ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণে আবার উৎপাদনে স্পন্দন

ইমরান হাসান রাব্বী | প্রকাশিত: ০৪:২৪ পিএম, ০৪ জুলাই ২০২২

ভোজ্যতেলের চলমান সংকট মুহূর্তে আশার আলো নিয়ে আবারো বাজারে এসেছে স্পন্দন রাইস ব্র্যান অয়েল। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেই ছয় বছর পর ২ জুলাই থেকে মিলছে নিত্য প্রয়োজনীয় এ পণ্য। ফলে বাজারে ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণে স্পন্দন ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী প্রতিষ্ঠানটি।

গ্যাস সংকটের কারণে দেশের প্রথম এবং সবচেয়ে বড় রাইস ব্র্যান অয়েল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মিনোরি বাংলাদেশ লিমিটেডের উৎপাদন ব্যাহত হলেও ২৮ জুন থেকে নিজস্ব এলপিজি গ্যাস প্লান্টের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা উৎপাদন শুরু হয়েছে। ফলে দিনে ৪০ টন তেল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে তেল প্রস্তুত, পরিশোধন ও বোতলজাত শেষে বাজারজাত শুরু করেছে মিনোরি।

জাপান-বাংলাদেশ যৌথ মালিকানার প্রতিষ্ঠান মিনোরি বাংলাদেশ লিমিটেডের রাইস ব্র্যান অয়েলের যাত্রা শুরু ২০০৮ সালে। শেরপুর সদর উপজেলার শেরিপাড়ায় গড়ে তোলা হয় কারখানাটি। বেসিক ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে দুদকের মামলায় জেলে যেতে হয় প্রতিষ্ঠান প্রধান সৈয়দ হাসিবুল গনি গালিবকে। দীর্ঘদিন জেলে থাকার পর জামিনে মুক্তি পেয়ে দেশের বাইরে চলে যান তিনি।

jagonews24

বিপুল সম্ভাবনা নিয়ে যাত্রা শুরুর এক দশক না যেতেই মুখ থুবড়ে পড়ে কারখানাটি। পরে মুনাফা না থাকায় পিছু হটতে শুরু করে প্রতিষ্ঠান, বন্ধ হয়ে যায় কারখানা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২০ সালে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নেতৃত্বে পরিবর্তনের পর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন বন্ধ হয়ে যাওয়া কোম্পানিগুলো নতুন করে চালু করতে পর্ষদ পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় এমারেল্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয় মিনোরি বাংলাদেশের কাছে। গত জানুয়ারিতে ক্রুড অয়েল উৎপাদন শুরু হলেও গ্যাস কম থাকায় উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটে। এই ক্রুড অয়েল মাছের ও মুরগির খাদ্য তৈরির কাজে ব্যবহার হচ্ছিল। পরে কারখানার সব যন্ত্রপাতি মেরামত করে তেল উৎপাদন শুরু হয়।

এদিকে ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর পুনরায় চালুর পর প্রতিদিন ৮০ লাখ টাকায় ২০০ টন কাঁচামাল কিনতে হতো। এর মধ্যে ১৫৫ টন ফিশ ফিড ও ৪০ টন তেল উৎপাদনের কথা থাকলেও প্রয়োজনীয় গ্যাস সংকটের কারণে দিনে মাত্র ১২ ঘণ্টা উৎপাদন হচ্ছিলো। তবে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক ও পর্যাপ্ত কাঁচামাল পেয়েও তিতাস গ্যাসের সংকটের কারণে মাত্র ১৮ টন তেল উৎপাদন হচ্ছিলো। যাতে প্রতিদিন লোকসান গুনতে হয়েছে প্রায় ছয় লাখ টাকা।

তবে চলতি বছরের ২৮ জুন নিজস্ব এলপিজি গ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপনের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা উৎপাদন, শোধন ও বোতলজাত শুরু করেছে মিনোরি বাংলাদেশ লিমিটেড।

jagonews24

আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ার পর দেশের চাহিদা পূরণে সরকার এবার দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোয় নজর দিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে মোট ভোজ্যতেলের এক-তৃতীয়াংশ ধানের কুঁড়ার তেল দিয়ে পূরণের কথা জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

আড়াইশ শ্রমিকের কর্মযজ্ঞে ২৪ ঘণ্টা উৎপাদনে বাজারে বেশ ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে স্পন্দন, এমনটাই প্রত্যাশা করছেন মিনোরি বাংলাদেশ লিমিটেডের শেরপুর কারখানা ইনচার্জ ক্যাপ্টেন আহসান হাবীব বেগ।

তিনি বলেন, গত ছয় মাসে নানা প্রতিবন্ধকতা আর পরীক্ষার পথ পাড়ি দিয়ে এখন আমরা হাঁটা শুরু করেছি। তিতাস গ্যাস সংকটে আমরা নিজেরাই এলপিজি প্ল্যান্ট বসিয়েছি। এখন থেকে আমরা উৎপাদন, শোধন ও বোতলজাত করে ক্রেতার কাছে পৌঁছাতে পারবো।

শেরপুরের ব্যবসায়ীরা জানান, সয়াবিন ও পাম অয়েলের দামের ঊর্ধ্বগতির বাজারে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন ও শোধনকৃত রাইস ব্র্যান তেলের বাজার দ্রুত সৃষ্টি হবে।

পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের আহ্বায়ক মেরাজ উদ্দিন বলেন, শেরপুরের ধানকলে উৎপাদিত কুঁড়া দিয়েই রইস ব্র্যান তেলের শতভাগ উৎপাদন সম্ভব। এতে স্থানীয় বাজারেও ভোজ্যতেলের ঘাটতি পূরণ সম্ভব হবে।

jagonews24

তিনি আরও বলেন, সয়াবিন, সরিষা, সূর্যমুখী ও পাম অয়েলসহ এখন পর্যন্ত যত রকমের ভোজ্যতেল ব্যবহার হচ্ছে, তার কোনোটির কাঁচামালই দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। ফলে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ সচল রাখতে কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। এর বিপরীতে রাইস ব্র্যান অয়েলের কাঁচামাল অভ্যন্তরীণ উৎস থেকেই পুরোপুরি যোগান পাওয়া যায়। স্থানীয় ধানকলে উপজাত হিসেবে এটি তৈরি হয়। এর উৎপাদন ও শোধন সম্ভব হলে কম দামে ভোজ্যতেল বাজারজাত সম্ভব।

বাংলাদেশ শিল্প ও বিজ্ঞান গবেষণা সংস্থা (বিসিএসআইআর) বলছে, ভোজ্যতেলে যেসব খাদ্যগুণ থাকা দরকার তা জলপাই তেলের পর সবচেয়ে বেশি রয়েছে রাইস ব্র্যান অয়েলে। এতে পর্যাপ্ত ভিটামিন ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে। এছাড়া এ তেল শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে।

এফএ/এএইচ/এএসএম