সীমান্তে ছাত্রীদের ভরসা বাইসাইকেল
সাইকেল চালিয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে ছাত্রীরা
বছর পাঁচেক আগেও সীমান্ত এলাকার রাস্তাঘাট ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল অনুন্নত। একইসঙ্গে ছিল সামাজিক কুসংস্কার। নারী শিক্ষাকে কেউ ভালো চোখে দেখতেন না। সেখানে সাইকেল চালানো ছিল আকাশ কুসুম চিন্তা ভাবনা। দিন বদলেছে। সেই সঙ্গে বদলেছে মানুষের জীবন ব্যবস্থা।
বর্তমানে রাস্তাঘাট অনেক উন্নত হলেও যোগাযোগের মাধ্যম অপ্রতুল। তাই মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের মেয়েরা বিদ্যালয়ে যাচ্ছে বাইসাইকেল। এতে করে তারা সঠিক সময়ে বিদ্যালয়ে যেতে পারছে। লাগছে না বাড়তি খরচ। বিষয়টিকে শিক্ষা অগ্রযাত্রার মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করছেন সচেতন মহল।
তেতুঁলবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী আফসানা খাতুন। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব চার কিলোমিটার। বিদ্যালয়ে যেতে হতো ভ্যানযোগে কিংবা হেঁটে। ঠিকমতো ক্লাসে উপস্থিত হতে পারতো না সে। অভাবের সংসারে যাতায়াত ভাড়া যোগাড় করতে হতো অনেক কষ্ট করে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একটি বাইসাইকেল উপহার পাওয়ায় বিদ্যালয়ে যেতে আর সমস্যা হয় না তার। তার মতো অনেক ছাত্রী ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সাইকেল উপহার পেয়েছে।
একই কথা জানিয়েছে পলাশীপাড়া গ্রামের স্কুলছাত্রী জলি খাতুন, রাফসানা, মিম আক্তার, জুবাইদা ও সানজিদা। তারা আরও জানায়, আগে বাইসাইকেল চালানো কেউ পছন্দ করতো না। এখন প্রয়োজনের তাগিদে সাইকেল চালাতে হয়। এখন কেউ আর বাধা দেয় না।
অভিভাবক আল হেলাল বলেন, ‘মেয়েদের সাইকেল চালানোটা অনেকে কুনজরে দেখতো। এখন আর কেউ কিছু মনে করে না। সাইকেলে বিদ্যালয়ে যাওয়ায় বাড়তি খরচ বেঁচে গেছে। আর মেয়েরাও সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারবে। অনেক অভিভাবক মেয়েদেরকে বিদ্যালয়ে পাঠাতে না পেরে বাল্য বিয়ে দিতো। এখন আর কেউ বিয়ে নিয়েও ভাবে না।’

তেতুঁলবাড়িয়া ইসলামীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনিসুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, আগে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো ছিল না। শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসতে নানা ভোগান্তি পোহাতে হতো। যাতায়াত ব্যয় সংকুলান করতে না পারায় দরিদ্র পরিবারের ছেলে মেয়েরা বিদ্যালয়ে আসতে পারতো না। অনেকেই ছিল অনিয়মিত। এখন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটেছে। ফলে অনেক পরিবার মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন বাইসাইকেল দিয়ে। এরই মধ্যে জনপ্রতিনিধিরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মেধাবী ও অসচ্ছল পরিবারের মেয়েদের সাইকেল উপহার দিয়েছেন। ফলে তারাও এখন নিয়মিত ও স্বাচ্ছন্দ্যে বিদ্যালয়ে আসতে পারছে। এতে উপস্থিতি হার বেড়েছে।’
বাগোয়ান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আয়ূব হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, নারী শিক্ষার অগ্রযাত্রায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় পরিষদের পক্ষ থেকে সব ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে সীমান্ত এলাকার কয়েকশ ছাত্রীকে বাইসাইকেল উপহার দেওয়া হয়েছে।
গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মীর হাবিবুল বাশার জাগো নিউজকে বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিদ্যালয় প্রধান ও শিক্ষার্থীদের পরিবার থেকে নেওয়া উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। ওই বিদ্যালয়ে অনেক ছেলে মেয়ে লেখাপড়া করে। বিশেষ করে ছাত্রীদের সংখ্যা অনেক বেশি।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহফুজুল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, সীমান্ত এলাকায় দিন দিন ছাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে, এটা ভালো সংবাদ।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মুনসুর আলম জাগো নিউজকে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রীকে সাইকেল দেওয়া হয়েছে। আগামীতে এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
আসিফ ইকবাল/এসজে/এএসএম