ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

এশিয়ার প্রথম পানি জাদুঘর এখন টিকিয়ে রাখাই কষ্টকর

আসাদুজ্জামান মিরাজ | প্রকাশিত: ১০:৫৩ এএম, ২৯ আগস্ট ২০২২

এক জায়গায় দেখা মেলে ৮৭ নদীর পানি। শুধু তাই নয়, জানা যায় নদীর ইতিহাস-ঐতিহ্য ও নদী তীরবর্তী মানুষের জীবনযাত্রার নানা ছবি ও তথ্য। তবে সময়ের পরিক্রমায় এখন আর ভালো নেই পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় অবস্থিত সেই পানি জাদুঘর ও এরসঙ্গে জড়িতরা। যা এশিয়ার প্রথম আর বিশ্বের সপ্তম।

২০১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের অর্থায়নে ‘আভাস’ প্রকল্পের অংশ হিসেবে নির্মাণ করা হয় এই জাদুঘরটি। আর এর প্রধান কারিগর হিসেবে কাজ করেন উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাঁচ গ্রামের ৪৮৫ জন নারী-পুরুষ মিলে গড়ে ওঠা একটি আত্ম-নির্ভরশীল সমাজ সেবা সংগঠন ‘উপকূলীয় জনকল্যাণ সংঘ’।

jagonews24

এই সংগঠনের সদস্যরা মহাসড়কের পাশে পাখিমারা বাজার সংলগ্ন এলাকায় নিজেদের ১৫ শতাংশ জায়গা কিনে অস্থায়ীভাবে গড়ে তোলেন এ জাদুঘরটি।

উপকূলীয় জনকল্যাণ সংঘের সভাপতি মো. জয়নাল আবেদীন জাগো নিউজকে জানান, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, পানি প্রবাহে বাধা তৈরি করা ও অতিমাত্রায় পরিবেশ দূষণের কারণে নদীগুলো দিন দিন তার স্বকীয়তা হারাচ্ছে। পানির কৃত্রিম সংকট ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বড় ধরনের পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে প্রভাব পড়েছে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি, সংস্কৃতি, মনস্তত্ত্ব ও সামাজিক কাঠামোর ওপর।

jagonews24

তিনি বলেন, পানি, বায়ু ও সূর্যের রশ্মি হলো স্বীকৃত প্রাকৃতিক সম্পদ। তাই এ সম্পদের যথাযথ ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই এ জাদুঘরটি স্থাপন করেছিলাম। কিন্তু এটিকে এখন টিকিয়ে রাখা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে আমাদের জন্য। সরকারি সুনজর না থাকা, পর্যাপ্ত পর্যটক না পাওয়া এবং পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা থেকে দূরত্বটা বেশি হওয়াসহ বেশকিছু কারণে আমরা ভালো নেই।

তিনি আরও জানান, পানি সম্পদের দিক বিবেচনায় মানুষের চিন্তার প্রসার ঘটানোর ব্যবস্থা করে জাদুঘরে প্রাকৃতিক পরিবেশের বিভিন্ন চিত্র, উপকরণ তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। এশিয়া মহাদেশের প্রথম পানি জাদুঘর এটি। প্রথম দিকে দেখার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা ভিড় করলেও এখন পর্যটক পাচ্ছি না। সরকারের কাছে আবেদন পানি জাদুঘরটি যেন কুয়াকাটার কাছাকাছি নেওয়া হয়।

jagonews24

তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাদুঘরে প্রবেশ ফি শিক্ষার্থীদের জন্য ১০ টাকা আর অন্যান্যদের জন্য ২০ টাকা। এখানে ঢুকলেই চোখে পড়বে সাদা কাঁচের বোতলে সারি সারি সাজানো দেশি-বিদেশি ৮৭টি নদীর পানি। যার মধ্যে নেপাল, ভারত, ভুটান, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করা আন্তঃদেশীয় ৫৭টি নদ-নদীর পানি এবং ৩০টি দেশীয় নদ-নদীর পানি রয়েছে।

