কুড়িগ্রামে ৩ দিন ধরে মৃদু তাপপ্রবাহ, বিপর্যস্ত জনজীবন
গরম থেকে রেহায় পেতে হাত পাখার বাতাস করছেন তারা
টানা তিনদিন ধরে উত্তরের সীমান্তঘেঁষা জেলা কুড়িগ্রামে বয়ে যাচ্ছে মৃদু তাপপ্রবাহ। বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, শুক্রবার ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সবুর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, তাপমাত্রা ৩৬-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে বলা হয় মৃদু তাপপ্রবাহ। ৩৮-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে বলা হয় মাঝারি তাপপ্রবাহ। ৪০-৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বলা হয় তীব্র তাপপ্রবাহ।

এদিকে টানা তিনদিন ধরে চলমান তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামবাসীর জনজীবন। গরমে প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না মানুষজন। বিশেষ করে বিপাকে পড়েছেন ঘোড়ার গাড়িচালক, ভ্যানচালক, রিকশাচালক, খেটেখাওয়া, দিনমজুরসহ নিম্ন আয়ের মানুষজন। প্রখর রোদ ও তাপ উপেক্ষা করে ভোগান্তি নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে দেখা গেছে এসব শ্রমজীবীদের।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ঘোড়ার গাড়িচালক শহিদুল জানান, তারা দুই ভাই। একটি মাত্র ঘোড়ার গাড়ির রোজগারে তাদের ১০ সদস্যের সংসার চালাতে হয়। কিন্তু কয়েক দিন থেকে অতিরিক্ত গরমের কারণে ঠিকমতো ভাড়া পরিবহন করতে পারছেন না। আয় করতে না পারলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।

গরমে তিন দিন ধরে জ্বর ও সর্দিতে ভোগা নাগেশ্বরীর ভিতরবন্দের আবুল হোসেন (৫৫) মাথায় গামছা বেঁধে ভ্যান গাড়ি নিয়ে বের হন। কিন্তু বিকেল ৩টা পর্যন্ত কোনো ভাড়া মেলেনি তার। এতে করে শূন্য ভ্যানগাড়ি নিয়ে জেলা শহরে আসছিলেন তিনি।
আবুল হোসেন বলেন, ‘তিন দিন ধরে জ্বর ও সর্দিতে ভোগার পর ভ্যানগাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ি। কিন্তু দুই ঘণ্টা পার হলেও ভাড়া মেলেনি। গরমে প্রচণ্ড মাথা ব্যথা করছে। কিছু টাকা পেলে চাল কিনে বাড়ি ফিরতে হবে।’
অন্যদিকে, প্রচণ্ড গরমে তৃষ্ণার্ত অনেক মানুষকে শরবত বিক্রেতার দোকানের দিকে ছুটতে দেখা গেছে। শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষজন যে যেখানেই পাচ্ছেন শরবত কিংবা ফলের রস কিনে খাচ্ছেন।

টানা কয়েকদিন ধরে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে শহরের পাশাপাশি নাজেহাল অবস্থা গ্রামের মানুষজনেরও। অনেকেই একটু স্বস্তির আশায় হাতপাখা দিয়ে বাতাস পাওয়ার চেষ্টা করছেন। তাতেও স্বস্তি মিলছে না।
রৌমারী উপজেলার দাঁত ভাঙ্গা ইউনিয়নের ছাটকড়াই বাড়ী শাহজাহান আলী, কুদ্দুস মোল্লা ও ছকমল হোসেন বলেন, কয়েক দিন থেকে অতিরিক্ত গরমে ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি মিলছে না। অতিরিক্ত গরমে কাজকর্ম করতে পারছি না। তাই হাত পাখার বাতাসে একটু স্বস্তি পাওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু এতদিন ধরে তাপপ্রবাহের কারণে শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’
আবহাওয়ার পূর্বাভাস সম্পর্কে সবুর হোসেন বলেন, ‘শনিবার থেকে আগামী শনিবার পর্যন্ত বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন জায়গায় দু-একদিন বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে রাতের তাপমাত্রা কিছুটা হ্রাস পেতে পারে। তবে বৃষ্টিপাত না হলে মৃদু তাপপ্রবাহ আরও কয়েকদিন চলমান থাকার আশঙ্কা রয়েছে।’
মাসুদ রানা/এসজে/এমএস