ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

বুড়িমারী স্থলবন্দরে জায়গা সংকট, বাড়ছে ট্রাকের জট

জেলা প্রতিনিধি | লালমনিরহাট | প্রকাশিত: ০৯:৫৫ পিএম, ২৮ এপ্রিল ২০২২

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বুড়িমারী স্থলবন্দর। বাংলাদেশ-ভারত-ভুটান ত্রিদেশীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ রুটে পরিণত হয়েছে স্থলবন্দরটি।

তবে ইয়ার্ড সেডের ধারণ ক্ষমতা কম হওয়ায় আমদানি-রপ্তানির পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ যানজট এখানকার নিয়মিত চিত্র। বুড়িমারী স্থলবন্দর ইয়ার্ড শেড সংকট হওয়ায় ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না এখানকার কয়েকশ সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ইয়ার্ডে গাদাগাদি করে মালামাল লোড-আনলোড চলছে। সেডে তিল পরিমাণের জায়গা নেই। ফলে মহাসড়কে ভারত-বাংলাদেশের পণ্যবাহী ট্রাকে তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে। একটি ট্রাক মালামাল লোড বা আনলোড করে ইয়ার্ড সেড থেকে দ্রুত বের হওয়ার কোনো উপায় নেই। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন ট্রাকচালকরা।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে ও বুড়িমারী স্থলবন্দরে গত ছয় বছরের তুলনায় রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের কথা বলেছে কাস্টম কর্তৃপক্ষ। ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ১১১ কোটি ১১ লাখ ৩১ হাজার টাকা। প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ৯৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ৫৪ কোটি ৯১ লাখ ৫২ হাজার টাকা। প্রবৃদ্ধি ৬.৮৭ শতাংশ। যদিও তা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা কম। এ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয় ৫৬ কোটি ৭২ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা ছিল লক্ষ্যমাত্রার (১০৪ কোটি ৮৯ লাখ) প্রায় অর্ধেক।

বুড়িমারী স্থলবন্দরের কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরের মধ্যে এ বন্দরে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে চলতি বছর। সবচেয়ে কম আদায় হয় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে। সে বছর লক্ষ্যমাত্রাও ছিল কম। ৫২ কোটির বিপরীতে আদায় হয় ৪০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ৪৫ কোটি টাকা।

লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছিল ২০১৭-১৮ অর্থবছরে। সেবার ৫০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আদায় হয় ৭৬ কোটি ৫৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ৭৬ কোটি ৫৫ লাখ ৭৬ হাজার, ২০১৯-২০২০ বছরে ৫৬ কোটি ৭২ লাখ ২৪ হাজার টাকা।

কাস্টমস কর্মকর্তাদের ভাষ্য- ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে সহজতর যোগাযোগব্যবস্থার কারণে বুড়িমারী স্থলবন্দর এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অন্যতম প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এ কারণে রাজস্ব আদায়ও বাড়ছে।

বুড়িমারী স্থলবন্দরের তিনটি ইয়ার্ড শেডের ধারণ ক্ষমতা ১ হাজার ৭৬৮ টন এবং ৩ ওপেন স্ট্যাক ইয়ার্ডের ধারণ ক্ষমতা ৬ হাজার ২০৩ টন। সময় মতো পণ্য খালাস না হওয়ায় ওপেন স্ট্যাক ইয়ার্ডে আমদানি পণ্যের ট্রাককে দু-চারদিন অপেক্ষা করতে হয়।

বুড়িমারী স্থলবন্দরে জায়গা সংকট, বাড়ছে ট্রাকের জট

ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দরের সর্দার পাড়ার ভারতীয় ট্রাকচালক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ভারত থেকে মাল এনে বাংলাদেশের ইয়ার্ডে আনলোড করেছি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে আছি ইয়ার্ড থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় নেই। পার্কিংটা যদি বড় করতো তাহলে আমাদের এ কষ্টটা থাকতো না। মাল আনলোড করেই চলে যেতে পারতাম।

এদিকে বুড়িমারী স্থলবন্দরের ইয়ার্ড শেড থেকে আমদানি করা মালামাল প্রতিদিন চুরি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। এতে আমদানিকারকরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন।

বন্দরে পচনশীল পণ্য খালাসের জন্য একটি ইয়ার্ড শেড আছে। এতে ভারত ও ভুটান থেকে আনা চাল, ভুট্টা, গম, ফলের ট্রাক খালাস করা হয়। এরপর বাংলাদেশি ট্রাকে বোঝাই করা হয়। প্রতিদিন তিন থেকে চার শতাধিক ট্রাকের পণ্য খালাস ও বোঝাই করা হয় এ বন্দরে।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বন্দরে এখন বহিরাগতদের অবাধ বিচরণ। ভারতীয় ট্রাক থেকে পণ্য খালাস ও বাংলাদেশি ট্রাকে তা বোঝাই করার সময় বহিরাগতরা পণ্য চুরি ও ছিনতাই করেন। বেশিরভাগ চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাতে। এ অবস্থায় বন্দরে নিরাপত্তায় নিয়োজিত বেসরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়ানো ও পুরো বন্দর এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনারও দাবি ব্যবসায়ীদের।

