ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

শিক্ষক দম্পতির মৃত্যু

স্কুলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে নজর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর

আমিনুল ইসলাম | গাজীপুর | প্রকাশিত: ০৯:৩৪ এএম, ২২ আগস্ট ২০২২

গাজীপুরে শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে পুলিশ অপেক্ষা করছে ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা রিপোর্টের জন্য। এছাড়া গত তিনদিনে বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। এছাড়া স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ, আয়-ব্যয়ের হিসাবসহ নানা দিক নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।

শিক্ষক দম্পতির মৃত্যু কিভাবে হয়েছে তা জানতে পুলিশ, পিবিআই, র্যাব, সিআইডিসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। তবে রোববার (২১ আগস্ট) সন্ধ্যা পর্যন্ত আইনশৃংখলা বাহিনীর কোনো সংস্থাই মৃত্যুর কারণ উদঘাটন এবং এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তাদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে বিষক্রিয়াকে দায়ী করা হলেও স্কুলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে আইনশৃংখলার বিভিন্ন সংস্থা।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন গাছা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নন্দলাল চৌধুরী বলেন, শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানের জন্য পুলিশের বেশ কয়েকটি টিম কাজ করছে। তবে দুইজনের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এবং ভিসেরা রিপোর্ট হাতে পাওয়া গেলে তাদের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। আর তখন ওই কারণের সূত্র ধরে তদন্ত কাজ এগিয়ে নেওয়া যাবে।

জেলা পিবিআইয়ের এক কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ওই শিক্ষক দম্পতিতে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে এ বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত। তবে তাদের কিভাবে হত্যা করা হয়েছে তার তদন্ত চলছে। শিক্ষক দম্পতির কর্মস্থলে কোনো বিরোধ ছিল কি না তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিক ধারণা ও বিভিন্ন আলামতে মনে করা হচ্ছে তাদের বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে। তবে এ বিষক্রিয়া কিভাবে কাদের মাধ্যমে কখন প্রয়োগ করা হয়েছে সে তথ্য উদঘাটনের জন্য কাজ করা হচ্ছে।

শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মতিউর রহমান ওরফে বি.কম মতি বলেন, তিনি ১৩ বছর ধরে ওই বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি পদে আছেন। সেখানে শিক্ষকদের মাঝে কোনো বিরোধ তার জানা নেই। এ পরিচালনা পরিষদের সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের সম্পর্কও ভালো। তিনি শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটন করে দোষিদের বিচার দাবি করেন।

এদিকে মামলার বাদী নিহত প্রধান শিক্ষকের ভাই আতিকুর রহমান বলেন, ছোট ভাইয়ের স্ত্রী আমজাদ আলী সরকার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মাহমুদা আক্তার জলি তার স্কুল ছুটি হওয়ার পর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ে যান। সেখানে স্বামী প্রধান শিক্ষকসহ কয়েকজন শিক্ষক স্থানীয় জাহাঙ্গীর আলমের দোকান থেকে মিষ্টি আনিয়ে খান। এ সময় মাহমুদা আক্তার জলি স্কুলে চা পান করেন। পরে তারা বাড়ির উদ্দেশ্যে স্কুল ত্যাগ করেন। স্কুল ত্যাগ করে বগারটেক আসার পথে প্রায় ২৭ মিনিট সময় লেগেছে। এ সময়টিতে তারা কী করেছেন, তাদের গাড়িতে কেউ উঠেছিলেন কিনা বা তারা কোথাও নেমেছিলেন কিনা তার সব কিছু পুলিশ তদন্ত করছে।

তিনি জানান, তার কর্মস্থলে সহকর্মী বা বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সঙ্গে অভ্যন্তরীণ কোনো দ্বন্দ্ব ছিল কিনা সে বিষয়টিও আইনশৃংখলা বাহিনী গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে। তবে শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুকে তিনি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে ধারণা করছেন।

এদিকে শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর ঘটনায় রোববারও টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় বিক্ষোভ এবং মানববন্ধন করেছে শহীদ স্মৃতি স্কুলের শিক্ষার্থীরা। তারা তাদের শিক্ষক হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. হাসিবুল আলম বলেন, ঘটনাটি পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে যাচ্ছে। খুব দ্রুততম সময়ে এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে।

টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জিয়াউর রহমান মামুন (৪৮) ও তার স্ত্রী টঙ্গীর আমজাদ আলী সরকার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মোছা. মাহমুদা আক্তার জলি (৩৫) নিজেদের প্রাইভেটকারে বাসায় ফেরার পথে বুধবার সন্ধ্যার পর নিখোঁজ হন। পরদিন বৃহস্পতিবার ভোরে তাদের সঙ্গাহীন অবস্থায় ওই প্রাইভেটকারের ভেতর দেখতে পান তাদের ছেলে ও পরিবারের সদস্যরা।

ওই দম্পতিকে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। পরে পুলিশ মরদেহ দুটি অ্যাম্বুলেন্সে করে গাছা থানায় নিয়ে যান। এ ঘটনার পর পুলিশ শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে কাজ শুরু করে। নিহতের পরিবারের স্বজনদের দাবি ওই শিক্ষক দম্পতিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

এফএ/জেআইএম