শিক্ষক জুলফিকার আলীর স্বপ্ন প্রতিটি উপজেলায় গাছ লাগাবেন
বৃক্ষরোপণ করছেন বৃক্ষপ্রেমী এস এম জুলফিকার আলী
গাছের প্রতি ভালোবাসা ছাত্রজীবন থেকেই। ৪০ বছর ধরে রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাটবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বনজ, ফলদ ও ঔষধিসহ নানাজাতের গাছ রোপণ করে চলেছেন এসএম জুলফিকার আলী নামে এক শিক্ষক। বিনিময়ে তিনি নেন না কিছুই। ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই দমিয়ে রাখতে পারে না তাকে।
এস এম জুলফিকার আলী জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার কে.জি.এস মহর সোবহান মফিজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। যাকে সবাই লেবু মাস্টার নামেই চেনেন। তিনি ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের ছবিলাপুর গ্রামের মো. আলাউদ্দিন সরকারের ছেলে।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, বৃক্ষপ্রেমী এস এম জুলফিকার আলী জেলার বিভিন্ন স্থানে ৩ হাজার বটবৃক্ষসহ প্রায় ৪০ হাজার অন্যান্য প্রজাতির গাছ রোপণ করেছেন। অনেক গাছ এখন বড় হয়ে ফল ও ছায়া দিচ্ছে। পথচারীদের বিশ্রামের জন্য গাছের গোড়ায় তৈরি করে দিয়েছেন পাকা মাচাও। নিজের বাড়িকেও তিনি সাজিয়েছেন নানা প্রজাতির বৃক্ষের সমাহারে।
স্থানীয়রা জানান, তিনি সামাজিক অনুষ্ঠানসহ শিক্ষার্থীদের যেকোনো অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবে দেন চারা গাছ। এছাড়াও প্রতিনিয়ত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বৃক্ষ রোপণে উদ্বুদ্ধকরণে বৃক্ষ রোপণের সুফল সম্পর্কে আলোচনা করেন।
বৃক্ষপ্রেমী এস এম জুলফিকার আলী লেবু মাস্টার জাগো নিউজকে বলেন, অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন গাছ লাগানোর নেশা শুরু হয় তার। তারপর থেকে খেলার মাঠ, বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ, ঈদগাহ মাঠসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে বৃক্ষ রোপণ শুরু করেন। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ছাড়াও ক্লান্ত পথিক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে প্রশান্তি দিতেই তার এ বৃক্ষরোপণ অভিযান বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, ৩২ বছরের শিক্ষকতা জীবনে প্রতিটি ছাত্রের বাড়িতে তার রোপিত একটি হলেও পরিবেশ বান্ধব গাছ রয়েছে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হিসেবে দেশের প্রতিটি উপজেলায় বৃক্ষ রোপণের ইচ্ছার কথাও জানান তিনি।

কে.জি.এস মহর সোবহান মফিজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র হোসেন আলী, কফিল সরকার, হৃদয় আহমেদ, ইমরান মাহমুদসহ আরও অনেকে জাগো নিউজকে বলেন, ছোটকাল থেকেই দেখে আসছি লেবু স্যার গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় গাছ লাগিয়ে আসছেন। গ্রামের এমন কোনো রাস্তা-ঘাট নেই যেখানে তিনি গাছ লাগাননি। পথচারীদের বসার জন্য গাছের গোড়ায় পাকা করে দিয়েছেন তিনি। পথিকের তৃষ্ণা নিবারণে কয়েক জায়গায় টিউবওয়েলও স্থাপন করেছেন স্যার। যেকোনো সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানেও তিনি গাছ উপহার দেন। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠান যেমন- খেলাধুলা, বিদায় অনুষ্ঠান, বিতর্ক প্রতিযোগিতাসহ নানা অনুষ্ঠানে তিনি শিক্ষার্থীদের গাছ উপহার দেন।
পরিবেশ আন্দোলন জামালপুর শাখার সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম জাগো নিউজকে বলেন, শিল্পায়ন ও নগরায়নসহ বিভিন্ন কারণে অকারণে যখন অকাতরে চলছে বৃক্ষনিধন, ঠিক সেই মুহূর্তে জুলফিকার আলী লেবু মাস্টারের বৃক্ষরোপণ অভিযান নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় ও অনুকরণীয়। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তার এ অসামান্য অবদানকে সাধুবাদ জানাই। সেইসাথে তার এ উদ্যমী কাজে সরকারি সাহায্য সহযোগিতাও কামনা করেন তিনি।
এ বিষয়ে মেলান্দহ উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল জাগো নিউজকে বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগে তার এ কাজ অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। তিনি যদি কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাহলে উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।
জামালপুর জেলা প্রশাসক মুর্শেদা জামান জাগো নিউজকে বলেন, তার এমন মহতী উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, এক ইঞ্চি জায়গাও খালি রাখা যাবে না। প্রধানমন্ত্রীর এমন কথা বাস্তবায়নে জুলফিকার আলীর উদ্যোগ উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমরা তার এ কাজকে সাধুবাদ জানাই।
এফএ/এমএস