পানি জাদুঘরটি দেখতে আসা পর্যটক এসএম আলমাস বলেন, ‘এখানে আমি এই প্রথম এলাম। এসে যা দেখলাম তা রীতিমতো অবাক করার মতো। কারণ এশিয়া মহাদেশের ৮৭টি নদীর পানি বোতলবন্দি। একদিকে এত নদীর পানি দেখা অন্যদিকে অনেকিছু শেখার একটি জায়গা এটা। তাই এটাকে আরো সংস্কার করতে পারলে দেশ ও জাতির শেখার বড় একটি জায়গা তৈরি হবে।

জাদুঘরে গেলে যা দেখা যাবে

নানা ডিজাইনে সাজানো দোতলা টিনের ঘরের সামনে বালুর ওপর স্থাপন করা রয়েছে একটি নৌকা, যা শিকল দিয়ে নোঙর করা রয়েছে। বর্তমানে দেশে মানবসৃষ্ট নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে প্রায় শুকিয়ে যাওয়া নদ-নদীতে নৌকা আটকে থাকার বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এতে।

jagonews24

ঘরটির দোতলায় প্রায় ৫০০ বর্গফুটের একাংশে সাদা বোতলের গায়ে নদীর নাম ঠিকানা লেখা রয়েছে। আর ভেতরে নদীর পলিসহ পানি দেখা যাবে। বিভিন্ন স্থানে সারি সারি সাজানো রয়েছে বাংলাদেশের হারানো ঐতিহ্য ও গ্রাম বাংলার মানুষের জীবিকা অর্জনের নানা উপকরণ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-মাছ শিকারের নৌকা, চাঁই, ঝাঁকি জাল, খুচনি জাল, পলো, কাঁকড়া শিকারের চাঁই ও তাঁত বোনার মেশিন।

কৃষিজমির উৎপাদিত ফসল সংরক্ষণের জন্য বাঁশের তৈরি ডোলা, মুড়ি ভাজার তলছা, ঝারড়া, মাটির তৈরি রান্নার হাঁড়ি-পাতিল, মাটির তৈরি মাইড, খাবারের থালা ও বাসন, পিতলের তৈরি থালা, বাটি, বদনা, মগসহ নানান উপকরণ রয়েছে এই জাদুঘরে।

দেয়ালে শোভা পাচ্ছে দেশীয় খাল, নদ-নদীর ছবি, বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, জেলে এবং কুমার, তাঁতিসহ সব স্তরের মানুষের জীবনধারণ ও জীবিকা অর্জনের নানা শিল্পকর্ম।

jagonews24

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) প্রেসিডেন্ট রুমান ইমতিয়াজ তুষার জাগো নিউজকে জানান, জাদুঘরটি আমাদের জন্য গর্বের জায়গা, মানুষ ৮৭টি নদীর পানির সঙ্গে পরিচিতি হয়। তাই এটাকে সংস্কার ও সম্মৃদ্ধ করা প্রয়োজন। কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের ওখানে যেতে আলাদা একটি সময় বের করতে হয় যে কারণে অনেকেই যাচ্ছে না। তবে এটা যদি কুয়াকাটার কাছাকাছি হতো তাহলে এটার পরিচিত আরো বেশি হতো।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আভাস’র নির্বাহী পরিচালক জাহিমা সুলতানা কাজল জাগো নিউজকে বলেন, আমরা মানুষকে নদ-নদী সম্পর্কে সচেতন করতে ও পরিবেশ রক্ষায় এই উদ্যোগটা হাতে নিয়েছিলাম। প্রথমে আভাস সার্বিক দায়িত্ব নিয়ে পরিচালনা করায় আমরা বেশ সাড়া পেয়েছি। তবে এখন অ্যাকশন এইড নিজেরা তদারকি করছে, তারা প্রতিবছর সংস্কারও করছে। কিন্তু তারপরও দিনদিন এখানে পর্যটকদের আগমন কমছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে যে জমিতে জাদুঘরটি রয়েছে এটি আসলে অস্থায়ীভাবে আমরা নিয়েছিলাম। এখন যদি সরকার পানি যাদুঘরের জন্য কুয়াকাটার কাছাকাছি কিছু জমি বরাদ্দ করে দেয় তাহলে আমরা জাদুঘরটি সেখানে নিয়ে স্থায়ীভাবে গড়ে তুলতে পারবো এবং এখন প্রতি শুক্রবার বন্ধ রাখ হয়। এটাকে শুক্রবার খোলা রাখা হলে আশানুরূপ পর্যটক মিলবে।

এফএ/জিকেএস