ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

খোলাবাজারেই দাম বেশি, থমকে গেছে ঠাকুরগাঁওয়ে গম সংগ্রহ অভিযান

জেলা প্রতিনিধি | ঠাকুরগাঁও | প্রকাশিত: ০৪:৩৫ পিএম, ১৬ মে ২০২২

ঠাকুরগাঁওয়ে সরকারনির্ধারিত দামের চেয়ে খোলাবাজারে গমের দাম বেশি। এতে কৃষকরা গম বাজারে বিক্রি করায় চলতি মৌসুমে গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে জেলা খাদ্য বিভাগ। উদ্বোধনী দিনে চার উপজেলায় এক টন করে গম সংগ্রহ করে থমকে গেছে জেলার চলতি বছরের গম সংগ্রহ অভিযান।

স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানালেন, গত শনিবার (১৪ মে) খোলাবাজারে প্রতি কেজি গম ৩২ টাকার বেশি দরে বিক্রি হয়েছে। আর সরকারিভাবে প্রতি কেজি গমের দাম ২৮ টাকা। তাই খাদ্য বিভাগের কাছে গম বিক্রি করতে গেলে তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। এজন্য কৃষকরা খাদ্যবিভাগে গম বিক্রি না করে খোলাবাজারেই বিক্রি করছেন।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লাহিড়ী, রাণীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ ও হরিপুরের যাদুরানী হাটে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে ৮০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা গম বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ টাকায়। সে হিসাবে প্রতি কেজি গমের দাম পড়ছে ৩২ টাকা ৫০ পয়সা।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু হোসেন বলেন, চলতি মৌসুমে ঠাকুরগাঁও জেলায় গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে। আর চাষ হয়েছে ৪৫ হাজার ১৯২ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১ লাখ ৯৪ হাজার ৭১ মেট্রিক টন।

এদিকে, ঠাকুরগাঁও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে অভ্যন্তরীণ গম সংগ্রহের আওতায় সারাদেশে ২৮ টাকা কেজি দরে দেড় লাখ মেট্রিক টন গম কেনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সেই অনুযায়ী ঠাকুরগাঁও জেলায় গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৪ হাজার ২৮২ মেট্রিক টন। এরইমধ্যে জেলার পাঁচটি উপজেলায় লটারির মাধ্যমে ২৪ হাজার ২৮২ কৃষককে সরকারি গুদামে গম বিক্রির জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে।

গত ১ এপ্রিল থেকে জেলায় গম সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়; চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত। তবে কার্যক্রম শুরুর ৪১ দিন পর গত বুধবার (১১ মে) পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও জেলার পাঁচটি উপজেলার মধ্যে চারটিতে মাত্র চার মেট্রিক টন গম কিনেছে খাদ্য বিভাগ।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সরকারি গুদামে গম বিক্রির জন্য গত ১৮ এপ্রিল বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় লটারির মাধ্যমে ১ হাজার ৯৭৫ জন কৃষককে নির্বাচিত করা হয়। কিন্তু আগ্রহী কৃষক না পাওয়ায় সেখানে চলতি বছরের গম সংগ্রহ অভিযান উদ্বোধন করা যায়নি।

সদরের ভূল্লী এলাকার কৃষক ধীরেন চন্দ্র বলেন, গত বছর বাজারে দাম কম ছিল তাই সরকারি গুদামে বিক্রি করেছি। কিছু টাকা লাভও হয়েছিল। কিন্তু চলতি বছর সরকার ২৮ টাকা কেজি দরে গম কিনছে, সে হিসেবে বর্তমান বাজার বিবেচনায় প্রতি টনে তিন হাজার টাকার ওপরে লোকসান হবে।

তিনি উল্টো প্রশ্ন করেন, আমরা যেহেতু বাজারেই গমের দাম বেশি পাচ্ছি তাহলে কেন সরকারের কাছে বিক্রি করতে যাবো?

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা রায়পুর গ্রামের তোফায়েল হোসেন বলেন, সরকারিভাবে গমের যে দর দেওয়া হয়েছে তাতে আমাদের লোকসান হবে। তাই আমার পাঁচ বিঘা জমির গম বাজারেই বিক্রি করেছি। আমার মতো অন্য কৃষকরাও তাদের গম খোলা বাজারেই বিক্রি করেছেন।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার খাদ্যগুদামে গম বিক্রির জন্য লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত কৃষক খসিয়ার রহমান। তিনি বলেন, এ বছর ছয় বিঘা জমিতে গম চাষ করেছি। এতে প্রতি বিঘায় ৩০ মন করে ১৮০ মন গম পেয়েছি। কিন্তু সরকারি দরের চেয়ে বাজারে দাম বেশি, তাই সরকারি গুদামে গম বিক্রি করার কোনো আগ্রহ নেই।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিখিল রায় বলেন, সরকারিভাবে ২৮ টাকা কেজিতে গম কিনতে বলা হয়েছে। আর স্থানীয় বাজারে এখন সরকারি দামের চেয়েও বেশিতে গম কেনাবেচা হচ্ছে। একারণে নির্বাচিত কৃষকরা খাদ্যগুদামে গম বিক্রি করছেন না।

গত ১৩ এপ্রিল হরিপুর উপজেলার চৌরঙ্গী এলাকার কৃষক মোজাফ্ফর হোসেনের কাছ থেকে এক মেট্রিক টন গম নিয়ে উপজেলায় গম সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু এরপর ওই উপজেলায় আর কোনো কৃষক সরকারি গুদামে গম বিক্রি করতে আসেননি।

কৃষক মোজাফ্ফর হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, খাদ্যবিভাগের অনুরোধের কারণে গুদামে গম বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। তবে সে সময় বাজারেও গমের দাম কম ছিল। ২৮ টাকায় সরকারি খাদ্যগুদামে গম বিক্রি করে লোকসান হয়নি। তবে এখন সরকারি দামের চেয়ে বাজারে গমের দাম অনেক বেশি।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক মনিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সরকারিভাবে প্রতি কেজি গমের দাম নির্ধারণ করা হয় ২৮ টাকা। আর বর্তমানে জেলার খোলা হাট-বাজারে এখন প্রতি কেজি গম ৩১ বা ৩২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাস্তবতা হচ্ছে- কৃষকরা যেখানে তাদের ফসলের দাম বেশি পাবেন সেখানেই তো তারা বিক্রি করবেন, এটাই স্বাভাবিক। এমন পরিস্থিতি চলমান থাকলে চলতি মৌসুমে জেলায় সরকারিভাবে গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ হওয়ার সুযোগ নেই।

তানভীর হাসান তানু/এমআরআর/এএসএম