদাইর এলাকার একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন আব্দুল্লাহ আল রোমাম। তাকে ঈদ কেনাকাটা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, গত দুই বছর করোনার কারণে পরিবারের সদস্যদের জন্য তেমন কেনাকাটা করতে পারিনি। এবার ইচ্ছা করেছি পরিবারের সদস্যদের জন্য কিছু কেনাকাটা করবো। যদিও তেমন সামর্থ্য নেই। তারপরেও সাধ্যমতো চেষ্টা করবো।

শহরের একটি বায়িং হাউজে চাকরি করেন মোতালেব হোসেন সাজন। গত দুই বছর ধরে করোনায় চাকরির অবস্থা তেমন ভাল যাচ্ছিলো না। কয়েকমাস হলো নিয়মিত বেতন পাচ্ছি। গত দুই বছর কিছু কিনতে পারিনি। এবার পরিবারের সদস্যদের কিনতে হবে। নিজের জন্য হয়তো কিছু কিনতে পারবো না।
নারায়ণগঞ্জ জেলা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ শাহেদ শাহীন জাগো নিউজকে বলেন, বেচাকেনা এখনও সেভাবে লাগেনি। ব্যবসায়ীরা শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। যেহেতু গত দুই বছর কোভিডের কারণে ব্যবসা বন্ধ ছিল। অনেকে টাকা ইনভেস্ট করে বসে আছে ব্যবসায়ীরা। এখনও বেচাকেনা শুরু হয়নি। খুব সামান্য লোকজন ঈদের মার্কেটে আসা শুরু করেছে। সবাই একটু চিন্তিত। এখন পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা হতাশ। আশা করা যায় সামনে যে কয়দিন আছে এ কয়দিনে ব্যবসা হবে।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) মো. জায়েদুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, বিগত দুই বছর করোনা কারণে মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারে নাই। এ বছর যেহেতু করোনা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সে কারণে মানুষ বেশি বের হবে। বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। আমরা আমাদের সাদা পোশাকধারী পুলিশ এবং পোশাকি পুলিশ নিয়োজিত করেছি।
আরএইচ/জেআইএম