ভরা মৌসুমে গাইবান্ধায় সার সংকট
আমন চাষে ভরা মৌসুমে গাইবান্ধায় সারের সংকট দেখা দিয়েছে। ডিলারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও সার পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ কৃষকদের। যাও মিলছে, তা অতিরিক্ত দামে কিনতে হচ্ছে। কিন্তু দেওয়া হচ্ছে না রসিদ।
তবে ডিলারদের দাবি, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) গোডাউন থেকে যে পরিমাণ সার বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে তা দেয় কৃষকদের চাহিদা মেটাতে পারছেন না তারা।
জুলাইয়ের শুরু থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আমন ধানের ভরা মৌসুম। এ ধানের চারা রোপণের সময় জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে আগস্ট পর্যন্ত। চারা রোপণের পর ইউরিয়া সার ব্যবহার করতে হয়। আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ সার হচ্ছে এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) ও টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট)। এ বছর চারা রোপণ করলেও চাহিদামতো এমওপি ও টিএসপি সার জমিতে দিতে পারছেন না কৃষকরা। তাদের দাবি, বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেও চাহিদামাফিক সার মিলছে না। সামান্য যা মিলছে, তাও কিনতে হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে।
সদর উপজেলার ত্রিমোহনীর কৃষক মাজেদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ডিলারের কাছে গেলে কয় সার নাই। আমন চারা রোপণ করলেও জমিতে পরিমাণমতো সার দিবার পারি নাই। সারের অভাবে এই আবাদ যে কেমন হবে তা বুঝতে পারছি না।’
ওই এলাকার কৃষক মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘ডিলারদের দোকানে দোকানে ঘুরেও চাহিদামাফিক সার পাইনি। যাও পাইছি তাও কেনার (কেনা) লাগছে অনেক বেশি দাম দিয়া।’

ফুলছড়ি উপজেলার গুনভরি গ্রামের কৃষক জিয়াউর রহমান বলেন, ‘যে পরিমাণ জমিতে আমন চারা লাগাইছি তাতে দরকার তিন বস্তা সার। কিন্তু পাইছি দুই বস্তা। দুই বস্তা সার দিয়ে তিন বস্তার কাম সারছি, তাহলে বোঝেন? সার আছে ডিলারের দোকানোত (দোকানে), কিন্তু দেয় না।’
একই এলাকার কৃষক নয়া মিয়া বলেন, ‘বাহির থাকি হাফবস্তা সার কিনি আনলেম সাড়ে ছয়শ ট্যাকা দিয়া। ডিলারদের কাছে গেলে কয় সার নাই। কী করমো? জীবনতো বাঁচান লাগবে। আবাদ না হলে খামো কী? তাই বাধ্য হইয়্যা বেশি দাম দিয়ে সার কিনি আনলেম।’
কথা হয় ফুলছড়ির উপজেলার সারের খুচরা বিক্রেতা সিয়াম স্টোরের তরিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দুই এক বস্তা সার এনে বিক্রি করি। এখন সার দিচ্ছে না ডিলাররা। ফলে আমরাও সার বিক্রি করতে পারছি না।’
সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে ও ভাউচার ছাড়া সার বিক্রির এক প্রশ্নের জবাবে সদর উপজেলার সার ডিলার সবুর অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী শাহাবুদ্দিন সরকার নিলু জাগো নিউজকে বলেন, কৃষকদের মাঝে সার বিতরণের সময় ভাউচার না দিলেও পরে প্রতিবেদনের জন্য ভাউচার তৈরি করে তা কৃষি বিভাগকে জমা দিতে হয়।

সার ডিলার মের্সাস আব্দুল লতিফ হক্কানির ম্যানেজার মিলন মিয়া বলেন, ‘আমাদের গোডাউনে সার মজুত রাখার কোনো সুযোগ নেই। কৃষি বিভাগ থেকে দেওয়া বরাদ্দ অনুযায়ী পাওয়া সার কৃষি কর্মকর্তার উপস্থিতিতে সঙ্গে সঙ্গে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়। তবে কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী আমরা সার বিতরণ করতে পারছি না। বরাদ্দের থেকে চাহিদা অনেক বেশি।’
এ বিষয়ে গাইবান্ধা বিসিআইসি বাফার গোডাউনের ইনচার্জ নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘সারের কোনো সংকট নেই। কৃষি বিভাগ থেকে যা চাহিদা দেওয়া হয়েছে সে অনুযায়ী ডিলারদের সার বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর যা মজুত আছে তাতে আগামী দুই মাস কোনো সমস্যা হবে না।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বেলাল হোসেন বলেন, ‘কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী বিসিআইসিকে চাহিদা দেওয়া হয়। চাহিদামতোই কৃষকদের মাঝে সার বিতরণ করা হয়েছে। সারের জন্য কৃষিতে কোনো প্রভাব পড়বে না।’
বিসিআইসির তথ্যমতে, গত মাসে সাত হাজার ৩২৫ মেট্রিক টন সার বরাদ্দ দিয়েছে বিসিআইসি। এর সবই ডিলারদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে জেলায় সার বরাদ্দ হয়েছে চার হাজার ৪৬৫ মেট্রিক টন। তা পর্যায়ক্রমে বিতরণ করবে বিসিআইসি।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক অলিউর রহমান বলেন, পর্যাপ্ত সার মজুত আছে। তবে সার নিয়ে যদি কেউ সমস্যা তৈরি করতে চান তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসআর/জেআইএম