হাসপাতালের জেনারেটর নষ্ট, ভরসা মোমবাতি-মোবাইলের টর্চ
বিদ্যুৎ চলে গেলে মেলান্দহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগীদের ভরসা মোমবাতি বা মোবাইলের টর্চ
দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জেনারেটর। এর ফলে চলমান বিদ্যুৎ বিভ্রাটের মধ্যে বিপাকে পড়ছেন রোগী ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা। রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে চিকিৎসক এবং নার্সদের মোবাইল ফোনের টর্চ কিংবা মোমবাতি জ্বালিয়ে সেবা দিতে হয়।
তাদের দাবি, বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করা হলেও ব্যাটারির ধারণক্ষমতা কম থাকায় বেশিক্ষণ আলো জ্বলে না। ফলে চিকিৎসা দিতে তাদের খুবই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, জেলার সাত উপজেলার মধ্যভাগে মেলান্দহ অবস্থিত হওয়ায় প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে শতশত রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। তবে চলমান বিদ্যুৎ বিভ্রাটে সরকারিভাবে জ্বালানি তেলের বরাদ্দ না থাকায় জেনারেটর চালানো যাচ্ছে না। এমনকী জেনারেটর চালানোর লোকবলও নেই। দীর্ঘদিন ধরে জেনারেটরটির যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে পড়ে আছে। এছাড়া সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকলেও ব্যাটারির ধারণক্ষমতা কমে যাওয়ায় এখন আর তেমন কাজে লাগে না। তাই রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে রোগীসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের অন্ধকারে থাকতে হয়। এসময় বাধ্য হয়ে মোবাইলের টর্চ লাইট বা মোমবাতি জ্বালাতে হয়।

রোববার (৩১ আগস্ট) রাতে সরেজমিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যুৎ চলে গেলে বেশির ভাগ শয্যার পাশে মোবাইল ফোনের লাইট ও মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখা হয়েছে। নারী ওয়ার্ডে সৌর বিদ্যুতের একটি এলইডি বাল্ব জ্বলছিল, তাও নিভু নিভু। পুরুষ ওয়ার্ডে একটি রিচার্জেবল এলইডি বাল্ব থাকলেও কিছুক্ষণ পরপর আলো জ্বলছে আর নিভছে। এ কারণে অন্ধকারেই রোগী ও তাদের স্বজনরা বসে আছেন। অনেকে মোমবাতি বা মোবাইল ফোনের লাইট জ্বালিয়ে খাবার খাচ্ছেন।
আরও দেখা যায়, জরুরি বিভাগ ও নার্সদের রুমেও একই অবস্থা। সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকলেও অধিকাংশ লাইট বন্ধ। এক ঘণ্টার লোডশেডিং হলে তো কথাই নেই। পুরো হাসপাতাল অন্ধকারে ছেয়ে যায়।
হাসপাতালের নারী ওয়ার্ডের নাসিমা, রহিমা, কহিনুরসহ অনেকে জানান, কয়েকদিন হলো তারা হাসপাতালে রোগী ভর্তি করিয়েছেন। প্রতিদিন রাতেই বিদ্যুৎ চলে যায়। এসময় মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে রাখতে হয়। মাঝে মাঝে মোমবাতি জ্বালিয়ে খাবার খেতে হয়।
কথা হয় হাসপাতালে আসা রহিম মিয়া নামে স্থানীয় এক রোগীর সঙ্গে। তিনি বলেন, মাঝে মাঝে ওয়ার্ডে একটু আলোও জ্বলে না। দিনের বেলা তবুও কোনোরকমে চলা যায়। রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে অন্ধকারেই ওষুধ খেতে হয়। এ গরমে বিদ্যুৎ না থাকলে রোগীরা আরও ভোগান্তিতে পড়ছেন।
জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক জামাল উদ্দিন বলেন, বিদ্যুৎ চলে গেলে চিকিৎসাসেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকলেও ব্যাটারির পাওয়ার কমে যাওয়ায় আলো কম হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. গাজী রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, দেশের বিদ্যুতের চলমান সংকটের কারণে এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। হাসপাতালে একটি জেনারেটর রয়েছে, তবে তা নষ্ট। একটি সৌর বিদ্যুৎ থাকলেও ব্যাটারি সমস্যার কারণে অনেক সময় জ্বলে না। তবে জেনারেটরটি মেরামত করা হচ্ছে। মেরামত হয়ে গেলে এ সংকট কেটে যাবে।
তিনি আরও বলেন, রিচার্জেবল এলইডি বাল্ব বেশ কয়েকবার লাগানো হয়েছিল। সেগুলো থাকে না। চুরি হয়ে যায়, তাই এ সমস্যা।
মো. নাসিম উদ্দিন/এমআরআর/জিকেএস