স্থলবন্দরের মেসার্স এ এস ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী জিল্লুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, বুড়িমারী স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের পণ্য রাখার নির্ধারিত এলাকা থেকে পণ্য চুরি ও ছিনতাই কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। জায়গা সংকটের কারণে দ্রুত মালামাল সেড থেকে বের করতে পারছি না। এতে ইয়ার্ডেই মালামাল দু-চারদিন ধরে আটকা পড়ে থাকছে। ব্যবসায়ীরা এ নিয়ে চরম শঙ্কার মধ্যে আছেন।

বুড়িমারী স্থলবন্দরে জায়গা সংকট, বাড়ছে ট্রাকের জট

বুড়িমারী স্থলবন্দরে আমদানি ও রপ্তানিকারক আজাদ টেডিংয়ের পরিচালক আজাদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, স্থল বন্দরের সবচেয়ে সমস্যা হচ্ছে বন্দরের ধারণ ক্ষমতার । এই ছোট্ট জায়গায় ভুটান, ভারতীয় ও বাংলাদেশের ট্রাক একসঙ্গে প্রবেশ করায় মালামাল আনতে কষ্টকর সময় নষ্ট। বাংলাদেশের চারশ এবং ভারতের পাঁচশ ট্রাক প্রবেশ করলেই জায়গা সংকটের সৃষ্টি হয়। এতে পণ্য আনা-নেওয়ায় অনেক সময় নষ্ট হচ্ছে। আমরা ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। পাশাপাশি সরকারও শুল্ক কম পাচ্ছেন। ইয়ার্ড সেডের জায়গা বড় হলে সরকার ও শুল্ক বেশি পাবে আমরা ব্যবসায়ীরা লাভবান হবো।

বুড়িমারী স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী বকুল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের ট্রাকের যানজটকে এখানকার বড় সমস্যা। এ কারণে সময় মতো পণ্য খালাস করতে পারি না। এতে সময় ও অর্থ অপচয় হচ্ছে। দ্রুত বন্দর সম্প্রসারণের দাবি জানান।

বুড়িমারী স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি ও পাটগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বাবুল জাগো নিউজকে বলেন, এ স্থলবন্দর দিয়ে কম খরচে ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে পণ্য আমদানি করা যায়। দেশের বিভিন্ন জায়গার আমদানিকারকরা এখানে ব্যবসা করতে আসছেন। বর্তমান জায়গা সংকট ও যানজট সমস্যার সমাধান হলে বুড়িমারী স্থলবন্দর হয়ে উঠবে একটি অন্যতম বাণিজ্যিক অঞ্চল।

বুড়িমারী স্থলবন্দরে জায়গা সংকট, বাড়ছে ট্রাকের জট

বুড়িমারী স্থলবন্দরে কাস্টমসের সহকারী কমিশনার জে এম আলী আহসান জাগো নিউজকে বলেন, ত্রিদেশীয় স্থলবন্দর হিসেবে পরিচিত বুড়িমারী। আমি সবেমাত্র যোগদান করেছি। স্থল বন্দরের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করছি।

তিনি আরও বলেন, বন্দরে ইয়ার্ডের জায়গা সংকটের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ জানে। তবে শুনেছি ২৩ একর জায়গা নিয়ে একটি নতুন ইয়ার্ড তৈরি হবে।

বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের বুড়িমারী স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক (এডি) রুহুল আমিন জাগো নিউজকে বলেন, এ স্থলবন্দর সম্প্রসারণের জন্য একনেকে পাস হয়েছে। স্থলবন্দর সম্প্রসারণ করতে প্রায় ২৩ একর জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। শিগগির জমি অধিগ্রহণ করে স্থলবন্দরটি সম্প্রসারণের কাজ শুরু করা হবে।

তিনি আরও বলেন, বন্দরে আমদানি-রপ্তানির পণ্যবাহী ট্রাকের পার্কিং টার্মিনাল, খালি ট্রাক রাখার টার্মিনাল ও বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল-ভুটান যাতায়াতকারী যাত্রীদের জন্য প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল তৈরি করা হবে। বন্দরে ইয়ার্ড সেডে মালামাল চুরি রোধে বিশেষ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

রবিউল হাসান/এসজে/জেআইএম