ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

একটি স্কুলও নেই ‘দক্ষিণ কালীর আলগা’ চরে

জেলা প্রতিনিধি | কুড়িগ্রাম | প্রকাশিত: ০৪:৫৪ পিএম, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

ব্রহ্মপুত্র নদের মাঝে জেগে ওঠা একটি চরের নাম ‘দক্ষিণ কালীর আলগা’। চরটি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রপুর ইউনিয়নের কালীর আলগা মৌজায় অবস্থিত হওয়ায় এটি ‘দক্ষিণ কালীর আলগা’ নামে পরিচিত। নদীভাঙনের শিকার হয়ে ভিটেমাটি হারা দুই শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে এই চরে। এরা সবাই বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা বাস্তুহারা পরিবার।

এসব পরিবারে রয়েছে ১৫০-১৮০ জন শিশু-কিশোর। পরিবারের সঙ্গে তারাও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছেড়ে এখানে এসেছে। তবে চরটিতে কোনো স্কুল-মাদরাসা নেই। ফলে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া শিশুরাও পড়েছে চরম বিপাকে। এ অবস্থায় সন্তানদের পড়াশোনা ও আগামী ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন দক্ষিণ কালীর আলগার অভিভাবকরা।

চরটি ঘুরে দেখা যায়, অনেকটা দ্বীপের মতো দেখতে। চারদিকে থই থই পানির মাঝে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে ঘরবাড়িগুলো। নৌকা ছাড়া যাওয়ার কোনো উপায় নেই। এখানেই ২০০টি পরিবার ঠাঁই নিয়েছে। এখানকার বাসিন্দাদের কেউ দিনমজুর, কেউ গরু-ছাগল পালন করে আবার কেউবা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎ কোনো নাগরিক সুবিধা পান না তারা।

হাতেগোনা কয়েকটি বাড়িতে সৌরবিদ্যুৎ থাকলেও কারও বাড়িতে নেই টেলিভিশন কিংবা ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি। আধুনিকতার ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত তারা। চরের লোকসংখ্যা তিন শতাধিক হলেও নদ পাড়ি দিয়ে মূল ভূখণ্ডের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারে না কেউ। ফলে এখানকার শতাধিক শিশু-কিশোর প্রাথমিক শিক্ষার গণ্ডি পার হতে পারছে না। আবার লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া অনেক শিক্ষার্থীর পড়াশোনাও এখন বন্ধ।

কথা হয় কালীর আলগা চরের শিশু শিক্ষার্থী আল আমিনের সঙ্গে। সে জাগো নিউজকে বলে, ‘আমি আগে কালীর আলগা স্কুলে ক্লাস ফোরে পড়তাম। নদী ভাঙনের কারণে এ চরে এসেছি। এখানে কোনো স্কুল নেই। এক বছর থেকে আমার পড়াশোনা বন্ধ।’

সুমেশ আলী নামের আরেকজন বলে, ‘এই চরে স্কুল নেই। এখান থেকে অন্য স্কুল যেতে ৫-৬ কিলোমিটার নৌকায় করে যেতে হয়। আবার সবসময় নৌকাও থাকে না। এত বড় নদী পার হতেও ভয় লাগে। আমরা পড়াশোনা করতে চাই।’

চরের একজন অভিভাবক মল্লিকা বেগম বলেন, ‘আমাদের একটা স্কুল দরকার। এত বড় গ্রামে কোনো স্কুল না থাকায় আমাদের বাচ্চাগুলো দিনদিন অভদ্র হয়ে যাচ্ছে। বাচ্চাগুলো নিয়ে খুবই দুঃশ্চিন্তায় আছি। আমাদের সামর্থ্যও নেই যে এলাকার বাইরে পড়াশোনা করাবো।’

সাবেক ইউপি সদস্য আসাদ আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘নদনদী ভাঙনের কারণে আমরা বিভিন্ন চর থেকে এখানে এসেছি। তবে এখানে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। আমাদের একটা স্কুল খুব দরকার।’

যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর মিয়া বলেন, এখানে একটি মসজিদ ছাড়া কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। স্কুল না থাকায় চরের দুইশোর মতো শিশু পড়াশোনা করতে পারছে না। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিওকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

এ বিষয়ে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাসেদুল হাসান ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এসআর/এএসএম